❐ কমবেশি ১৫টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও:
1. 'হিমালয় দর্শন' কার লেখা?
উত্তরঃ 'হিমালয় দর্শন' বেগম রোকেয়ার লেখা।
2. হিমালয় রেল রোড কোথায় শুরু হয়েছে?
উত্তরঃ শিলিগুড়ি থেকে হিমালয় রেল রোড শুরু হয়েছে।
3. বেগম রোকেয়া কোন্ কোন্ রেলগাড়ির কথা বলেছেন?
উত্তরঃ বেগম রোকেয়া তিন রকম রেলগাড়ির কথা বলেছেন-ইস্ট ইন্ডিয়ান গাড়ি, ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলগাড়ি এবং হিমালয়ান রেলগাড়ি।
4. সবচেয়ে ছোটো রেলগাড়ির নাম কী?
উত্তরঃ সবচেয়ে ছোটো রেলগাড়ির নাম হিমালয়ান রেলগাড়ি।
5. সবচেয়ে বড়ো রেলগাড়ির নাম কী?
উত্তরঃ সবচেয়ে বড়ো রেলগাড়ির নাম ইস্ট ইন্ডিয়ান গাড়ি।
6. রেলগাড়িগুলি দেখতে কেমন?
উত্তরঃ ছোটো খেলনা গাড়ির মতো রেলগাড়িগুলি খুব নীচু। ইচ্ছা করলেই লোক চলন্ত গাড়িতেই ওঠানামা করতে পারে।
7. ট্রেনটি যখন ওপরে উঠছিল তখন পথের দুধারে দৃশ্য কেমন ছিল?
উত্তরঃ পথের দুধারে দৃশ্য অতি মনোরম ছিল, কোথাও অতি উচ্চ চূড়া, কোথাও আবার নিবিড় অরণ্য।
8. লেখিকারা সমুদ্র থেকে কত হাজার ফিট ওপরে উঠেছিলেন?
উত্তরঃ লেখিকারা সমুদ্র থেকে তিন হাজার ফিট ওপরে উঠেছিলেন।
9. 'সহসা নদী বলিয়া ভ্রম জন্মে।'-কী দেখে নদী বলে ভ্রম জন্মেছিল?
উত্তরঃ শিলিগুড়ি থেকে কারসিয়ং যাওয়ার পথে নীচের ৪ উপত্যকায় সাদা কুয়াশা দেখে লেখিকার নদী বলে ভ্রম ঠি হয়েছিল।
10. সবুজ রঙের চা-বাগানগুলির বিশেষত্ব কী ছিল?
উত্তরঃ সবুজ চা-বাগানগুলি পাহাড়ের প্রাকৃতিক শোভাকে আরও শতগুণ বৃদ্ধি করে তুলেছিল।
11. লেখিকা বেগম রোকেয়া ধরণির সীমন্ত বলে কাকে মনে করেছেন?
উত্তরঃ কারসিয়ং যাওয়ার পথের দুপাশে সবুজ চা-বাগানের মাঝখান দিয়ে পায়ে-হাঁটা সরু পথকেই লেখিকা ধরণির সীমন্ত বলে মনে করেছেন।
12. 'বসুমতীর ঘন কেশপাশ,'-বসুমতী কে? কাকে 'ঘন কেশপাশ' বলা হয়েছে?
উত্তরঃ বসুমতী হল পৃথিবী। নিবিড় শ্যামল বনকে তার 'ঘন কেশপাশ' বলে লেখিকার মনে হয়েছে।
13. জলপ্রপাতগুলিকে দেখে লেখিকার কী মনে হয়েছিল?
উত্তরঃ পাহাড়ি পথের বুক চিরে নেমে-আসা ঝরনাগুলি দেখে লেখিকার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল এমনই কোনো ঝরনা জাহ্নবীর উৎস।
14. 'আমাদের মনোরথ পূর্ণ হইল'-কোন্ মনোরথের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ এখানে কারসিয়ং যাওয়ার পথে জলপ্রপাতগুলি প্রাণ ভরে দেখার ইচ্ছা পূরণের কথাই বলা হয়েছে।
15. 'সে জুলুম হইতে রক্ষা পাইলাম।'-কোন্ জুলুমের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ কারসিয়ং যাবার পথে চার হাজার ফিট ওপরে গরমের জ্বালা ছিল না। এখানে গরমের সেই জুলুমের কথাই বলা হয়েছে।
16. কারসিয়ং স্টেশনের উচ্চতা কত?
উত্তরঃ কারসিয়ং স্টেশনের উচ্চতা ৪৮৬৪ ফিট।
17. 'গৃহসুখ অনুভব করিতে পারি নাই।'-লেখিকা কেন গৃহসুখ অনুভব করতে পারেননি?
উত্তরঃ বেগম রোকেয়ার জিনিসপত্র ভুল করে দার্জিলিং-এর ঠিকানায় বুক করায়, তিনি বাসায় গিয়েও গৃহসুখ অনুভব করতে পারেননি।
18. পার্বত্য বসন্তকাল কাকে বলে?
উত্তরঃ বছরের যে সময়ে কারসিয়ং-এ শীতও বেশি থাকে না আবার গ্রীষ্মকালও হয় না, তাকে পার্বত্য বসন্তকাল বলে।
19. বেগম রোকেয়া জল কীভাবে ব্যবহার করতেন?
