❐ কমবেশি ১৫টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :
1. স্বামী বিবেকানন্দ 'কল্যাণীয়া মিস্ নোব্ল' বলে যাকে সম্বোধন করেছেন তাঁর সম্পূর্ণ নাম কী?
উত্তরঃ স্বামী বিবেকানন্দ 'কল্যাণীয়া মিস নোব্ব্ল' বলে যাঁকে সম্বোধন করেছেন তাঁর সম্পূর্ণ নাম মিস মার্গারেট এলিজাবেথ নোব্ল।
2. পাঠ্য 'চিঠিটি কত খ্রিস্টাব্দে এবং কোথা থেকে স্বামী বিবেকানন্দ লিখেছিলেন?
উত্তরঃ পাঠ্য 'চিঠি'টি ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই আলমোড়া থেকে স্বামী বিবেকানন্দ লিখেছিলেন।
3. আলমোড়া জায়গাটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তরঃ উত্তরাখন্ডের বিখ্যাত শৈলশহর হল আলমোড়া।
4. 'একখানি চিঠি কাল পেয়েছি'-কার চিঠি স্বামী বিবেকানন্দ পেয়েছেন এবং তার পরিচয় কী?
উত্তরঃ স্বামীজি তাঁর ইংরেজ শিষ্য মি. ই. টি. স্টার্ডির চিঠি পাবার কথা বলেছেন। এই স্টার্ডিই ইংল্যান্ডে বেদান্ত প্রচারে স্বামীজিকে সাহায্য করেছিলেন।
5. জানতে পারলেন? 'তাতে জানলাম যে-তাতে স্বামীজি কী?
উত্তরঃ স্বামীজি জানতে পেরেছিলেন যে, মিস নোব্ল তথা নিবেদিতা ভারতে আসতে এবং সবকিছু স্বচক্ষে দেখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
6. 'কাল তার উত্তর দিয়েছি'-কোন্ চিঠির কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ প্রদত্ত উদ্ধৃতাংশে মি. স্টার্ডির লেখা একটি পত্রের প্রত্যুত্তরের কথা স্বামীজি এখানে মিস নোব্ল তথা নিবেদিতাকে জানিয়েছেন।
7. মিস মুলার কীভাবে স্বামীজিকে সাহায্য করেছিলেন?
উত্তরঃ মিস মুলার বেলুড় মঠ স্থাপনের কাজে স্বামীজিকে অর্থ সাহায্য করেছিলেন।
8. 'এখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছে যে'-দৃঢ় বিশ্বাসটি কী?
উত্তর/ উত্তরঃ স্বামী বিবেকানন্দের দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছে যে, ভারতের কাজে বিশেষত নারীসমাজের জন্য মিস নোব্ল-এর একটি বিরাট ভবিষ্যৎ রয়েছে।
9. 'একজন প্রকৃত সিংহীর প্রয়োজন'-'প্রকৃত সিংহী' কাকে বলা হয়েছে এবং কেন?
উত্তরঃ স্বামীজির কথায় এক্ষেত্রে প্রকৃত সিংহী হলেন মিস নোব্ল। তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা, সাহস এবং অনমনীয় ব্যক্তিত্বের জন্যই তাঁকে প্রকৃত সিংহী বলা হয়েছে।
10. 'সর্বোপরি তোমার ধমনিতে প্রবাহিত কেল্টিক রক্তের জন্য'-স্বামী বিবেকানন্দের এরূপ বলার কারণ কী?
উত্তরঃ মিস নোক্স ভারতের যে প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে চেয়েছিলেন তার জন্য দরকার অনমনীয় দৃঢ়তা, ধৈর্য ও সাহস। স্বামীজির কথায় ইউরোপের সমৃদ্ধ ও প্রাচীন সভ্যতার অধিবাসী কেল্টিকদের পক্ষেই তা সম্ভব, তাই কেল্টিক বংশীয় নিবেদিতাই এর যোগ্য।
11. 'তুমি ঠিক সেইরূপ নারী, যাকে আজ প্রয়োজন'-কাকে উদ্দেশ্য করে স্বামী বিবেকানন্দ একথা বলেছেন?
উত্তরঃ উদ্ধৃত উক্তিটি স্বামী বিবেকানন্দ মিস নোব্ল তথা নিবেদিতাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন।
12. 'তুমি ঠিক সেইরূপ নারী, যাকে আজ প্রয়োজন'-সেইরূপ বলতে কোরূপ বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ কুসংস্কার ও অজ্ঞানতায় ভরা ভারতীয় সামাজিক ক্ষেত্রে কাজ করতে গেলে যে ঐকান্তিকতা, শিক্ষা, পবিত্রতা, অসীম ভালোবাসার ও চারিত্রিক দৃঢ়তার প্রয়োজন কেল্টিক রক্তের অধিকারিণী নিবেদিতার তা ছিল।
13. 'যাকে আজ প্রয়োজন'-কাকে প্রয়োজন বলে মনে করেছেন বক্তা?
উত্তরঃ প্রদত্ত উদ্ধৃতাংশে স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের নারীসমাজের দুর্গতি মোচনের জন্য মিস নোবল বা ভগিনী নিবেদিতাকে প্রয়োজন বলে মনে করেছেন।
14. 'কিন্তু বিঘ্নও আছে বহু'-কোন্ বিঘ্নের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ নিবেদিতার ভারতে এসে সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতির পথে প্রধান-অন্তরায় কুসংস্কার, জাতিভেদ এবং অস্পৃশ্যতার র্য মতো উৎকট ধারণাগুলি, যেগুলিকে স্বামীজি বাধা-বিঘ্নের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
15. 'তারা শ্বেতাঙ্গদের এড়িয়ে চলে'-এখানে 'তারা' বলতে কাদের কথা বোঝানো হয়েছে? কেন তারা এডিয়ে চলে?
উত্তরঃ তারা বলতে নিরক্ষর, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভারতীয়দের কথা বলা হয়েছে। তারা শ্বেতাঙ্গদের এড়িয়ে চলে অত্যাচারী ও ম্লেচ্ছতার দোহাই দিয়ে অর্থাৎ ভয় ও ঘৃণাবোধ থেকে।
16. 'প্রত্যেকটি গতিবিধি সন্দেহের চক্ষে দেখবে।'-কার গতিবিধির কথা বলা হয়েছে? কারা তা সন্দেহের চক্ষে দেখবে?
উত্তরঃ এক্ষেত্রে স্বামীজির প্রিয় শিষ্যা নিবেদিতার গতিবিধির কথা বলা হয়েছে। ভারতে এসে একজন শ্বেতাঙ্গ হয়ে ভারতীয়দের সামাজিক দিক দিয়ে উন্নত করার প্রচেষ্টাকে এদেশের শ্বেতাঙ্গরা সন্দেহের চোখে দেখত।
17. 'তাছাড়া, জলবায়ু অত্যন্ত গ্রীষ্মপ্রধান।'-কোথাকার জলবায়ুর কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ ভারতে এসে নিবেদিতার কাজ করার পথে অন্যতম অন্তরায় এদেশের গ্রীষ্মপ্রধান জলবায়ু। ইউরোপ, আমেরিকার আবহাওয়ার সঙ্গে ভারতের আবহাওয়া তুলনা প্রসঙ্গে একথা বলা হয়েছে।
18. 'দক্ষিণাঞ্চলে তো সর্বদাই আগুনের হলকা চলছে'-দক্ষিণাঞ্চল বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ দক্ষিণাঞ্চল বলতে স্বামীজি ভারতবর্ষের দক্ষিণের রাজ্যগুলির কথা বুঝিয়েছেন।
19. 'সেটুকু দিয়ে আমি অবশ্যই তোমায় সাহায্য করব।'- কে, কাকে কীভাবে সাহায্য করার কথা বলেছেন?
উত্তরঃ স্বামীজি প্রিয় শিষ্য নিবেদিতাকে এদেশে এসে এদেশের মানুষদের জন্য কাজ করার সময় যে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হবে তা থেকে উত্তরণের জন্য সর্বতোভাবে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।
20. 'আমাকে আমরণ তোমার পাশেই পাবে'-কে, কাকে আমরণ পাশে পাবে?
উত্তরঃ স্বামীজি আশ্বস্ততার সুরে ভারতে আগত নিবেদিতাকে একথা বলেছেন, নোব্ল যদি এদেশে কাজ করতে গিয়ে বিফল হন কিংবা তার বিরক্তি আসে তবে শেষ পর্যন্ত স্বামীজি তার পাশে থাকবেন।
21. 'মরদ কি বাত হাতি কা দাঁত'-কথাটির অর্থ কী?
