খেয়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | নবম শ্রেনীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 9th Bangla Kheya Question and Answers (MCQ, SAQ, DAQ) - Psycho Principal

Fresh Topics

Thursday, 10 April 2025

খেয়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | নবম শ্রেনীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 9th Bangla Kheya Question and Answers (MCQ, SAQ, DAQ)

 

খেয়া কবিতার 
প্রশ্ন উত্তর 




👉(আকাশে সাতটি তারা কবিতার প্রশ্ন উত্তর)


❐ কমবেশি ১৫টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও: 


1. 'খেয়া' কবিতাটি কার লেখা?

উত্তরঃ খেয়া' কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা।


2. রবীন্দ্রনাথের কোন্ কাব্যগ্রন্থে 'খেয়া কবিতাটি সংকলিত হয়েছে?

উত্তরঃ  রবীন্দ্রনাথের 'চৈতালী' কাব্যগ্রন্থের ১৩ সংখ্যক কবিতা হল 'খেয়া'।


3. 'খেয়া' কবিতাটিতে কয়টি গ্রামের কথা কবি বলেছেন?

উত্তরঃ  'খেয়া' কবিতাটিতে দুটি গ্রামের কথা কবি বলেছেন।


4. খেয়া নৌকা কোথায় পারাপার করে?

উত্তরঃ  খেয়া নৌকা নদীস্রোতে পারাপার করে।


5. খেয়া যাত্রীরা কোথায় পারাপার করে?

উত্তরঃ খেয়া নৌকার যাত্রীরা কেউ ঘর থেকে আসে, আবার কেউ ঘরে ফিরে যায়।


6. খেয়া নৌকার যাত্রীদের পারাপারের কারন কী?

উত্তরঃ  দুই গ্রামের মানুষদের মধ্যে জানাশোনা থাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা খেয়া নৌকায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে আনাগোনা করে।


7. নদীর দুই তীরে কী আছে?

উত্তরঃ 'খেয়া' কবিতায় নদীর দুই তীরে দুটি গ্রামের কথা বলা হয়েছে।


8.  'দুই তীরে দুই গ্রাম আছে জানাশোনা'-এখানে 'জানাশোনা' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ দুই তীরস্থ দুটি গ্রামের মধ্যে গড়ে ওঠা স্বাভাবিক মানবিক সম্পর্ককে ফুটিয়ে তুলতে কবি 'জানাশোনা' শব্দটিকে ব্যবহার করেছেন।


9.  'সকাল হইতে সন্ধ্যা করে আনাগোনা' এই 'আনাগোনা' কী ফুটিয়ে তোলে?

উত্তরঃ 'খেয়া' কবিতায় উল্লিখিত দুই গাঁয়ের মানুষের নানা প্রয়োজনে নিরন্তর আসা-যাওয়াকে বোঝাতে 'আনাগোনা' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।


10. সকাল থেকে সন্ধে কারা আনাগোনা করে?

উত্তরঃ 'খেয়া' কবিতায় দুটি গ্রামের গ্রামবাসীরা সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত আনাগোনা করে।


11. পৃথিবীতে কত দ্বন্দু, কত সর্বনাশ'-এই দ্বন্দ্ব ও সর্বনাশের কারণ কী?

উত্তরঃ  পৃথিবীর সমস্ত দ্বন্দু ও সর্বনাশের মূলে আছে ক্ষমতার লোভ ও স্বৈরাচারী বিকৃত মনোভাব।


12.  কে ইতিহাস গড়ে?

উত্তরঃ  পৃথিবীর নানা দ্বন্দু ও সর্বনাশ, রক্তপ্রবাহের ফেনিল স্রোতে নতুন নতুন ইতিহাসের জন্ম দেয়।


13.  'রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া ওঠে'-এখানে 'ফেনাইয়া' শব্দটি প্রয়োগের কারণ কী?

উত্তরঃ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি সংঘর্ষে রক্তক্ষয়ের মধ্যে দিয়ে জন্ম। নেয় নতুন শক্তি। কিন্তু তা বুদ্বুদের মতোই ক্ষণস্থায়ী। তাই কবি 'ফেনাইয়া' শব্দটির উল্লেখ করেছেন।


14.  'রক্তপ্রবাহের মাঝে' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ 'রক্তপ্রবাহের মাঝে' বলতে কবি হিংসা, বিদ্বেষ ও লোভের কারণে বিবদমান দুই সভ্যতার রক্তক্ষয়ী ইতিহাসকেও বুঝিয়েছেন।


15.  সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে। এখানে 'ফুটে আর টুটে' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ রাষ্ট্রশক্তি বা রাজশক্তির জয়-পরাজয় কিংবা থা উত্থানপতনের ক্ষণস্থায়িত্বকে ফুটিয়ে তুলতেই কবি 'ফুটে আর টুটে' শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন।


16.  'সোনার মুকুট' কীসের প্রতীক বলে তুমি মনে করো?