উত্তরঃ বেগম রোকেয়া পানীয় জল ফিলটারে ছেঁকে ব্যবহার করতেন।
20. পার্বত্য অঞ্চলের জল দেখতে কেমন?
উত্তরঃ পার্বত্য অঞ্চলের জল দেখতে খুব পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ।
21. জল কোথায় পাওয়া যেত?
উত্তরঃ কারসিয়ং-এর পার্বত্য অঞ্চলে কোথাও কুয়ো, পুকুর বা নদী না থাকায় শুধুমাত্র ঝরনা থেকেই জল পাওয়া যেত।
22. কারসিয়ং-এর বায়ু কেমন?
উত্তরঃ কারসিয়ং-এর বায়ু পরিষ্কার ও হালকা।
23. লেখিকা বেগম রোকেয়া কখন 'আত্মহারা' হয়ে যেতেন?
উত্তরঃ কারসিয়ং-এ পাহাড়ের গায়ে সূর্যাস্তের রঙের সাথে মেঘ ও বাতাসের খেলা দেখে লেখিকা 'আত্মহারা' হয়ে যেতেন।
24. লেখিকা ঢেঁকিশাকের কথা কোথায় পাঠ করেছিলেন?
উত্তরঃ লেখিকা ঢেঁকিশাকের কথা 'মহিলা' পত্রিকায় পাঠ করেছিলেন।
25. ঢেঁকিশাক সম্পর্কে লেখিকার ধারণা কী ছিল?
উত্তরঃ লেখিকা ঢেঁকিশাককে ক্ষুদ্র গুল্ম বলেই জানতেন।
26. লেখিকা ঢেঁকিতরু সম্পর্কে ভূ-তত্ত্ব গ্রন্থে কী পাঠ করেছিলেন?
উত্তরঃ লেখিকা ভূ-তত্ত্ব গ্রন্থ পাঠ করে জেনেছিলেন কারবনিফেরাস যুগে বড়ো বড়ো ঢেঁকিতবু ছিল।
27. লেখিকা কোথায় ঢেঁকি গাছ দেখেছিলেন? তার উচ্চতা কত ছিল?
উত্তরঃ লেখিকা কারসিয়ং-এ ঢেঁকি গাছ দেখেছিলেন। সেগুলির উচ্চতা ছিল ২০-২৫ ফিট।
28. 'নির্ভয়ে বেড়াইতে পারি'-নির্ভয়ে বেড়াতে পারার কারণ কী?
উত্তরঃ লেখিকা যে অরণ্যে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন, সেখানে বাঘ না থাকায় তিনি নির্ভয়ে বেড়াতে পেরেছিলেন।
29. লেখিকার ভুটিয়া চাকরানির নাম কী?
উত্তরঃ লেখিকার ভুটিয়া চাকরানির নাম ভালু।
30. স্ত্রীলোকেরা কীসে ভয় পায় না?
উত্তরঃ স্ত্রীলোকেরা জোঁক দেখলে ভয় পায় না।
31. ভুটিয়ানিরা কতটুকু কাপড় কীভাবে পরে?
উত্তরঃ ভুটিয়ানিরা ৭ গজ কাপড় ঘাঘরার মতো করে পরে।
32. ভুটিয়ানিরা গায়ে ও মাথায় কী পরে?
উত্তরঃ ভুটিয়ানিরা গায়ে জ্যাকেট পরে ও বিলিতি শাল দিয়ে মাথা ঢেকে রাখে।
33. 'মহিলা' পত্রিকার সম্পাদক রমণীদের 'অবলা' বলেছেন কেন?
উত্তরঃ সেকালে মহিলাদের মতামত জানানোর স্বাধীনতা ছিল স্বল্প। তাই মহিলা পত্রিকার সম্পাদক রমণীদের 'অবলা' বলেছেন।
34. ভূটিয়ানিরা উদরান্নের জন্য কাদের ওপর নির্ভরশীল নয়?
উত্তরঃ ভুটিয়ানিরা উদরান্নের জন্য পুরুষদের ওপর নির্ভরশীল নয়।
35. ভুটিয়ানিরা কীভাবে পেটের ভাত জোগাড় করে?
উত্তরঃ ভুটিয়ানিরা পুরুষদের উপার্জনের প্রত্যাশা না করে পার্বত্য রাস্তায় পাথর বহন করে নিজেদের পেটের ভাত জোগাড় করে।
36. সবলেরা কী করে?
উত্তরঃ সবলেরা পথে পাথর বিছিয়ে রাস্তা প্রস্তুত করে।
37. 'পাহাড়নি' কারা?
উত্তরঃ ভুটিয়ানিরা নিজেদের 'পাহাড়নি' পরিচয় দিয়ে থাকেন।
38. সমতলের মানুষদের ভুটিয়ানিরা কী বলে?
উত্তরঃ সমতলের মানুষদের ভুটিয়ানিরা 'নীচেকা আদমি' বলে।
39. ভুটিয়ানিরা কেমন হয়?
উত্তরঃ ভুটিয়ানিরা স্বভাবত পরিশ্রমী, কর্মপ্রিয়, সাহসী ও সত্যবাদী হয়।
40. 'ইহারা ক্রমশ সদগুণরাজি হারাইতেছে'। 'ইহারা' কেন সদ্গুণরাজি হারাচ্ছে?