উত্তরঃ উদ্ধৃত প্রচলিত হিন্দি প্রবাদটির সাহায্যে স্বামীজি অমানুষের কথায় গভীরতা ও নিশ্চয়তা বোঝাতে চেয়েছেন। প্রিয় শিষ্যা নিবেদিতার উদ্দেশ্যে তিনি কথা বলেছেন।
22. 'এই আমার প্রতিজ্ঞা'-এখানে কোন্ প্রতিজ্ঞার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ স্বামীজির প্রিয় শিষ্যা নিবেদিতা ভারতে এসে এখানকার সমাজের উন্নতিসাধনে ব্রতী হয়েছেন। তাঁর সে কাজে ব্যর্থতা এলেও স্বামীজি আমরণ তাঁর পাশে থাকায় প্রতিজ্ঞা করেছেন।
23. 'তোমাকে একটু সাবধান করা দরকার' -কে কাকে কোন্ প্রসঙ্গে সাবধান করার কথা বলেছেন?
উত্তরঃ প্রিয় শিষ্যাকে ভারতে সামাজিক ক্ষেত্রের উন্নতি সাধনের কাজ করার সময় নিজের পায়ে দাঁড়াতে এবং অপরের আশ্রয়ের ওপর নির্ভর না করার বিষয়ে সাবধান করেছেন।
24. 'এই মনোভাব তাঁর অজ্ঞাতসারেই বারবার মাথা তুলছে'-কার কোন্ মনোভাবের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ এক্ষেত্রে জন্ম থেকেই নেত্রী সুলভ মানসিকতার অধিকারী মিস মুলারের টাকার দ্বারা দুনিয়ার সব কিছুকে ওলটপালট করে দেওয়া যায়- এই মানসিকতার কথা বলা হয়েছে।
25. 'তাঁর সঙ্গে বনিয়ে চলা অসম্ভব'-কার সঙ্গে কেন বনিয়ে চলা অসম্ভব?
উত্তরঃ স্বামীজির মতে তাঁর প্রিয় শিষ্যা নিবেদিতার পক্ষে মিস মুলারের আজন্ম নেত্রীসুলভ মানসিকতা এবং টাকার দ্বারা পৃথিবীর সমস্ত কিছু ওলটপালট করে দেওয়া যায় এই অহং-সর্বস্বতার সাথে বনিয়ে চলা অসম্ভব।
26. 'তাঁর বর্তমান সংকল্প এই যে,'-কার কোন্ সংকল্পের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ মিস মুলার কলকাতায় নিবেদিতা ও তাঁর বেশ কয়েকজন ইউরোপ আমেরিকার বন্ধুর জন্য একটি বাড়ি ভাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এক্ষেত্রে সেই সংকল্পের কথা বলেছেন।
27. 'মঠাধ্যক্ষাসুলভ সংকল্পটি দুটি কারণে কখনও সফল হবে না'- কারণ দুটি কী কী? এবং কার সংকল্প সফল হবে না?
উত্তরঃ কারণ দুটি হল-মিস মুলারের রুক্ষ মেজাজ এবং অদ্ভুত অস্থিরচিত্ততা। মিস মুলারের সংকল্প সফল হবে না।
28. 'যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, তার সবই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়'-কী উদ্দেশ্যে স্বামী বিবেকানন্দ একথা বলেছেন?
উত্তরঃ স্বামীজির ইচ্ছা নিবেদিতা ভারতীয় নারীজাতির সামগ্রিক উন্নতিসাধনে আত্মোৎসর্গ করুন। কিন্তু অন্য কারও পক্ষপুটে আশ্রয় নিয়ে এসব করা যায় না। এসবের জন্য নিজের পায়ে দাঁড়াতে হয়।
29. মিসেস সেভিয়ারকে স্বামী বিবেকানন্দ কোন্ অভিধায় ভূষিত করেছেন?
উত্তরঃ মিসেস সেভিয়ারকে 'নারীকুলের রত্নবিশেষ' অভিধায় ভূষিত করেছেন স্বামী বিবেকানন্দ।
30. মিসেস সেভিয়ার বহু বছর কোথায় ছিলেন?
উত্তরঃ মিসেস সেভিয়ার বহু বছর মায়াবতী এবং শ্যামলাতালে বাস করেছিলেন।
31. কারা এদেশীয়দের ঘৃণা করেন না?
উত্তরঃ সেভিয়ার দম্পতি এবং মি. স্টার্ডি এদেশীয়দের ঘৃণা করেন না।
32. 'আমাদের ওপর মুরুব্বিয়ানা করতে এদেশে আসেননি।'- কে, কাদের সম্পর্কে এমন কথা বলেছেন?
উত্তরঃ স্বামাজি নিবেদিতার উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতে সেভিয়ার দম্পতি সম্পর্কে একথা বলেছেন। তাঁর মতে শ্বেতাঙ্গ হয়েও এই দম্পতি ভারতীয়দের ঘৃণা করেনি এবং মানুষের ওপর মুরুব্বিয়ানা করেনি।
33. 'তুমি এলে তোমার সহকর্মীরূপে তাঁদের পেতে পারো-কে, কাদের সহকর্মীরূপে পেতে পারে।
উত্তরঃ স্বামীজির মতে নিবেদিতা ভারতে এলে ক্যাপ্টেন জে. এইচ. সেভিয়ার এবং তাঁর স্ত্রী মিসেস সেভিয়ারকে সহকর্মীরূপে পেতে পারেন।
34. 'আমেরিকার সংবাদে জানলাম যে-আমেরিকার সংবাদে স্বামী বিবেকানন্দ কী জানতে পেরেছেন?
উত্তরঃ আমেরিকার সংবাদে স্বামী বিবেকানন্দ জানতে পেরেছেন যে, ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের শরৎকালেই তাঁর দুজন বন্ধু-মিস ম্যাকলাউড ও বোস্টনের মিসেস বুল ভারত পরিভ্রমণে আসছেন।
35. মিস ম্যাকলাউডের সম্পূর্ণ নাম কী ছিল?
উত্তরঃ মিস ম্যাকলাউডের সম্পূর্ণ নাম ছিল মিস জোসেফাইন ম্যাকলাউড।
36. মিস ম্যাকলাউড কবে মারা যান?
উত্তরঃ ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার হলিউড শহরে মিস ম্যাকলাউডের মৃত্যু হয়।
37. মিস ম্যাকলাউডকে স্বামীজি কী নামে ডাকতেন?
উত্তরঃ মিস ম্যাকলাউডকে স্বামীজি 'জো' নামে ডাকতেন।
38. মিস ম্যাকলাউডকে নিবেদিতা কোথায় দেখেছিলেন?
উত্তরঃ বিবেকানন্দের চিঠি পড়ে জানা যায়, মিস ম্যাকলাউডকে নিবেদিতা লন্ডনে দেখেছিলেন।
39. 'সেই পারি-ফ্যাশনের পোশাক-পরিহিতা মহিলাটি'- মহিলাটি কে?
উত্তরঃ আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটিতে পারি-ফ্যাশনের পোশাক-পরিহিতা যে মহিলার কথা স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, তিনি হলেন স্বামীজির বন্ধু মিস ম্যাকলাউড।
40. মিস ম্যাকলাউডের পরনের পোশাকটি কেমন ছিল?
উত্তরঃ পত্রলেখক বিবেকানন্দের বিবরণ অনুযায়ী মিস ম্যাকলাউডের পরনে পারি-ফ্যাশনের পোশাক ছিল।
41. মিসেস বুলের সম্পূর্ণ নাম কী ছিল?
উত্তরঃ মিসেস বুলের সম্পূর্ণ নাম ছিল সারা বুল।
42. মিসেস বুলের বয়স কত ছিল?
উত্তরঃ বিবেকানন্দের চিঠি পড়ে জানা যায়, মিসেস সারা বুলের বয়স ছিল পঞ্চাশ।
43. মিসেস বুলের কোথায় বাসস্থান ছিল?
উত্তরঃ মিসেস বুলের বাসস্থান ছিল নরওয়ে। তিনি নরওয়েবাসী বিখ্যাত বেহালাবাদক মি. ওলি বুলের স্ত্রী।
44. মিসেস বুল স্বামীজিকে কীভাবে সাহায্য করেছিলেন?