উত্তরঃ 'সোনার মুকুট' রাজশক্তি বা রাষ্ট্রনায়কের শিরোস্ত্রাণ স্বরূপ ক্ষমতা, অহংকার ও পদমর্যাদার প্রতীক বলে আমাদের মনে হয়।


17.  'সভ্যতার নব নব কত তৃয়া ক্ষুধা'- বলার অন কারণ কী লেখো।

উত্তরঃ নব নব সভ্যতার উন্মেষ ও বিকাশের ফলে নেওয়া নানান চাহিদা ও বাসনাকে প্রকাশ করতেই কবি এমন উপমার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।


18.  'উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুধা'-এখানে কোন্ পৌরাণিক প্রসঙ্গের কথা উল্লিখিত হয়েছে?

উত্তরঃ  পুরাণে বর্ণিত দেবাসুরের সমুদ্রমন্থনের ফলে প্রথমে বিষ এবং শেষে অমৃত ওঠার প্রসঙ্গটিই এখানে উল্লিখিত হয়েছে।


19.  কোথা থেকে 'হলাহল' বা 'সুধা'র জন্ম হয়?

উত্তরঃ  সভ্যতার উন্মেষ ও বিকাশের ফলে 'হলাহল' বা 'সুধা'র জন্ম হয়।


20.  'কেবা জানে নাম'-কাদের নামের কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ  'খেয়া' কবিতায় নদীর দুই তীরস্থ দুটি গ্রামের কথা এখানে বলা হয়েছে।


21.  'কেবা জানে নাম-তাদের নাম অজানা থাকার অন্তর্নিহিত কারণ কী বলে তোমার মনে হয়?

উত্তরঃ বিশ্বব্যাপী সভ্যতার ধ্বংস ও সৃষ্টির মাঝে সাধারণ মানুষের জীবনপ্রবাহের প্রতীক গ্রামদুটিকে নামে আবদ্ধ না করে কবি গতিময় জীবনের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন।


22.  'দোঁহা-পানে চেয়ে আছে'- 'দোঁহা' বলতে কাদের কথা বোঝানো হয়েছে?

উত্তরঃ 'খেয়া' কবিতায় 'দোঁহা' বলতে নদীর দু-পারের দুইখানি গ্রামের কথা বলা হয়েছে।


23. 'দোঁহা-পানে চেয়ে'-বলার অর্থ কী?

উত্তরঃ বিশ্বব্যাপী নানা পরিবর্তনের মাঝেও আবহমানকাল থেকে নিবিড় মানসিকতার বন্ধনে আবদ্ধ এই দুই গ্রামের এই চেয়ে থাকা আসলে জীবন-মৃত্যু অতিক্রমকারী অন্তহীন জীবনদৃষ্টি।


24. 'এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে'-এখানে 'নদীস্রোত' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ এখানে 'নদীস্রোত' বলতে কবি কালস্রোত বা সময়ের স্রোতকে বুঝিয়েছেন।


25. 'খেয়া চিরদিন চলে' বলতে কবি কী বলতে চেয়েছেন?

উত্তরঃ  'খেয়া চিরদিন চলে' বলতে কবি রবীন্দ্রনাথ অনন্তকাল ধরে বয়ে চলা মানবজীবনপ্রবাহকে বুঝিয়েছেন।


26.  ঘরে যাওয়া এবং আসার মধ্যে কবির কোন্ ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে?

উত্তরঃ ঘরে যাওয়া-আসার মধ্যে দিয়ে কবি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের অনন্ত প্রবহমানতার কথা বুঝিয়েছেন।


27.  'খেয়া' বলতে রবীন্দ্রনাথ কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ  কবি রবীন্দ্রনাথ 'খেয়া' বলতে জন্ম-মৃত্যুর মধ্যবর্তী জীবনপ্রবাহকে বুঝিয়েছেন।


❐ কমবেশি ৬০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও:


1.  'খেয়া নৌকা পারাপার করে নদীস্রোতে';- খেয়া নৌকা পারাপার করে কেন?

উত্তরঃ আলোচ্য উদ্ধৃতিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'খেয়া' কবিতা থেকে গৃহীত। নদীমাতৃক বাংলাদেশে মানুষের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম খেয়া নৌকা। কর্মসূত্রে বা অন্যান্য প্রয়োজনে মানুষকে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে যেতে হয়। তাই পল্লিগ্রামের জীবনচর্যার অন্যতম প্রধান যোগসূত্র হল খেয়া। নদীতীরস্থ দুটি গ্রামের মানুষের প্রাত্যহিক জীবন আবর্তিত হতে থাকে খেয়ার আনাগোনার মাধ্যমে। নদী পারাপারের সূত্রকে কেন্দ্র করে এই খেয়া নৌকাই দুই গ্রামের মানুষকে আবহমানকাল ধরে মানবিক আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে।


2. কেই যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে'-উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। অথবা, 'কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে'-উদ্ধৃতাংশে 'ঘর' কোন্ ব্যঞ্জনা ফুটিয়ে তোলে?