উত্তরঃ নীচেকা আদমি অর্থাৎ সমতলের মানুষদের সংস্পর্শে থেকে এরা ক্রমশই এদের সদ্গুণগুলি হারাচ্ছিল।
41. ভুটিয়ানিরা সমতলবাসীর সংস্পর্শে এসে কী কী দোষ শিখছে?
উত্তরঃ ভুটিয়ানিরা সমতলবাসীর সংস্পর্শে এসে বাজারের পয়সা অল্পস্বল্প চুরি করা, দুধে জল মেশানো ইত্যাদি শিখছে।
42. ভুটিয়ানিরা কীভাবে অন্যান্য জাতির সঙ্গে মিশছে?
উত্তরঃ ভুটিয়ানিরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে অন্যান্য জাতির সঙ্গে মিশছে।
43. 'বড়ো একটা ঝরনা বহিতেছে;'-ঝরনাটি কোথায় অবস্থিত ছিল?
উত্তরঃ লেখিকা বেগম রোকেয়ার কারসিয়ং-এর বাসা থেকে প্রায় মাইল খানেক দূরে এই বড়ো ঝরনাটি অবস্থিত ছিল।
44. 'ভক্তির উচ্ছ্বাস দ্বিগুণ, ত্রিগুণ বেগে প্রবাহিত হয়।'-এমন হওয়ার কারণ কী ছিল?
উত্তরঃ কারসিয়ং-এর বাসার অদূরেই অবস্থিত 'দুগ্ধফেননিভ' স ঝরনার কলধ্বনি শুনে লেখিকার ঈশ্বরভক্তি এইভাবে প্রকাশিত হয়েছিল।
45. 'এখন সে সাধও পূর্ণ হইল।'-কোন্ সাধের E কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ লেখিকার পাহাড় দেখবার সাধ ছিল। এখানে সেই সাধের কথা বলা হয়েছে।
46. 'না, সাধ তো মিটে নাই'।-সাধ মেটে না কেন?
উত্তরঃ হিমালয়ের অনির্বচনীয় রূপ লেখিকার দর্শনপিপাসা ক্রমশই বাড়িয়ে দিতে থাকে। তাই স্বাদ যেন পূর্ণ হয় না।
47. পাহাড় দর্শনের পর লেখিকার কী মনেট হয়েছিল?
উত্তরঃ পাহাড় দর্শনের পর লেখিকার দর্শনপিপাসা আরও বলে শতগুণ বেড়ে গিয়েছিল।
❐ কমবেশি ৬০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :
1. 'পথের দুই ধারে মনোরম দৃশ্য।-কোন্ পথের কথা বলা হয়েছে? মনোরম দৃশ্যের বর্ণনা দাও ১+২=৩
উত্তরঃ 'হিমালয় দর্শন' প্রবন্ধে বেগম রোকেয়া শিলিগুড়ি থেকে যে পথে কারসিয়ং যাচ্ছিলেন সেই পথের কথা বলা হয়েছে।
লেখিকা যখন খেলনার মতো ছোট্ট ট্রেনে করে পাহাড়ি। আঁকাবাঁকা পথে ধীরে ধীরে উঁচুতে উঠছিলেন তখন পথের দুধারে কোথাও অতি উচ্চ চূড়া, কোথাও নিবিড় অরণ্য দেখেছিলেন। উপর থেকে নীচের উপত্যকায় কুয়াশা দেখে নদী বলে মনে হচ্ছিল। সবুজ চা-বাগান আর ঝরনা পথের সৌন্দর্যকে আরও মনোরম করে তুলেছিলা
2. হরিদ্বর্ণ চায়ের ক্ষেত্রগুলি কীভাবে প্রাকৃতিক শোভাকে আরও শতগুণ বৃদ্ধি করেছিল? ৩
উত্তরঃ লেখিকা রোকেয়া শিলিগুড়ি থেকে ছোট্ট খেলনার মতো রেলগাড়িতে চেপে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ ধরে ধীরে ধীরে কারসিয়ং-এর দিকে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি পথের দুধারে নানান মনোহর দৃশ্য দেখেছিলেন। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছিল সবুজ চায়ের বাগানগুলি। পাহাড়ের গায়ে বিস্তীর্ণ চা-বাগানের মাঝখান দিয়ে মানুষের চলার পথগুলি দেখে মনে হচ্ছিল নিবিড় শ্যামল বন যেন বসুমতীর কেশপাশ আর পথগুলি - যেন আঁকাবাঁকা সিঁথি।
3. যে কারণেই ট্রেন থামুক-আমাদের মনোরথ পূর্ণ হইল।-ট্রেন থামার প্রকৃত কারণ কী ছিল? লেখিকাদের মনোরথ কীভাবে পূর্ণ হয়েছিল? ১+২ = ৩
উত্তরঃ শিলিগুড়ি থেকে কারসিয়ং যাত্রাকালে ছোট্ট খেলনার মতো রেলগাড়িটি জল পরিবর্তনের জন্য ঝরনার সামনে দাঁড়িয়েছিল।
রেলপথে কারসিয়ং যাত্রাকালে অনেকগুলো জলপ্রপাত লেখিকার চোখে পড়েছিল, কিন্তু কাছ থেকে প্রাণ ভরে দেখতে না পাওয়ায় তাঁর ঝরনা দেখার সাধ আরও বেড়েই গিয়েছিল। একবার এক বড়ো ঝরনার কাছে জল নেওয়ার তাগিদে যখন ট্রেন থামল তখন লেখকের মনের অপূর্ণ সাধ পূর্ণ হয়েছিল।