উত্তরঃ মিসেস বুল স্বামীজির শিষ্যা ছিলেন। তিনি বেলুড় মঠ স্থাপনের কাজে স্বামীজিকে অনেক অর্থসাহায্য করেছিলেন। এ ছাড়া অন্যান্যভাবেও তিনি এদেশে ও পাশ্চাত্যে স্বামীজিকে সাহায্য করেছিলেন।
45. মিসেস বুলকে স্বামীজি কী নামে সম্বোধন করতেন?
উত্তরঃ মিসেস বুলকে স্বামীজি 'মা' বা 'ধীরামাতা' বলে সম্বোধন করতেন।
46. 'তোমার পথের একঘেয়েমি দূর হতে পারে'- কার এবং কীভাবে পথের একঘেয়েমি দূর হতে পারে?
উত্তরঃ ভারতবর্ষে আসার সময় মিস নোলের পথের একঘেয়েমি দূর হতে পারে, যদি তিনি স্বামীজির দুজন বন্ধু-মিস ম্যাকলাউড ও বোস্টনের মিসেস বুলের সঙ্গে আসেন। তাঁকে বিবেকানন্দ এ পরামর্শ দিয়েছেন।
47. 'চিঠিটি বড়ো শুষ্ক এবং প্রাণহীন'-কোন্ চিঠির কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশে যে চিঠির কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটি হল বিবেকানন্দকে লেখা মি. স্টার্ডির চিঠি। যার বিষয়বস্তু ছিল লন্ডনের বেদান্ত প্রচারের কাজ পণ্ড হওয়া।
48. মি. স্টার্ডি কেন হতাশ হয়েছিলেন?
উত্তরঃ বিবেকানন্দের চিঠি পড়ে আমরা জানতে পারি, লন্ডনের কাজ পণ্ড হয়ে যাওয়ায় মি. স্টার্ডি হতাশ হয়েছিলেন।
49. নিবেদিতাকে লেখা বিবেকানন্দের চিঠিটির মূল প্রেক্ষাপটটি কী?
উত্তরঃ প্রিয় শিষ্যা নিবেদিতাকে লেখা স্বামীজির চিঠিটির প্রেক্ষাপট হল- নিবেদিতার ভারতে এসে এখানকার মানুষের সেবা করার ক্ষেত্রে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন সেকথা।
50. মি. স্টার্ডি কীভাবে স্বামীজিকে সাহায্য করেছিলেন?
উত্তরঃ পাঠ্য চিঠি পড়ে জানা যায়, মি. ই. টি. স্টার্ডি ইংল্যান্ডে বেদান্ত প্রচারের কাজে স্বামীজিকে সাহায্য করেছিলেন।
51. মিস মুলারের পুরো নামটি কী?
উত্তরঃ মিস মুলারের পুরো নামটি হল মিস হেনরিয়েটা মুলার।
52. মিস নোব্ল-এর লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তরঃ মিস্ নোব্ল-এর লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল-'The Master as I saw him', 'Web of Indian Life' প্রভৃতি।
53. চিঠির শেষে বিবেকানন্দ কী কথা লিখেছিলেন?
উত্তরঃ চিঠির একদম শেষে বিবেকানন্দ লিখেছিলেন-'সদা ভগবৎ-পদাশ্রিত, বিবেকানন্দ'।
54. মিস নোক্স কবে মারা যান?
উত্তরঃ মিস নোক্স ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে দার্জিলিং-এ দেহত্যাগ করেন।
55. 'এ পত্রখানিও আবশ্যক হয়ে পড়েছে'- কেন স্বামী বিবেকানন্দ একথা বলেছেন?
উত্তরঃ স্বামাজী মিস মুলারের কাছে নিবেদিতার ভারতে এসে কাজ করার কথা শুনে তাঁর প্রিয় শিষ্যাকে ভারতের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করার কর্তব্য বোধ থেকে একথা বলেছেন।
❐ কমবেশি ৬০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :
1. 'স্টার্ডির একখানি চিঠি কাল পেয়েছি'-স্টার্ডি কে? তাঁর চিঠি থেকে লেখক কী জানতে পেরেছিলেন? ২+১=৩
উত্তরঃ বিবেকানন্দ তাঁর চিঠিতে স্টার্ডির কথা বলেছেন। তাঁর পুরো নাম হল মি. ই. টি. স্টার্ডি। তিনি ছিলেন স্বামীজির ইংরেজ ভক্ত এবং তিনি ইংল্যান্ডে বেদান্ত প্রচারে সাহায্য করেছিলেন। ভারতে থাকাকালীন তিনি আলমোড়ায় তপস্যাও করেছিলেন। স্টার্ডির চিঠি থেকে বিবেকানন্দ জেনেছিলেন তাঁর অন্যতম শিষ্যা মিস নোব্ল ভারতে এসে সবকিছু দেখার দৃঢ় সংকল্প করেছেন।
2. তাতে এ পত্রখানিতে আবশ্যক হয়ে পড়েছে'- কোন্ পত্রের কথা বলা হয়েছে? তার আবশ্যকতার কারণ কী? ১+২=৩
উত্তরঃ এক্ষেত্রে স্বামীজি ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই আলমোড়া থেকে কল্যাণীয়া মিস নোব্ব্ল অর্থাৎ ভগিনী নিবেদিতাকে যে পত্র লিখেছিলেন তার কথা বলা হয়েছে।
স্বামীজির অন্যতম প্রিয় শিষ্যা ছিলেন মিস নোব্ল। স্বামীজি তাঁর ইংরেজ ভক্তের কাছে নোক্সের ভারতে আসার কথা শোনার পর যখন মিসমুলারের কাছে তার কর্মপ্রণালী সম্পর্কে শুনেছিলেন তখনই তিনি এই চিঠি লেখার আবশ্যকতা বুঝেছিলেন। কারণটা ছিল মিসনোবেলকে ওইরকম একটা কাজের ভালো-মন্দ দিকটা সম্পর্কে জানানো।
3. 'তোমাকে খোলাখুলি বলছি', - বস্তা কাকে কী খোলাখুলি বলতে চেয়েছেন? ৩
উত্তরঃ এক্ষেত্রে বস্তা হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি তাঁর প্রিয় শিষ্যা নিবেদিতার ভারতীয় নারীজাতির কল্যাণার্থে কাজ করার কথা শোনেন। আর সে প্রসঙ্গে স্বামীজি ভারতে তাঁর কাজের ভবিষ্যৎ, ভারতের নারীসমাজে তাঁর প্রয়োজনীয়তা, তাঁর শিক্ষা, ঐকান্তিকতা, পবিত্রতা, অসীম ভালোবাসা ও দৃঢ়তা এবং ধমনিতে কেল্টিক রক্ত প্রবাহিত হবার জন্য তাঁর উপযুক্ততা সর্বজনীন-একথা গুলিই বলতে চেয়েছেন।
4. 'তুমি ঠিক সেইরূপ নারী, যাকে আজ প্রয়োজন'- কোন্ নারীর কথা বলা হয়েছে? তাঁকে আজ প্রয়োজন কেন? ১+২=৩
উত্তরঃ বিবেকানন্দের 'চিঠি'র উদ্ধৃতাংশে যে নারীর কথা বলা ভহয়েছে তিনি হলেন তাঁর অন্যতম শিষ্যা মিস নোব্ল।
স্বাধীনতার বহু পূর্বে স্বামীজি ভারতীয় নারীসমাজের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় তারা ছিল অজ্ঞ, সংস্কারাচ্ছন্ন। ছিল না শিক্ষা, তাই স্বাধীন মতপ্রকাশ ছিল দূর অস্ত। তাই তাঁর জহুরির চোখ শিক্ষা, ঐকান্তিকতা, পবিত্রতা, অসীম ভালোবাসা, দৃঢ়তা ও ধমনিতে কেল্টিক রক্ত প্রবাহিত মিস নোব্লকে চিনে নিতে ভুল করেননি, যে এই নারী জাতির উন্নতিসাধন করতে পারবেন।
5. 'তুমি ঠিক সেইরূপ নারী. কার সম্পর্কে এমন কথা বলা হয়েছে? কীরূপ নারী? ১ + ২ = ৩
উত্তরঃ পাঠ্য 'চিঠি' তে স্বামীজির অন্যতম শিষ্যা মিস নোব্ল তথা ভগিনী নিবেদিতা সম্পর্কে এমন কথা বলা হয়েছে।
স্বামীজি ভারতীয় নারীজাতির উন্নতির কথা ভাবতেন। তাই মিস নোলের কর্ম পরিকল্পনা শুনে তিনি এদেশে তাঁর মতো নারীর প্রয়োজন অনুভব করেন। তিনি ছিলেন শিক্ষিতা, দৃঢ় মনের অধিকারিণী, সর্বোপরি পবিত্রতা, আন্তরিকতা ও ভালোবাসায় পূর্ণ। তাঁর ধমনিতে প্রবাহিত কেল্টিক রক্ত তাঁকে কর্মে অনুপ্রাণিত করত। স্বামীজির কথায় তিনি একজন প্রকৃত সিংহী, যাকে ভারতীয় নারী সমাজের উন্নতির জন্য একান্ত প্রয়োজন।
6. 'কিন্তু বিঘ্নও আছে বহু'- বক্তা কোন্প্র সঙ্গে বলেছেন?