উত্তরঃ দার্শনিক কবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'খেয়া' কবিতায় নদী তীরবর্তী দুটি গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ছবি এঁকেছেন। নিত্য প্রয়োজনার্থে খেয়া নৌকার যাত্রীরা ঘর ছেড়ে গন্তব্যে পৌঁছায় এবং প্রয়োজন মিটিয়ে নিজের ঘরে ফেরে। কর্মব্যস্ত গ্রামীণ মানুষের জীবনে নিরন্তর এই আনাগোনা চলতেই থাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা। তবে এই বাস্তবের আড়ালে কবি বোঝাতে চেয়েছেন, মানুষ জন্মের মাধ্যমেই পৃথিবীর 'ঘরে' আসে আর মৃত্যুতে ফিরে যায় চিরকালের আবাসভূমিতে। কবি তার এই ঘরে যাওয়া-আসাকে কেন্দ্র করে জীবনের অনন্ত প্রবাহমানতাকে তুলে ধরেছেন।


3. 'দুই তীরে দুই গ্রাম আছে জানাশোনা- এই 'জানাশোনা'-র অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝিয়ে লেখো। অথবা গ্রাম দুটির পারস্পরিক সম্পর্ক কবিতায় কেমনভাবে ফুটে উঠেছে লেখো। ৩

উত্তরঃ 'খেয়া' কবিতায় আছে নদী-তীরবর্তী দুটি গ্রামের ছবি। তাদের মাঝখানে প্রবহমান নদী। আর এই নদীস্রোতে ভাসমান খেয়া নৌকা উভয়ের মধ্যে যোগাযোগের সূত্র। গ্রামের মানুষ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে খেয়াপথে নিত্য আনাগোনা ? করে। আবহমানকাল ধরে গ্রামীণ জীবনে এই আসা-যাওয়া দুই গ্রামের মধ্যে গড়ে তুলেছে এক নিবিড একাত্মতার বন্ধন। তাই • মানব-জীবনপ্রবাহের সরল স্বাভাবিকতার ছন্দ ফুটিয়ে তুলতে 'জানাশোনা'-র মতো সহজ আটপৌরে শব্দ প্রয়োগ করে কবি এই চিরন্তন সত্যকেই ফুটিয়ে তুলেছেন।


4.  'সকাল হইতে সন্ধ্যা করে আনাগোনা'-'আনাগোনা' শব্দটির অর্থ কী? কারা কেন আনাগোনা করে? ১+২=৩

উত্তরঃ  কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'খেয়া' কবিতা থেকে উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটিতে 'আনাগোনা' শব্দটির অর্থ হল আসা-যাওয়া। 'খেয়া' কবিতার প্রারম্ভিক চরণেই আছে গ্রামীণ জীবনের কর্মব্যস্ততার ছবি। নদীপ্রধান বাংলাদেশের নদী-তীরস্থ দুটি গ্রামের মানুষদের দৈনন্দিন জীবন আবর্তিত হয় খেয়ায় আসা-যাওয়ার মাধ্যমে। খেয়া নৌকাই হল, দুই পারের দুই গ্রামের মানুষের জীবনচর্যার প্রধান যোগসূত্র। তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে উভয় তীরস্থ মানুষ নদীস্রোতে খেয়া নৌকায় পারাপার করে চলে। আলোচ্য উদ্ধৃতাংশে কবি এ কথাই বলতে চেয়েছেন।


5. "পৃথিবীতে কত দ্বন্দু, কত সর্বনাশ'-উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।  অথবা, 'নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাস'-কীভাবে 'নূতন নূতন' ইতিহাস গড়ে ওঠে বলে কবি মনে করেছেন? অথবা, 'পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব, কত সর্বনাশ'-কবি-বর্ণিত এই দ্বন্দু ও সর্বনাশের কারণ কী বলে তুমি মনে করো? কবি এর ফল কী মনে করেন? ২+১=৩