4. 'সে জুলুম হইতে রক্ষা পাইলাম।-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। ৩
উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশটি বেগম রোকেয়ার 'হিমালয় দর্শন' নামক প্রবন্ধ থেকে গৃহীত। লেখিকারা হিমালয় দর্শনের উদ্দেশ্যে শিলিগুড়ি থেকে ছোট্ট ট্রেনে করে যখন সমুদ্র থেকে তিন হাজার ফুট উঁচু দিয়ে যাচ্ছিলেন তখনও তাদের শীত করছিল না। অবশেষে তারা যখন প্রায় চার হাজার ফুট উপরে উঠলেন তখন তাদের শীতটা অনুভূত না হলেও গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত করা যে জ্বালা তা ছিল না। এ কথা বোঝাতেই লেখিকা উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন।
5. 'কেবল আশ্রয় পাইলে সুখে গৃহে থাকা হয় না, আবশ্যকীয় আসবাব সরঞ্জামও চাই।'- প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তব্যটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। ৩
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটি বেগম রোকেয়ার 'হিমালয় দর্শন' নামক প্রবন্ধের অংশবিশেষ। হিমালয় দর্শনের উদ্দেশ্যে লেখিকারা যখন শিলিগুড়ি থেকে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে, কারসিয়ং-এ পৌঁছালেন তখন তাঁরা বিধ্বস্ত ও ক্লান্ত। তাই বিশ্রামের জন্য তাঁরা কাছেই তাঁদের বাসাতে গিয়ে উঠলেন। কিন্তু তাঁদের জিনিসপত্র ভরা কয়েকটি ট্রাংক দার্জিলিং-এর ঠিকানায় বুক্ত করায় সেখানে চলে গিয়েছিল। তাই লেখিকা আশ্রয় পেয়েও আবশ্যকীয় সরঞ্জামের অভাবে ঘরের যে সুখ তা থেকে বঞ্চিত হলেন। সেকথা বোঝাতেই তিনি মন্তব্যটি করেছেন।
6. 'আমি কোনো কাজ করিতে পারি না।'-লেখিকার এমন বক্তব্যের কারণ আলোচনা করো। ৩
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটি বেগম রোকেয়ার 'হিমালয় দর্শন' নামক প্রবন্ধ থেকে গৃহীত। লেখিকা যখন কারসিয়ং-এ গিয়ে পৌঁছেছিলেন তখন পাহাড়ে বসন্তকাল। বাতাস পরিষ্কার ও হালকা। আকাশে বাতাস ও মেঘের লুকোচুরি। পশ্চিম আকাশে অস্তগামী সূর্য যেন পাহাড়ের গায়ে তরল সোনা ঢেলে দিয়েছে আর খণ্ড খণ্ড মেঘগুলি যেন তাদের সোনা রং মেখে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। দেখে আত্মহারা লেখিকা কোনো কাজ করতে পারছিলেন না।
7. মনে পড়ে একবার 'মহিলায়' ঢেঁকির শাকের কথা পাঠ করিয়াছি।'- 'মহিলা' কী? ঢেঁকির শাক সম্পর্কে যা জান লেখো। ৩
উত্তরঃ 'মহিলা' একটি মাসিক পত্রিকা, যেটির সম্পাদক ছিলেন গিরিশচন্দ্র সেন ও ব্রজগোপাল নিয়োগী। উনিশ শতকের শেষ ও বিশ শতকের প্রথমদিকে এটি মহিলাদের সার্বিক উন্নতিবিধানের জন্য প্রকাশিত হত।
লেখিকার ধারণা ছিল ঢেঁকি শাক গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। তিনি ভূ-তত্ত্ব গ্রন্থে পাঠ করেছিলেন যে কারবনিফেরাস যুগে বড়ো বড়ো ঢেঁকি গাছ ছিল। কিন্তু এখন সেই গাছ স্বচক্ষে দেখে লেখিকার ভারী আনন্দ হল। এই গাছ আসলে ঘাস জাতীয় যার উচ্চতা হবে ২০-২৫ ফিট।
8. কারসিয়ং-এর আবহাওয়া ও এখানকার জল কেমন ছিল? ৩
উত্তরঃ লেখিকারা যখন কারসিয়ং-এ পৌঁছালেন তখন সেখানে শীত-গ্রীষ্ম উভয়েরই, প্রকোপ সময়টাকে পার্বত্য বসন্ত কাল বলা যেতে পারে। সূর্যকিরণের প্রখরতা বেশ অনুভূত হয় এবং বাতাসও বেশ স্বাস্থ্যকর। তবে এখানকার জল খুব একটা ি ভালো নয়। জলের উৎস বলতে একমাত্র ঝরনার জল, যা লেখিকার ফিলটারে ছেঁকে ব্যবহার করতেন। এখানে ঝরনার জল দর্শনে চোখ জুড়িয়ে যায়, স্পর্শে জুড়ায় হাত।