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটি স্বামীজির 'চিঠি'র অংশ বিশেষ। এক্ষেত্রে বক্তা হলেন স্বামীজি স্বয়ং। মিস মুলারের কাছে স্বামীজি যখন শোনেন মিস নোব্ল এদেশে এসে এদেশের নারীজাতির কল্যাণ করতে ইচ্ছুক তাতে তিনি আনন্দিতই হয়েছিলেন এবং একজন প্রকৃত মানুষের ন্যায় এদেশে তাঁর কাজ করতে গেলে কী কী বাধাকে অতিক্রম করতে হবে সে কথাও তাকে জানান। এক্ষেত্রে স্বামীজির সততা ও মহত্ততার পরিচয় পাওয়া যায়।
7. কিন্তু বিঘ্নও আছে বহু’— এদেশে নারী কল্যাণের জন্য কাজ করতে গিয়ে মিস নোব্লকে কী কী বিঘ্নের সম্মুখীন হতে হবে বলে স্বামীজির ধারণা?
উত্তরঃ এদেশে নারীকল্যাণের জন্য নোলের মতো সিংহীর প্রয়োজন হলেও তার কাজের পথে কী কী বাধা আসতে পারে তা স্বামী সরাসরি নোব্লকে জানিয়েছেন। প্রথমত, এদেশের দুঃখ, কুসংস্কার ও দাসসুলভ মনোভাব। দ্বিতীয়ত, জাতি সম্পর্কে বিকট ধারণা, ভয়ে বা ঘৃণায় শ্বেতাঙ্গদের এড়িয়ে চলা। তৃতীয়ত, জলবায়ু, এদেশের শীত ওখানকার গ্রীষ্মের মতো। চতুর্থত, নাগরিক সুখস্বাচ্ছন্দ্য শহরের বাইরে অমিল।
8. 'কর্মে ঝাঁপ দেবার পূর্বে বিশেষভাবে চিন্তা করো- বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে এবং কেন একথা বলেছেন? ১+২ = ৩
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটির বক্তা চিঠির প্রেরক স্বামীজি। স্বামীজির অন্যতম শিষ্যা মিস নোব্ল যখন এদেশের নারীজাতির কল্যাণার্থে কাজ করার জন্য মনস্থির করেন তখন স্বামীজি তাঁর প্রিয় শিষ্যার উদ্দেশ্যে কথাগুলি বলেছেন।
তাঁর এমন কথা বলার কারণ প্রিয় শিষ্যার কাছে প্রকৃত বাস্তবটা তুলে ধরা। তিনি ভারতীয় সমাজকে ভালো করেই চিনতেন। একদিকে কুসংস্কার, দারিদ্র্য, জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতার মতো সমস্যায় ভারতীয় সমাজ আচ্ছন্ন। তার ওপর প্রতিকূল জলবায়ু ও নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যর অভাব এসব এড়িয়ে নোব্ল কতটা কাজ করতে পারবে সেই প্রশ্নই স্বামীজি রেখেছেন।
9. 'এই আমার প্রতিজ্ঞা'— বক্তা কে? বক্তার প্রতিজ্ঞাটি কী? ১ + ২ = ৩
উত্তরঃ এক্ষেত্রে বক্তা হলেন আমাদের পাঠ্য 'চিঠি'র প্রেরক স্বয়ং স্বামীজি। স্বামীজি প্রিয় শিষ্যার ভারতীয় নারী সমাজের উন্নতির জন্য কাজ করতে আসার আগে তিনি তাঁর কর্মের প্রশংসা করেন এবং সে পথের বিঘ্নের কথাও তুলে ধরেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও যদি কর্মে প্রবৃত্ত হয় এবং পরে যদি বিরক্তি আসে ও সাফল্য না আসে তবুও তিনি শিষ্যাকে তাঁর সাধ্যমতো সাহায্য করবেন। কেননা তাঁর কথায় 'মরদ্ কি বাত হাতি কা দাঁত' একবার বেরোলে আর ভিতরে যায় না এবং কিছুটা কৌতুকের সুরে খাঁটি লোকের কথায় নড়চড় থাকে না বলে মত ব্যক্ত করেছেন।
10. 'এই আমার প্রতিজ্ঞা'- বক্তা কে? বক্তার প্রতিজ্ঞাটি কী? ১+২=৩
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হলেন চিঠির প্রেরক স্বামীজি স্বয়ং। স্বামীজি তাঁর শিষ্যাকে ভারতে কাজ করার ক্ষেত্রে যে যে বাধাগুলি আসতে পারে সেগুলি তার সামনে একদিকে উন্মোচিত করেছেন এবং সর্বদা পাশে থাকার অঙ্গীকারও করেছেন। পাশাপাশি তিনি এও বলতে চেয়েছেন এসব করার জন্য নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে অর্থাৎ আত্মনির্ভর হতে হবে। বিশেষ করে মিস মুলারের মতো মহিলাদের পক্ষপুটের আশ্রয় এড়িয়ে চলতে হবে। বক্তা একাধিকবার সাবধান করার প্রসঙ্গে আবার শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
❐ কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :
1. 'মনে হচ্ছে, সরাসরি তোমাকে লেখা ভালো'-সরাসরি লেখা প্রয়োজন কেন? তিনি সরাসরি কী কী জানিয়েছিলেন? অথবা, 'তোমাকে খোলাখুলি বলছি'-'খোলাখুলি' বলার প্রয়োজনীয়তা কোথায়? বক্তা 'খোলাখুলি' কী কী জানিয়েছেন? ১+৪=৫
উত্তরঃ স্বামীজি স্টার্ডির চিঠি থেকে জানতে পারেন তাঁর প্রিয় শিষ্যা নিবেদিতা ভারতে এসে সবকিছু চাক্ষুষ দেখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি স্টার্ডিকে উত্তর দিলেও মিস মুলারের কাছে তার কর্মপ্রণালী সম্পর্কে জেনে তাকে সরাসরি চিঠি লেখা আবশ্যক মনে করেন। এই আবশ্যকতা শুধুমাত্র গুরুর কর্তব্যবোধ নয়। এই আবশ্যকতা দূরদেশ থেকে এদেশের নারী সমাজের উন্নতিবিধান করতে আসা এক মহান মানবীকে তাঁর কর্মক্ষেত্রে কী কী সমস্যা বাধা সৃষ্টি করতে পারে সেই অপ্রিয় বাস্তব সম্পর্কে অবহিত করা ও সঠিক পথ দেখানোর চেষ্টা।
স্বামীজি অনুভব করেছিলেন ভারতের বিশেষত এদেশের নারী সমাজের উন্নতির জন্য মিস নোব্লকে একান্ত প্রয়োজন। কারণ নিবেদিতার শিক্ষা, ঐকান্তিকতা, পবিত্রতা, অসীম ভালোবাসা, দৃঢ়তা-সর্বোপরি তাঁর শরীরে প্রবাহিত কেল্টিক রক্ত তাকে সিংহীর দৃঢ়তা দান করেছে এবং এই তেজই মেয়েদের দুর্দশা মোচনে সহায়ক হবে। কিন্তু এই কাজে প্রতিকূলতা আছে। তাই বাস্তব কিছু প্রতিকূলতাকে তিনি নিবেদিতার সামনে তুলে ধরেছেন। যেমন এদেশের অজ্ঞতা, কুসংস্কার, অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি তার কাজে বাধা হতে পারে। একইভাবে তাঁর স্বজাতি শ্বেতাঙ্গরা তাকে সন্দেহ করতে পারে। এই দুই সমস্যার দূরত্ব ভাঙা খুবই কঠিন। এ ছাড়া এদেশের গ্রীষ্মপ্রধান জলবায়ু ও নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের অভাবও তাকে সমস্যায় ফেলতে পারে। তবে এসব সমস্যা নিয়েও যদি নিবেদিতা পথ চলা শুরু করেন তবে স্বামীজি কোনো অবস্থাতেই তার ওপর থেকে সাহায্যের হাত তুলে নেবেন না।
2. পুরুষের চেয়ে নারীর-একজন প্রকৃত সিংহীর প্রয়োজন'-প্রকৃত সিংহীর প্রয়োজন কেন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বুঝিয়ে দাও? সেই প্রকৃত সিংহীর পরিচয় লেখো। অথবা, 'তুমি ঠিক সেইরূপ নারী, যাকে আজ প্রয়োজন'-'সেইরূপ নারী'র আজ প্রয়োজন কেন? 'সেইরূপ নারীটি সম্পর্কে তোমার মনোভাব ব্যক্ত করো। ১+৪ = ৫
উত্তরঃ স্বামীজি তাঁর অন্যতম প্রিয় ইংরেজ শিষ্য স্টার্ডির একটি পত্র থেকে জানতে পারেন যে, মিস নোব্ল ভারতে এসে সবকিছু চাক্ষুষ দেখতে বদ্ধপরিকর এবং অন্য শুভাকাঙ্ক্ষী মিস মুলারের কাছে জানতে পারেন ভারতে এসে মিস নোব্ল কী করতে চান। আর সেই জন্য স্বামীজি শিষ্যা নিবেদিতাকে সরাসরি চিঠি লেখার তাগিদ অনুভব করেন। নোবেলের ভারতীয় নারী কল্যাণের জন্য কাজ করার কথা শুনে তিনি যারপর নাই খুশি হন এবং তার সঙ্গে সঙ্গে সে পথের প্রতিবন্ধকতার কথাও শিষ্যাকে জানিয়ে দেন। স্বামীজি বুঝেছিলেন ভারতবর্ষের মানুষ বিশেষ করে মহিলারা বহু বছরের সঞ্চিত কুসংস্কার, জীর্ণ প্রথা ও নানান বিধিনিষেধের বশবর্তী হয়ে নিজেদের চারপাশে এক দুর্ভেদ্য প্রাচীর গড়ে তুলেছে। সেই প্রাচীর ভেদ করে তাদের অন্ধকার থেকে আলোয় আনতে পারে একমাত্র নোলের মতো সিংহী। নোলের শিক্ষা, ঐকান্তিকতা, পবিত্রতা, অসীম ভালোবাসা, দৃঢ়তা সর্বোপরি ধমনিতে প্রবাহিত কেল্টিক রক্তের জন্যই সে এই প্রকার নারী যাকে ভারতের আজ প্রয়োজন।
মিস মার্গারেট ই. নোবেল তথা নিবেদিতা স্বামীজির আদর্শ ও অনুপ্রেরণাতে এদেশে আসেন এবং ভারতের বিশেষ করে এখানকার নারীকল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। স্বামীজির এই প্রিয় শিষ্যা ভারতীয় আদর্শে স্ত্রীশিক্ষা প্রসারের জন্য কলকাতায় 'নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়' স্থাপন করেন। 'The Master as I saw him' ও 'Web of Indian Life' বই দুটির রচয়িতা এই মহীয়সী ১৯১১-তে পরলোক গমন করেন।
3. 'এদেশে এলে তুমি নিজেকে অর্ধ-উলঙ্গ অসংখ্য নর-নারীতে পরিবেষ্টিত দেখতে পাবে।-কোন্ প্রসঙ্গে কার এই উক্তি? এই মন্তব্যে তৎকালীন ভারতের যে ছবি ফুটে উঠেছে লেখো। অথবা, 'বিঘ্নও আছে বহু'-কোন্ উদ্দেশ্যে কে এই কথা বলেছেন? বস্তা কোন্ কোন্ বিঘ্নর আশঙ্কা করেছিলেন? ২+৩=৫
উত্তরঃ স্টার্ডির চিঠি থেকে স্বামীজি নোলের অভিপ্রায় এবং মুলারের চিঠি থেকে তার কর্মপ্রণালীর কথা শুনে তিনি নোব্লকে সরাসরি চিঠি লেখেন। স্বামীজি জানতেন নিবেদিতা তাঁর শিক্ষা, ঐকান্তিকতা, পবিত্রতা, অসীম ভালোবাসা ও দৃঢ়তার সাহায্যে এদেশের মানবসেবা বিশেষ করে নারীশিক্ষার কাজে আত্মোৎসর্গ করতে চান। কিন্তু ভারতের আর্ত সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে অনভিজ্ঞা নিবেদিতার পথ যে নিষ্কণ্টক নয় একথা স্বামীজি বুঝেছিলেন। তাই প্রিয় শিষ্যার ব্যক্তিত্বের ও কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবশত ভারতে কাজ করার প্রাক্কাল্যে ভারতের নগ্ন সমাজের বাস্তবতার আলোচনা প্রসঙ্গে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন।
স্বামীজির ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতে এসে নিবেদিতা এখানকার মানুষের বিশেষ করে মহিলাদের মুক্তির কর্মযজ্ঞে নিজের জীবন উজাড় করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্বামীজি জানতেন ভারতবর্ষে পরাধীনতা, কুসংস্কার, নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য, অস্পৃশ্যতা ইত্যাদির কারণে মনুষ্যত্বের অপমৃত্যু ঘটেছে এবং ভারতবর্ষ পরিণত হয়েছে অচলায়তনে। তাই সেই অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে একজন বিদেশিনীর পক্ষে এদেশের মানবমুক্তি ঘটানো বেশ কষ্টকর। সীমাহীন অভাবে তাদের আধপেটা খেয়ে ও অর্ধনগ্ন অবস্থায় বেঁচে থাকতে হয়। শ্বেতাঙ্গদের ক্রমাগত বর্বর অত্যাচারে তাদের প্রতি বিদ্বেষ-ঘৃণা জন্মায় এবং একইভাবে শ্বেতাঙ্গরাও এই হতদরিদ্রদের ঘৃণা করেন। তাই তারা উভয়েই উভয়কে ঘৃণার চোখে দেখে। তা ছাড়া ইউরোপীয়দের পক্ষে এদেশের তীব্র গরম আবহাওয়া ও নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের অভাবকে মানিয়ে চলাও বেশ কষ্টকর। তাই এই সব প্রেক্ষিতে তাঁর প্রিয় শিষ্যাকে এদেশে কাজ করার আগে গভীরভাবে চিন্তার পরামর্শ দিয়েছেন।
4. 'কর্মে ঝাঁপ দেবার পূর্বে বিশেষভাবে চিন্তা করো'-কোন্ কর্মে ঝাঁপ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে? 'বিশেষভাবে চিন্তা' করার প্রয়োজনীয়তা কোথায়? অথবা, 'এসব সত্ত্বেও যদি তুমি কর্মে প্রবৃত্ত হতে সাহস কর'-এখানে কোন্ কর্মের কথা বলা হয়েছে? 'এসব সত্ত্বেও' বলতে পত্রলেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন? ১+৪ = ৫
উত্তরঃ বিবেকানন্দের ভাব ও আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন নিবেদিতা। তিনি ভারতের সেবায় আত্মোৎসর্গের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণের উদ্দেশ্যে কাজ করা খুব সহজ কথা নয়। সে পথে বাধাবিঘ্ন ও প্রতিকূলতা পদে পদে অন্তরায় সৃষ্টি করে। এখানে এই কর্মের কথাই বলা হয়েছে।
বিবেকানন্দ চেয়েছিলেন ভারতীয় সমাজের, বিশেষত এদেশের এ নারীদের উন্নতির জন্য নিবেদিতা কাজ করুন। কেননা সংস্কার এও অশিক্ষার বেড়াজালে ভারতীয় নারীরা সম্পূর্ণ আবদ্ধ। । ঔপনিবেশিক ভারতের আর্থ-সামাজিক জড়ত্বের শিকড় ছিল অতলস্পর্শী। এখানে দুঃখ, দাসত্ব, কুসংস্কার ইত্যাদির কারণে - সমাজজীবন বদ্ধ। আর এই বদ্ধ কারাগারে বন্দি ভারতীয় - নারীর শিক্ষার অধিকার কিংবা সুযোগ কোনোটাই নেই। তার ৭ ওপর সীমাহীন দারিদ্র্যের কারণে এদেশের মানুষ অর্ধভুক্ত ও অর্ধনগ্ন। সেইসঙ্গে জাতিভেদ এবং অস্পৃশ্যতার জীর্ণ লোকাচারে এ দীর্ণ-শতচ্ছিন্ন ভারতীয় সমাজ। এখানে শতাধিক বছরের ইংরেজ ৪ শাসকের অত্যাচার, ভারতীয় ও শ্বেতাঙ্গ উভয়ের মনেই ভয়-ঘৃণা ও বিদ্বেষের জন্ম দিয়েছে। এর ফলে শ্বেতাঙ্গরা নিবেদিতার গতিবিধিকে যেমন সন্দেহ করবে, তেমন ভারতীয়দের বিভেদ-বিভাজন ও অশিক্ষার গভীর দুর্ভেদ্য পরিধিকে অতিক্রম করে নিবেদিতাকেও তাঁদের কাছে পৌঁছোতে হবে। এ ছাড়া একজন ইউরোপীয়ের পক্ষে ভারতের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে থাকার কষ্ট এবং দৈনন্দিন জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের অভাবের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াও খুব সহজ নয়। সুতরাং এদেশ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা গড়ে তুলে, মনের আবেগ-উচ্ছ্বাস সরিয়ে, যুক্তিপূর্ণভাবে নিবেদিতা যাতে নিজের সিদ্ধান্ত বিষয়ে 'বিশেষভাবে চিন্তা' করেন, সেই পরামর্শই বিবেকানন্দ দিয়েছেন। তবে এসব অতিক্রম করেও যদি নিবেদিতা এদেশে আসেন, তাহলে বিবেকানন্দ তাঁকে শতবার স্বাগত জানাবেন।