9. 'এদেশের স্ত্রী লোকেরা জোঁক দেখিলে ভয় পায় না।'-এদেশের বলতে কোন্ দেশকে বোঝানো হয়েছে? সেখানকার মেয়েদের কী বলা হত? জোঁক সম্পর্কে তাদের কী মতামত। ১+১+১ = ৩
উত্তরঃ এদেশ বলতে লেখিকা বেগম রোকেয়া বুঝিয়েছেন মূলত কারসিয়ং ও ভুটান সংলগ্ন এলাকাকে এখানকার মেয়েদের অর্থাৎ ভুটিয়ানিদের বলা হয় 'পাহাড়নি'। অবশ্য এ পরিচয় তারা নিজেরাই দিত।
ভুটিয়ানিরা নানান প্রতিকূলতার মধ্যে বেড়ে ওঠায় তাদের কাছে জোঁকের মতো ক্ষুদ্র প্রাণীটি এতটুকু ভীতিপ্রদ ছিল না। তাই ভুটিয়া চাকরানি ভালুর সহজ স্বীকারোক্তি, "জোঁক কি ক্ষতি করে? রক্ত শোষণ শেষ হইলেই আপনিই চলিয়া যায়”।
10. 'এখন সে সাধও পূর্ণ হইল।'-সাধটি কী? তা কীভাবে পূর্ণ হয়েছিল? ১ + ২ = ৩
উত্তরঃ বেগম রোকেয়ার 'হিমালয় দর্শন' নামক প্রবন্ধ থেকে গৃহীত উদ্ধৃত অংশটিতে লেখিকা তাঁর পর্বত দেখার সাধের কথা বলেছেন।
লেখিকা ইতিমধ্যে সমুদ্রের সৌন্দর্য আস্বাদন করেছেন, বাকি ছিল পর্বত দর্শন। শিলিগুড়ি থেকে কারসিয়ং যাত্রাকালে মনোহর দৃশ্য তাঁকে তৃপ্তি দিয়েছিল; কিন্তু কারসিয়ং এসে অস্তগামী সূর্যের আভায় পাহাড়ের রূপ, ঝরনার কল্লোলগীতি ইত্যাদি শুনে আবেগবিহ্বল হয়ে লেখিকা তার মনের সমস্ত সাধের পূর্ণতা প্রাপ্তির কথা বলেছেন।
11. 'প্রভু অনেকগুলি চক্ষু দেন নাই কেন?'- বক্তার এরূপ উক্তির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।৩
উত্তরঃ লেখিকা বেগম রোকেয়া তার 'হিমালয় দর্শন' প্রবন্ধে পার্বত্য প্রকৃতির যে বর্ণনা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন তা এক কথায় অনবদ্য। শিলিগুড়ি থেকে কারসিয়ং যাওয়ার সময় পথের দুধারের সৌন্দর্য কারসিয়ং-এর প্রকৃতি তাঁকে মুগ্ধ করে। লেখিকা যত দেখেন ততই পিপাসা বেড়ে যায়। ঈশ্বরের সৃষ্ট এই বিশাল সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করার জন্য মানুষের দুটি মাত্র চোখ যেন যথেষ্ট নয়। তাই তার আক্ষেপ ঈশ্বর কেন অনেকগুলো চোখ দিলেন না।
12. 'চিত্র দেখিয়া চিত্রকরের নৈপুণ্য বুঝা যায়।' -চিত্রকর কে? তার নৈপুণ্যের পরিচয় দাও। ১ + ২ = ৩
উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে বেগম রোকেয়ার 'হিমালয় দর্শন' প্রবন্ধ থেকে। লেখিকার চোখে হিমালয়ের সৌন্দর্য যেন চিত্রকরের আঁকা চিত্র। আর সেই চিত্রকর হলেন পরম করুণাময় ঈশ্বর।
লেখিকা হিমালয় ভ্রমণের জন্য শিলিগুড়ি থেকে কারসিয়ং যাত্রাকালে এবং কারসিয়ং-এ গিয়ে সেখানকার যে রূপ প্রত্যক্ষ করেছিলেন তা বর্ণনাতীত। অস্তগামী সূর্যের সোনালি আভায় পাহাড়ের রূপ, ঝরনার সৌন্দর্য দেখে লেখিকার মনে হয় এই সৃষ্টি যদি এত সুন্দর তবে স্রষ্টা কত না সুন্দর। এই প্রেক্ষিতেই এই উক্তি।
❐ কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :
1. 'পথের দুই ধারে মনোরম দৃশ্য'-শিলিগুড়ি স্টেশন থেকে যে ট্রেনে কারসিয়ং যাত্রা করেছিলেন বেগম রোকেয়া সেই ট্রেনগুলি কেমন ছিল? সেই সঙ্গে সেই যাত্রাপথের বিবরণ দাও। ২+৩ = ৫
উত্তর/শিলিগুড়ি স্টেশনে নেমে ট্রেনপথে কারসিয়ং যাচ্ছিলেন বেগম রোকেয়া। হিমালয় রেল রোড শিলিগুড়ি থেকেই আরম্ভহয়েছে। এই রেলগাড়ি নীচু ও ছোটো। ছোটো ছোটো গাড়িগুলো দেখতে অনেকটা খেলনা গাড়ির মতো সুন্দর। এরা অনেকটা ধীর গতিতে যাতায়াত করে। ফলে চলাচলের সময় ইচ্ছা করলেই ট্রেনযাত্রীরা ওঠানামা করতে পারে। গাড়িগুলো পাহাড়ের ঢাল বেয়ে 'কটাটটা' শব্দ করতে করতে ওপরে উঠে যায়।
পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে ধীর গতিতে ট্রেন এগোতে থাকে। পথে কখনও গভীর অরণ্য আবার কখনও উঁচু বরফের চূড়া চোখে পড়ে। সবুজ রঙের চা বাগান, সিঁথির মতো সরু পাহাড়ি পথ, জলপ্রপাত, তরু, ঘাস, লতা, পাতা-এই সবকিছু মিলিয়ে এক আশ্চর্য পার্বত্য-জগৎ তাঁদের অনাস্বাদিত আনন্দের জগতে নিয়ে যায়। কখনও মেঘে ঢাকা জঙ্গুলে পথ ভেদ করে - ট্রেন এগোয়, আবার কখনও নীচের উপত্যকায় সাদা কুয়াশার - দলকে নদী বলে ভ্রম হয়। এভাবেই এক অবিস্মরণীয় নিসর্গ - সৌন্দর্যের জগৎ দেখে লেখিকা মুগ্ধ হয়েছিলেন।
2. 'হরিদ্বর্ণ চায়ের ক্ষেত্রগুলি প্রাকৃতিক শোভা আরও শতগুণ বৃদ্ধি করিয়াছে।'-কোন্ প্রসঙ্গে লেখিকা এ কথা বলেছেন? 'হিমালয় দর্শন' প্রবন্ধ অবলম্বনে অরণ্য প্রকৃতির বর্ণনা দাও। ২+৩ = ৫
উত্তর/ লেখিকারা ছোটো ট্রেনে চেপে শিলিগুড়ি থেকে কারসিয়ং যাওয়ার পথের দুধারে কোথাও অতি উচ্চ চূড়া, কোথাও বা নিবিড় অরণ্যের মনোরম দৃশ্য লেখিকার মনকে অভিভূত করলেও সবুজ চায়ের বাগানগুলি প্রাকৃতিক শোভাকে আরও শতগুণ বৃদ্ধি করেছিল, যা দেখেই লেখিকার এমন মন্তব্য।
কারসিয়ং যাওয়ার আঁকাবাঁকা পথের দুধারে তরু, লতা, ঘাস পাতা আর হরিদ্বর্ণ চা বাগান। চা বাগানের ভেতর দিয়ে মানুষের হেঁটে যাওয়া পথকে পৃথিবীর ঘন চুলের মাঝখানে সিঁথির মতো দেখায়। রেলপথে যেতে যেতে ঝরনার যে সৌন্দর্য তার দৃষ্টিতে আসে তা বর্ণনাতীত। পাথরের বুক চিরে বেরিয়ে আসা ঝরনার ধ্বনি ও রূপ দেখে তাঁর মন স্রষ্টার কাছে নতজানু হয়। কারসিয়ং-এ থাকার সময় অস্তায়মান সূর্যের আলো-বাতাস ও মেঘের লুকোচুরি দেখে লেখিকা আত্মহারা হন এবং কাজ ভুলে যান। ঘন জঙ্গল, সিঁথির মতো সুর পথ, ঝরনার কলকল্লোল শুনে লেখিকা স্রষ্টার কাছে তাঁর অন্তরের প্রণতি জ্ঞাপন করেন যান্ত্রিক মন্ত্র উচ্চারণের পরিবর্তে হৃদয়ের স্বতঃস্ফূর্ততায় আন্তরিক { শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে।
3. বেগম রোকেয়ার অনুসরণে শিলিগুড়ি থেকে কারসিয়ং যাত্রাপথের বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ শিলিগুড়ি থেকে শুরু হয়েছে যে হিমালয় রেল রোড, সেখান থেকে লেখিকা খেলনা গাড়ির মতো ছোটো সুন্দর রেলগাড়িতে চেপে কারসিয়ং-এর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথের দুধারে কোথাও উঁচু চূড়া আবার কোথাও নিবিড় অরণ্যকে রেখে অবশেষে সমুদ্র থেকে তিন হাজার ফিট উপরে তারা এসে পড়েছিলেন মেঘের রাজ্যে, যেখান থেকে নীচের সাদা কুয়াশা দেখে নদী বলে মনে হচ্ছিল। বড়ো বড়ো ঘাস, লতাপাতা ঘেরা মনোরম প্রকৃতির শোভা শতগুণে বাড়িয়ে তুলেছিল সবুজ চায়ের খেতগুলি। সেই চা-বাগানের মাঝখান দিয়ে মানুষের চলার সংকীর্ণ পথগুলি দেখে তাদের মনে হচ্ছিল সেগুলি যেন পৃথিবীর ঘন চুলের মাঝবরাবর আঁকা সিঁথিরেখা। রেলগাড়িতে যেতে যেতে লেখিকা অনেকগুলি জলপ্রপাত দেখেছিলেন যেগুলির সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। তাঁর বিশ্বাস হচ্ছিল না পাথর বিদীর্ণ করে বেরিয়ে আসা এমনই কোনো জলপ্রপাত জাহ্নবীর উৎস। তাদের ঝরনা দেখার মনোরথ পূর্ণ হয় যখন ট্রেন জল নেবার জন্য এক বড়ো ঝরনার সামনে দাঁড়ায়। এইভাবে গরমের জুলুম কাটিয়ে অবশেষে তাঁরা চার হাজার ফিট উঁচুতে উঠে এসেছিলেন।
4. বাসায় পৌঁছানোর পর বেগম রোকেয়ার কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বুঝিয়ে বলো। ৫