5. 'আমাকে আমরণ তোমার পাশেই পাবে-চিঠিতে পত্রলেখক বিবেকানন্দ যাঁর উদ্দেশ্যে এই স্নেহে পরিপূর্ণ উক্তিটি করেছেন, তাঁর চরিত্রের স্বরূপ বিশ্লেষণ করো। ৫
উত্তরঃ আমাদের পাঠ্য স্বামী বিবেকানন্দের আলমোড়া থেকে নিবেদিতাকে উদ্দেশ্য করে লেখা 'চিঠি'তে উদ্ধৃতিটি পাই। স্বামীজি তাঁর প্রিয় শিষ্যা মিস নোব্লকে একথাগুলি বলেছেন। পাঠ্য 'চিঠি'তে আমরা মিস নোব্ল অর্থাৎ নিবেদিতার চরিত্রের পরিচয় পাই তাঁর গুরু অর্থাৎ স্বামীজির জবানিতে। দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস: স্বামীজির জহুরির চোখ এই আসল রত্নটিকে চিনতে ভুল করেনি। তাই স্টার্ডি ও মুলারের কাছ থেকে যখন তিনি তাঁর আত্মপ্রত্যয় ও কর্মপ্রণালী সম্পর্কে জানলেন তখন থেকে তাঁর মনে বিশ্বাস জন্মেছিল যে, নিবেদিতা তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারবেন। স্বামীজির দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত সিংহী। তাঁর মধ্যেকার শিক্ষা, ঐকান্তিকতা, পবিত্রতা, অসীম ভালোবাসা, দৃঢ়তা- সর্বোপরি তাঁর ধমনিতে প্রবাহিত কেল্টিক রক্তই তাঁকে এই আসনে আরুঢ় করেছিল। বিবেকানন্দ তাঁর সামনে এদেশে কাজ করার অন্তরায়গুলো তুলে ধরলেও কেবলমাত্র ধীশক্তির জোরে জীবনের চলার পথের সমস্ত বাধা তুচ্ছ করে এদেশের সামাজিক অগ্রগতিকে তিনি ত্বরান্বিত করেছিলেন।
সেবাপরায়ণতা ও স্নেহশীলতা: নিবেদিতা বুঝেছিলেন এদেশে নিজেকে আত্মনির্ভর হয়ে দেশকে আত্মনির্ভরতার শিক্ষা দিতে হবে। সেবা ও স্নেহ ভালোবাসার গুণে সবাইকে আপন করে নেবার বিদ্যা তাঁর জানা ছিল।
ফ্রীশিক্ষার প্রসারে আগ্রহ: খুব অল্প সময়ে তিনি নারীশিক্ষার বিস্তার ও বিদ্যালয় স্থাপনের মতো কাজে অগ্রসর হয়েছেন।
স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন: নিবেদিতা মুক্তিকামী বিপ্লবীদের স্বাধীনতা অর্জনের পথে নানান অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন প্রায় এবং আমাদের ভগিনী নিবেদিতায় রূপান্তরিত হয়ে গেছেন।
6. 'খাঁটি লোকের কথারও তেমনি নড়চড় নেই'-কোন প্রসঙ্গে বক্তা এমন মন্তব্য করেছেন? এই উক্তির আলোকে বক্তার চরিত্রের স্বরূপ ব্যাখ্যা করো। ৩+ ২ = ৫ অথবা, 'মরদ কি বাত হাতি কা দাঁত'-কোন্ প্রসঙ্গে বিবেকানন্দ এই প্রচলিত প্রবাদটি ব্যবহার করেছেন? এই উক্তির আলোকে তাঁর চরিত্রের কোন্ দিকটি ফুটে উঠেছে লেখো। ৩+২ = ৫
উত্তরঃ মিস নোলের কর্মধারায় বিবেকানন্দের অকুণ্ঠ সমর্থন ও বিশ্বাস ছিল। তিনি নিবেদিতার ভারতে আসার এবং এদেশের কাজে আত্মোৎসর্গের সিদ্ধান্তের কথা শুনে অত্যন্ত খুশিও হয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন ভারতের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে যে একাজ খুব সহজ হবে না, তা জানতেন। তাই চিঠিতে বাধা-বিঘ্নের স্বরূপ নিয়ে নিবেদিতাকে অবগত করার চেষ্টা করেছেন, এমনকি গ্রীষ্মপ্রধান দেশে একজন ইউরোপীয়ের - সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সমূহ অভাবের প্রসঙ্গও এক্ষেত্রে বাদ যায়নি। - তাই তিনি বলেছেন, ভারতবর্ষের কাজে যোগ দেওয়ার আগে - মিস নোক্স যেন গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করেন। তবে সেই কাজে বিফল হলে বা বিরক্তি এসে উপস্থিত হলেও, স্বামীজি তাঁর পাশে থাকবেন। এ ছাড়াও বেদান্ত ধর্মের প্রতি আস্থা না থাকলে কিংবা ভারতবর্ষের কাজ না করলেও, স্বামীজি তাঁর প্রতি আস্থা হারাবেন না। কারণ হিসাবে একটি প্রচলিত হিন্দি প্রবাদ ব্যবহার করে স্বামীজি লিখেছেন, 'মরদ কি বাত হাতি কা দাঁত-একবার বেরুলে আর ভিতরে যায় না।' অর্থাৎ খাঁটি লোকের কথার কোনো নড়চড় হয় না।
ঈশ্বর ও সত্যের অনুসন্ধানই একজন প্রকৃত সন্ন্যাসীর জীবনের ব্রত। এই উদ্দেশ্যেই বিবেকানন্দ সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। সর্বত্যাগী বিবেকানন্দের কাছে তাই তাঁর প্রতিজ্ঞা-প্রতিশ্রুতি-সংকল্পই চিরসত্য। এই সত্যের খোঁজে এবং সত্যরক্ষার তাগিদে তিনি সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন, কিন্তু কোনোকিছুর বিনিময়ে আপন 'প্রতিজ্ঞা'-র সত্যকে ত্যাগ করতে পারবেন না। রসিকতার সুরে নিবেদিতার প্রতি স্নেহপরায়ণ বিবেকানন্দ তাঁর এই উপলব্ধির কথাই জানিয়েছেন।
7. 'কারও কারও সঙ্গে দুর থেকে বন্ধুত্ব করাই ভালো'-কার সম্পর্কে বিবেকানন্দের এই অভিমত? এমন অভিমতের কারণ কী? অথবা, 'তাঁর সঙ্গে বনিয়ে চলা অসম্ভব'-কার সম্পর্কে বিবেকানন্দের এই অভিমত? তাঁর সঙ্গে 'বনিয়ে চলা' সম্ভব নয় কেন? ১+৪ = ৫
উত্তরঃ পত্রলেখক বিবেকানন্দ আলমোড়ায় থাকাকালীন মি. ন স্টার্ডির চিঠি মারফত মিস নোব্ল তথা নিবেদিতার এদেশে আসার অভিপ্রায়ের কথা জানতে পারেন। তখন এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনাকালে চিঠিতে তিনি জনৈক মিস হেনরিয়েটা মুলার সম্পর্কে এমন অভিমত প্রকাশ করেন।