উত্তরঃ শিলিগুড়ি থেকে রেলগাড়িতে চেপে কারসিয়ং এসে পৌঁছেছিলেন বেগম রোকেয়া। স্টেশন থেকে বাসা বেশি দূরে না হওয়ায় তাঁরা সন্ধ্যার আগেই বাসায় পৌঁছেছিলেন। কিন্তু জিনিসপত্রের ট্রাংক ভুল করে দার্জিলিং-এর ঠিকানায় বুক করা হয়েছিল বলে বাসায় পৌঁছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাবে আশ্রয় মিললেও স্বাচ্ছন্দ্য মিলল না। সন্ধ্যার ট্রেনে জিনিসপত্রের ট্রাংক এসে পৌঁছালে, পরদিন সকালে জিনিসপত্রের অভাব মিটল এবং তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করলেন।
কারসিয়ং-এ তখনও শীত পড়েনি, তবে গরমও ছিল না। স অনেকটা পার্বত্য বসন্তকাল বলে মনে হয়েছে বেগম রোকেয়ার। ব স্থানীয় কোনো কুয়ো, জলাশয় বা নদী নেই বলে ঝরনা থেকেই নে জল সংগ্রহ করতে হত। সে জল দেখতে স্বচ্ছ, পরিষ্কার হলেও খুব ভালো নয়। ফিলটারে ছেঁকে পানীয় হিসেবে ব্যবহার করে প সাধারণ মানুষ। তবে সেখানকার বায়ু খুব স্বাস্থ্যকর। সেখানে জ সারাদিন বাতাস আর মেঘের মধ্যে চমৎকার লুকোচুরি খেলা। চলত। লেখিকা মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখতেন বায়ুতাড়িত মেঘের বা নানা ছন্দময় গতিবিধি। তাদের তামাশা দেখতে দেখতেই বেগম ক রোকেয়ার সময় কেটে যেত। আত্মহারা লেখিকা সে দৃশ্য মুগ্ধ কল বিস্ময়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতেন। আর এভাবেই কেটে যেত উ তাঁর সারাটা বেলা। ক
5. 'রমণী জাতি দুর্বল বলিয়া তাঁহাদের নাম নাকি অবলা'। ভুটিয়ানিদের সম্পর্কে এই বক্তব্য কতটা প্রাসঙ্গিক বলে তোমার মনে হয়? উদ্ধৃতাংশটির মধ্য দিয়ে লেখিকার কোন্ মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে লেখো। ২+৩=৫
, 'ইহারা উদরান্নের জন্য পুরুষদের প্রত্যাশী নহে;'-এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাঁদের জীবনযাত্রার স্বরূপ লেখিকা কীভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন? ২+৩=৫
স্ট্যাথবা, 'হিমালয় দর্শন' রচনাংশ অবলম্বনে ভুটিয়ানিদের জীবনযাত্রার বৈশিষ্ট্য নিজের ভাষায় লেখো।
ভাথবা, 'এখানে সবলেরা বালক-বালিকার দলভুক্ত বলিয়া বোধ হয়'।-এমন কথা বলার কারণ কী? উদ্ধৃতাংশটির মধ্য দিয়ে লেখিকার কোন্ মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে? ৩+২ = ৫
উত্তরঃ বেগম রোকেয়া তাঁর 'হিমালয় দর্শন' প্রবন্ধে ভুটিয়ানি মহিলাদের প্রাণ চঞ্চল, পরিশ্রমী, সৎ, সাহসী ও কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর জীবনের এক অনবদ্য ছবি পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। তারা পার্বত্য প্রতিকূল প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠার জন্য সমতলের স্ত্রীলোকদের মতো ভীরু নয়। জোঁকের মতো প্রাণীদের তারা ভয় করে না। ভারী পাথর পিঠে নিয়ে দুর্গম পাহাড়ি পথে ওঠানামা তাদের কাছে কঠিন কাজ নয়। ভুটিয়ানিদের এই জীবনযাত্রা দেখে নারীবাদী লেখিকা উচ্ছ্বসিত ও গর্বিত হয়ে ওঠেন, লেখিকা ভুটিয়ানিদের জীবনচর্যার প্রসঙ্গ তুলে তারা যে আর্থিকভাবে স্বাধীন ও উদরান্নের জন্য পুরুষদের প্রত্যাশী তা তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে লেখিকা তথাকথিত 'সবল' পুরুষদের বিদ্রূপ করে লিখেছেন, তারা বালকবালিকাদের - দলভুক্ত হয়ে শুধুমাত্র রাস্তায় পাথর বিছানোর কাজটুকু করে থাকে।
লেখিকা ভুটিয়ানিদের প্রতিদিনকার জীবনের পরিশ্রম, উপার্জনের আগ্রহ, সাহস ও সততা অত্যন্ত দরদের সাথে এক তুলে ধরেছেন। তিনি যে প্রতিকূলতা থেকে উঠে এসেছিলেন এত তার সাথে ভুটিয়ানিদের সংগ্রামের যে মিল তা থেকেই তিনি এক গর্ব প্রকাশ করেছেন। পাহাড়নিদের সাথে সমতলবাসীদের ডো বৈবাহিক সম্পর্ককে তিনি স্বাভাবিক বলে মনে করলেও অসৎ সমতলবাসী মহিলাদের সংস্পর্শে এসে তাদের সগুণ হারিয়ে ক যাচ্ছে এটাই তাঁর আক্ষেপ।
6. 'পাহাড়নি' এবং 'নীচেকা আদমি' কারা? তাদের সম্পর্কে লেখিকা যা বলেছেন তা বুঝিয়ে বলো। ২+৩=৫
উত্তর/ কারসিয়ং স্টেশনের কাছেই একটি স্থানে ভ্রমণে গিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া। সেখানকার স্ত্রীলোকেরা অর্থাৎ ভুটিয়ানিরা নিজেদের 'পাহাড়নি' বলে পরিচয় দেয়, অন্যদিকে নিম্নভূমির অর্থাৎ সমতল ভূমির তথাকথিত সভ্য মানুষদের বলে 'নীচেকা আদমি'।
'পাহাড়নি' অর্থাৎ ভুটিয়ানিরা অত্যন্ত পরিশ্রমী, সাহসী ও সত্যবাদী হয়। স্ত্রীলোক অর্থাৎ ভুটিয়ানিরা সাত গজ লম্বা কাপড় ঘাঘরার মতো করে পরে, কোমরে জড়ানো থাকে একখণ্ড কাপড়, গায়ে জ্যাকেট পরে, বিলিতি শাল দিয়ে মাথা ঢাকে। এরা অত্যন্ত শ্রমশীল। তাই অনায়াসেই এক মণ বোঝা নিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ওপরে-নীচে ওঠানামা করতে পারে। পরিশ্রমে এরা পুরুষের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। স্ত্রীলোকেরা পাথর বয়ে নিয়ে চলে। আর পুরুষেরা সে পাথর দিয়ে রাস্তা তৈরি করে।
পাহাড়নিরা অনেকটাই বদলে যাচ্ছে সমতলবাসী 'নীচেকা আদমি'র সংস্পর্শে এসে। এমনটাই অভিযোগ লেখিকার। যেমন বাজারের পয়সা অল্পস্বল্প চুরি করা, দুধে জল দেওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলি 'নীচেকা আদমি'র কাছ থেকেই এরা শিখেছে। যদিও পাশাপাশি থাকতে থাকতে এদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কও স্থাপিত হচ্ছে। আর একইভাবে অন্যান্য জাতির সঙ্গেও এখন ভুটিয়াদের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে।
7. 'যত দেখি, ততই দর্শন পিপাসা শতগুণ বাড়ে'। -আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটির আলোকে লেখিকার ব্যক্ষ্মি স্তত্বের কোন্ কোন্ দিকগুলি প্রকাশ পেয়েছে তা রচনাংশটি অবলম্বনে লেখো। ৫
উত্তরঃ লেখিকা বেগম রোকেয়া হিমালয় দর্শনের অভিপ্রায়ে কারসিয়ং-এ যান। লেখিকার রচনা পড়ে একদিকে যেমন তাঁর প্রকৃতি প্রেম ও সাহিত্যভাবনার পরিচয় পাই অন্যদিকে পাই তাঁর মননশীল ও কৌতূহলী শিক্ষিত মনে নারীপ্রগতির কথা, সর্বোপরি ঈশ্বর প্রেম ও অধ্যাত্মভাবনা। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা
পথে ছোট্ট রেলগাড়িতে যেতে যেতে তিনি প্রকৃতিকে যেভাবে প্রত্যক্ষ করেছিলেন তা থেকে লেখিকার প্রকৃতিপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর বর্ণনা গুণে প্রকৃতির বর্ণনায় 'ধরণির সীমন্ত্র "', 'বসুমতীর ঘন কেশপাশ', 'সুকোমল অঙ্গে সুবর্ণ মাখিয়া' উপমাগুলি অনবদ্য। রচনাংশটি ভ্রমণমূলক হলেও এর মধ্যে পার্বত্য সমাজ যেভাবে ধরা পড়েছে তা রচনাটির সাহিত্য গুণকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ করেছে। লেখিকা তাঁর এই রচনায় পার্বত্য জগৎ ও পারিপার্শ্বিক দিক যেমন 'মহিলা' পত্রিকা, কারবনিফেরাস যুগ, ঢেঁকি শাক, ভূতত্ত্ব ইত্যাদির যে প্রসঙ্গ এনেছেন তা থেকে তাঁর মননশীল ও কৌতূহলী শিক্ষিত মনের পরিচয় পাওয়া যায়।
পার্বত্য অঞ্চলে ভুটিয়ানি মহিলাদের জীবনসংগ্রামকে তুলে ধরে ও 'সবল' পুরুষদের প্রতি যেভাবে কটাক্ষ করেছেন, তাতে তাঁর নারীবাদী মানসিকতার পরিচয় মেলে। লেখিকা সৃষ্টির বিবিধ বৈচিত্র্যের মধ্যে যেভাবে স্রষ্টার সৃষ্টি মাহাত্ম্যের কথা তুলে ধরেছেন, তাতে তাঁর ঈশ্বর প্রেম ও অধ্যাত্মভাবনারও পরিচয় মেলে।
No comments:
Post a Comment