বিবেকানন্দের মতে, আপাতদৃষ্টিতে মিস মুলার চমৎকার মহিলা। কিন্তু ছোটোবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে নেত্রী হবার সাধ প্রবল। তিনি বিশ্বাস করেন, পৃথিবীকে ওলটপালট করে দেবার জন্য টাকাই যথেষ্ট। এ ছাড়া অন্য কিছুর তেমন প্রয়োজন নেই। তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রচ্ছন্ন অহংবোধের কারণে, নিজের অজ্ঞাতসারেই এ জাতীয় ভাবনা সর্বদাই তাঁর মধ্যে ক্রিয়াশীল। এই সত্য, নিবেদিতা এদেশে এসে কিছুদিন মিস মুলারের সঙ্গে মেলামেশা করলেই বুঝতে পারবেন। এখন তাঁর সংকল্প হল মিস নোব্ল এবং ইউরোপ বা আমেরিকা থেকে আসা অন্যান্য বন্ধুদের জন্য কলকাতায় একটি বাড়ি ভাড়া নেওয়া। এই প্রচেষ্টা তাঁর সহৃদয়তার পরিচায়ক। কিন্তু মিস মুলারের মঠাধ্যক্ষাসুলভ এই সংকল্প, তাঁর রুক্ষ মেজাজ এবং অস্থির চিত্ততার কারণেই সফল হবে না। সুতরাং নিরপেক্ষ বিবেকানন্দ মিস মুলারের চরিত্রের ভালো-মন্দ দুটি দিককেই তুলে ধরে তাঁর সঙ্গে 'বনিয়ে চলা' অর্থাৎ আন্তরিক সম্পর্ক রক্ষা করা অসম্ভব বুঝেই, প্রশ্নে উদ্ধৃত ন উক্তিটি করেছেন।
8. 'তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে'-উক্তিটি কার? বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ কী? অথবা, 'তোমাকে একটু সাবধান করা দরকার'-কে এই পরামর্শ দিয়েছেন? বক্তার এমন পরামর্শ দেওয়ার কারণ কী লেখো। ১+৪ = ৫
উত্তরঃ উদ্ধৃত উক্তিটি আমাদের পাঠ্য 'চিঠি' প্রবন্ধের প্রেরক ও স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর প্রিয় শিষ্যা নিবেদিতা যিনি ভারতে এসে ব নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, এদেশের নারী জাতির কল্যাণে মা বিশেষভাবে সচেষ্ট হয়েছিলেন তাঁকে এই পরমার্শ দিয়েছিলেন। স্বামীজি যখন স্টার্ডি ও মিস মুলারের কাছ থেকে তার প্রিয় বি শিষ্যার এদেশে আসার সংকল্প ও এদেশের নারীজাতির সামগ্রিক ত উন্নতির বাসনার কথা শোনেন, তখন তাঁকে সরাসরি পত্র লেখার ও প্রয়োজন অনুভব করেন। ভারতের মতো দেশে নারীজাতির উন্নতির জন্য নিবেদিতার মতো একজন সিংহীর যে প্রয়োজন ি তা তিনি বিলক্ষণ জানেন। কিন্তু সুদূর ইংল্যান্ড থেকে শুধুমাত্র পরোপকারের জন্য এদেশে আসছেন এমন একজন মানুষকে তার কর্মপথে কী কী বাধা হতে পারে তা আগাম না জানানোটা অন্যায় তাঁ হবে বলে স্বামীজির মনে হয়। স্বামীজি তাঁকে বোঝাতে চেয়েছেন, বজ্র অশিক্ষা, কুসংস্কার, দারিদ্র্য ও জীর্ণ সংস্কারের নাগপাশে কীভাবে আ এদেশের নারীজাতি আটকে পড়েছে। ইংরেজ ও ভারতীয়দের ভমধ্যে শাসক ও শোষিতের সম্পর্কের জন্য পারস্পরিক সম্পর্ক তাঁ ঘৃণা ও বিদ্বেষ পরিপূর্ণ। এই রকম এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মিে দাঁড়িয়ে তাঁকে কাজ করার সাহস দেখাতে হবে। স্বামীজির মতে এরজন্য তাঁকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। মিস মুলার বা অন্য কারও পক্ষপুটে আশ্রয় নিলে চলবে না। মিস মুলার আজন্ম নেত্রী ও অর্থ দিয়ে দুনিয়া বদলে দেওয়ায় বিশ্বাসী, তাই তাঁর সংস্পর্শে থাকলে নিবেদিতার কর্ম পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটবে এই জন্যই এ বিবেকানন্দ উক্ত মন্তব্যটি করেছেন।
9. 'যাঁরা এদেশীয়দের ঘৃণা করেন না'- এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাঁদের সম্পর্কে বিবেকানন্দের কেমন মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে লেখো। ১+৪ = ৫
উত্তরঃ পাঠ্য 'চিঠি' থেকে প্রদত্ত উদ্ধৃতাংশে ক্যাপ্টেন জে. এইচ. সেভিয়ার এবং তাঁর স্ত্রী মিসেস সেভিয়ারের কথাই এখানে বলা হয়েছে।
স্বামীজির ইচ্ছা ও অনুপ্রেরণায় বেদান্ত ধর্ম প্রচারের জন্য সেভিয়ার দম্পতি মায়াবতীতে অদ্বৈত আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মিসেস সেভিয়ার ছিলেন বিবেকানন্দের আরেক ইংরেজ শিষ্যা। বেদান্ত প্রচারের কাজেই মূলত তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বহু বছর তিনি মায়াবতী এবং শ্যামলাতালে বসবাস করেছেন। তিনি রামকৃষ্ণ সংঘে 'মাদার' নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর এই নামকরণ থেকেই মিসেস সেভিয়ারের স্নেহশীল মাতৃময়ী রূপটি প্রকাশিত হয়। তাই মিসেস সেভিয়ার সম্পর্কে বলতে গিয়ে স্বামীজি লিখেছেন, তিনি নারীসমাজের রত্ন এবং অত্যন্ত স্নেহময়ী মানুষ। অর্থাৎ মিসেস সেভিয়ারের হৃদয়ের উদারতা, মানবিকতা ও সংবেদনশীলতা বিবেকানন্দকে মুগ্ধ করেছিল। তাঁর দৃষ্টিতে এই 'সেভিয়ার দম্পতি'ই একমাত্র ইংরেজ, এদেশীয়দের প্রতি যাঁদের কোনো ঘৃণা নেই। তাঁরাই একমাত্র মানুষ, যাঁরা আমাদের ওপর মুরুব্বিয়ানা দেখাতে আসেননি। এদেশীয়দের প্রতি কর্তৃত্ব বা খবরদারির পরিবর্তে তাঁদের অন্তঃকরণে সেবাপরায়ণতার মানসিকতাই বেশি ক্রিয়াশীল ছিল। তবে এখনও তাঁদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট কর্মপ্রণালী গড়ে ওঠেনি। স্বামীজি তাঁদের প্রতি বিশেষভাবে আস্থাশীল হয়ে বলেছেন, মিস নোব্ল এদেশে এলে তাঁদেরকে সহকর্মীরূপে পাশে পাবেন। এতে সেভিয়ার দম্পতি ও মিস নোব্ল উভয়েরই সুবিধা হবে।
10. বিবেকানন্দের সম্পর্ক কেমন ছিল আলোচনা করো। ৫
উত্তর/ স্বামীজির ব্যক্তিত্ব-পাণ্ডিত্য-অধ্যাত্মবোধ ও সর্বোপরি তাঁর সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী রূপ দেশকালের বেড়া অতিক্রম করে বহুমানুষকে মুগ্ধ করেছিল এবং তাদেরকে মানবসেবার কাজে আত্মোৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। বিবেকানন্দের পাশ্চাত্য এই ভক্তদের মধ্যে এরকমই একজন হলেন মিস ম্যাকলাউড। তাঁর সম্পূর্ণ নাম মিস জোসেফাইন ম্যাকলাউড। ইনি ছিলেন - মিসেস বেটি লেগেটের বোন। যার সাহায্যে স্বামীজি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এবং ফ্রান্সে বহু স্বনামধন্য মানুষের সাথে পরিচিত নিট হয়েছিলেন। স্বামীজির চিঠি থেকে পাই যে, মিস ম্যাকলাউড তাঁকে সর্বদা বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতেন। তিনি স্বামীজির চিন্তা-ভাবনা ও কাজের দ্বারা বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। স্বামীজি তাঁকে 'জো' বলে ভাবতেন। তিনি বহুবার বেলুড় মঠে এসেছিলেন। স্বামীজি মিস নোব্লকে লেখা চিঠিতে ম্যাকলাউডের কথা লিখেছেন। তিনি যখন শরৎকালে ইউরোপ হয়ে এদেশে আসবেন তখন নোব্লকে স্বামীজি তাঁর সঙ্গী হতে বলেছে। কেননা তাতে করে নোক্লের যাত্রাপথের ক্লান্তি দূর হবে। বিবেকানন্দের বিভিন্ন লেখাতে ম্যাকলাউডের প্রতি তাঁর একান্ত নির্ভরতার কথা জানতে পারা যায়। একইভাবে ম্যাকলাউডও তাঁর খাতের বিভিন্ন লেখাতে তাঁদের এই বন্ধুত্বের কথা লিখেছেন।
11. মিস নোক্স তথা ভগিনী নিবেদিতাকে লেখা বিবেকানন্দের 'চিঠি'-র বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লেখো। ৫
উত্তরঃ স্বামীজির সাথে নিবেদিতার গুরু-শিষ্যার সম্পর্ক সর্বজনবিদিত। তাই গুরুর প্রকৃত কাজ শিষ্য বা শিষ্যাকে পথ দেখানো। সে পথ সাধনার পথ, জীবনে চলার পথ বা কর্মের পথ যাই হোক না কেন। আমাদের পাঠ্য বিবেকানন্দের 'চিঠি'র বিষয়বস্তু হল একজন বিদেশিনী যে কিনা সুদূর বিদেশ থেকে এদেশে এসে নিজের জীবন উৎসর্গ করে এদেশের নারীজাতির কল্যাণে ব্রতী হতে চেয়েছেন তাকে এদেশের সত্যটা জানানো। এদেশে কাজ করতে এসে তার সামনে কী কী বাধা আসতে পারে ও তাঁর মানসিক প্রস্তুতিই বা কেমন থাকা উচিত, স্বামীজি সেটাই করতে চেয়েছেন একজন আদর্শ ভারতীয় নাগরিক হিসেবে বা পথপ্রদর্শক গুরু হিসেবে। স্বামীজি স্টার্ডি ও মিস মুলারের কাছে নিবেদিতার প্রতিজ্ঞাবদ্ধতা ও কর্ম পরিকল্পনা শোনেন। তাই তাকে সরাসরি চিঠি লেখার প্রয়োজন অনুভব করেন। তিনি নোব্লকে যেকথাগুলি জানাতে চেয়েছেন তা হল- এদেশের সমাজে নারীরা কেমন অবস্থায় আছে; এদেশের আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোটাই বা কেমন; শাসকের ও শোষিতের সম্পর্ক, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা; সর্বোপরি কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসুক বা না আসুক সর্বক্ষণ পাশে থাকার আশ্বাস। এ ছাড়া তিনি তাঁর পাশে থাকা মানুষদের চেনবার কথাও বলেছেন। সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটার ওপর স্বামীজি তাঁর প্রিয় শিষ্যাকে জোর দিয়ে বলেছিলেন সেটি হল আত্মনির্ভরশীলতা যা সকল কাজের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
12. পত্রলেখক বিবেকানন্দের 'চিঠি' অবলম্বনে তাঁর চরিত্রের স্বরূপ বিচার করো। অথবা, বিবেকানন্দের চরিত্রের বিচক্ষণতা, উদারতা, স্বদেশপ্রীতি, দূরদর্শিতা এবং সমাজমনস্কতার যে বহিঃপ্রকাশ 'চিঠি'-তে ঘটেছে, তা আলোচনা করো। ৫
উত্তরঃ আমাদের পাঠ্য বিবেকানন্দের 'চিঠি'তে আমরা তাঁকে সেই মানুষ হিসেবে পাই যার চরিত্র উজ্জ্বল হীরক খণ্ডের মতো বিচিত্র দ্যুতিতে ভরা, যে দ্যুতিতে বিশ্ববাসী মানবতার সমস্ত গুণগুলিকে নতুন করে বুঝতে ও জানতে শেখে।
বিচক্ষণতা: মিস নোব্লকে লেখা চিঠিতে তিনি যখন বলেন, 'ভারতের কাজে তোমার এক বিরাট ভবিষ্যৎ রয়েছে' এবং ভারতের নারী সমাজের উন্নতির জন্য তোমার মতো একজন সিংহীর প্রয়োজন তখন তা থেকে ভারতের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে তাঁর বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া যায়।
উদারতা: ভারতে কাজ করতে এসে যদি নোব্ল ব্যর্থও হন কিংবা ভারতের বেদান্ত ধর্ম তিনি গ্রহণ করুন বা না করুন, স্বামীজি তাঁর পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন যা থেকে তাঁর উদার মনের পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর নিজের দেশের অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ, কুসংস্কার ও দারিদ্র্য সম্পর্কে যেভাবে তিনি আলোচনা করেছেন তাতে তাঁর স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো প্রশ্নই থাকে না। শাসক ও শোষিতের তীব্র বিদ্বেষপূর্ণ সম্পর্কও যে শুধুমাত্র হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে জয় করা যায় তা তিনি সেভিয়ার দম্পতি ও সার্ভিকে দিয়ে বুঝিয়েছেন। নারীজাতির প্রতি তার ছিল অসীম শ্রদ্ধা। তাই তো মিস সেভিয়ারকে নারীকুলের রত্ন, নিবেদিতাকে সিংহী ইত্যাদি সম্বোধন করেছেন।
স্বদেশপ্রীতি: তাঁর মানবপ্রেম ও স্বদেশপ্রীতির পরিচয় পাওয়া যায় কুসংস্কার ও দারিদ্র্য নিমজ্জিত দেশকে উদ্ধারের জন্য তিনি যে মর্ম যন্ত্রণা অনুভব করতেন তা থেকে।
দূরদর্শিতা : আত্মনির্ভরশীলতা যে সকল মানুষের, সকল জাতির একমাত্র অবলম্বন একথা স্বামীজি সর্বদা বিশ্বাস করতেন। তাই তিনি নিবেদিতাকে কারও পক্ষপুটে আশ্রয় নিতে বারণ করে। চিঠির এই সংক্ষিপ্ত অংশে আমরা স্বামীজিকে মানবীয় গুণে পরিপূর্ণ এক অতিস্মরণীয় মানুষ হিসেবে দেখলাম।
13. পত্রসাহিত্য হিসেবে পাঠ্য 'চিঠি'-র উৎকর্ষ বিচার করো। অথবা, একটি ব্যক্তিগত চিঠি কীভাবে ভাবনা এবং লেখনীর গুণে সাহিত্য হয়ে ওঠে, পাঠ্য 'চিঠি'-র নিরিখে ব্যাখ্যা করো। ৫
উত্তরঃ সাহিত্য সমাজের দর্পণ। মানুষের জীবনের নানান দিক যখন সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়ে মানুষের মনে গভীর আবেদন ও অনুরণন সৃষ্টি করে তখন সেই সাহিত্য সর্বজনীন হয়ে ওঠে। সাহিত্যের আঙ্গিকে চিঠি যা চিরকাল সাহিত্যকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছে বা করছে। আমাদের পাঠ্য স্বামীজির 'চিঠি'-টি তাঁর সাহিত্যমনস্কতা ও লেখনীর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। চিঠির প্রেরক এই সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী পার্থিব জগতের সবকিছু ত্যাগ করে স্বদেশসেবা ও মানবসেবাকেই জীবনের সবচেয়ে বড়ো সত্য বলে মনে করেন। তার প্রেরণাতেই জীবনের এই মহত্তম ব্রতে সকলে নিজেকে উজাড় করে দিতে চেয়েছেন। তিনি এসব কথা বলতে গিয়ে কখনো মানুষকে সাবধান করতে ভুলে যাননি যে কল্যাণকার্যে ঝাঁপিয়ে পড়ার পথটিও নিষ্কণ্টক নয় তা সর্বদাই বিপদসংকুল। এ প্রসঙ্গে চিঠির প্রাপক নিবেদিতার প্রসঙ্গ এসে পড়ে। তাঁর এদেশের নারীকল্যাণে ব্রতী হওয়ার পথে অন্তরায়। হয়ে দাঁড়াবে এদেশের অস্পৃশ্যতা, অজ্ঞানতা, সংস্কার ইত্যাদি। এ ছাড়া এদেশীয়রা ও শ্বেতাঙ্গরা তাকে ভিন্ন ভিন্ন কারণে সন্দেহ করবে। একই সঙ্গে তিনি যুক্তি দ্বারা বুঝিয়েছেন যে, কার সাথে সখ্য গড়া যায় আর কার সাথে তা দূর থেকেই করা ভালো।
No comments:
Post a Comment