উত্তরঃ 'খেয়া' কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ মানব ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করে এক ঐতিহাসিক-সত্য উপলব্ধি করেছেন। তাঁর মতে ক্ষমতা, অহংকার, লোভ, হিংসা ও বিদ্বেষের বশবর্তী রাষ্ট্রশক্তিগুলি বারংবার পারস্পরিক দ্বন্দু-সংঘাতে লিপ্ত হয়। তাই মানবসভ্যতার তথাকথিত ইতিহাস এই সংঘর্ষ ও সর্বনাশের উত্থানপতনের রক্তাক্ত ধারাবিবরণী মাত্র। কবি দ্বন্দু-সংঘাতে রঞ্জিত এহেন বর্বর-পাশবিক 'নূতন নূতন' ইতিহাসকে আবহমান মানব-জীবনপ্রবাহের নিরিখে সাময়িক এবং তাৎপর্যহীন বলে মনে করেছেন।


6.  'রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া ওঠে'-এখানে 'ফেনাইয়া' ২+১=৩ 'রক্তপ্রবাহ' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? শব্দটি ব্যবহারের কারণ কী? অথবা, 'রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া ওঠে'-পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে লেখো। ৩

উত্তরঃ 'খেয়া' কবিতায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে আজীবন সোচ্চার কবি ইতিহাসের রক্তাক্ত, বর্বর ও পাশবিক জয়-পরাজয়ের নগ্ন রূপটিকে তুলে ধরতে 'রক্তপ্রবাহ' শব্দটি ব্যবহার করেছেন। শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে পৃথিবীকে বারবার যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে আর তার ফলেই মানুষের রক্তে পঙ্কিল হয়েছে এই পৃথিবী।

ইতিহাসের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, অশুভ শক্তির উত্থানপতন বুদ্বুদের মতো ক্ষণস্থায়ী। এই সত্যটি বোঝাতেই কবি 'ফেনাইয়া' শব্দটি ব্যবহার করেছেন।


7.  'সোনার মুকুট' শব্দবন্ধের অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনাটি ব্যাখ্যা করো। ৩

উত্তরঃ  'সোনার মুকুট' কথাটির আভিধানিক অর্থ হল স্বর্ণনির্মিত রাজশিরোস্ত্রাণ। সাধারণত রাজতন্ত্রের প্রতীক হিসেবেই 'সোনার মুকুট' শব্দবন্ধের প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু 'খেয়া' কবিতায় কবি ব্যাপক অর্থে এই প্রতীকের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। ক্ষমতালিপ্স মানুষের লোভ-লালসা ও মদমত্ততার প্রতীক হল 'সোনার মুকুট'। তাই শুধু রাজতন্ত্রে নয়, অতীত বা বর্তমানে যে যখন ক্ষমতার শীর্ষে, সে তখন স্বর্ণমুকুট অধিকার করেছে। আবার পরাজিত বা ক্ষমতাচ্যুত হওয়া মানেই সোনার মুকুটের ভঙ্গুর বা চূর্ণ-বিচূর্ণ অবস্থা।


8. সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে।-'ফুটে আর টুটে' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? ৩

উত্তরঃ  'খেয়া' কবিতায় কবি 'সোনার মুকুট'কে ক্ষমতালিপ্স মানুষের দম্ভ ও মদমত্ততার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ইতিহাসের পথে দৃষ্টি সুদূরপ্রসারিত করলে দেখা যায়, রাজশক্তি কিংবা রাষ্ট্রশক্তির উত্থানপতন বা জয়-পরাজয়ের স্থায়িত্ব সাময়িক। আজ যে বিজয়ীর অহংকারে বিজিতকে পর্যুদস্ত করে, আগামীকাল সে নিজেই সর্বস্ব হারিয়ে বিজিতের স্থান দখল করে। তাই মানব-ইতিহাসকে রক্তাক্ত করা ছাড়া, এই জয়-পরাজয়ের কোনো স্থায়ী মূল্য নেই। এভাবেই সোনার মুকুটের শোভা পাওয়া ('ফুটে') কিংবা ভেঙে পড়া (টুটে') আসলে বহমান ইতিহাসে ক্ষণস্থায়িত্বের অনিবার্যতাকে বাণীরূপ দেয়।


9. 'সভ্যতার নব নব কত তৃষ্ণা ক্ষুধা—' এমন কথা বলার কারণ ব্যাখ্যা করো। অথবা, 'নব নব কত তৃয়া ক্ষুধা-' বলার তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। অথবা, 'তৃয়া' ও 'ক্ষুধা'-র সঙ্গে সত্যতার সম্পর্ক কী? এরা কীভাবে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে চলে। ২+১=৩

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ 'খেয়া' কবিতায় মানব-ইতিহাসের সুদীর্ঘ প্রেক্ষাপটে উত্থানপতন, ধ্বংস ও পুনর্নির্মাণের বিপরীতে অন্তহীন জীবনধারার বহমানতাকে লক্ষ করেছেন। এই বিবর্তমান ভাঙা-গড়ার পরিক্রমায় বিভিন্ন সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছে। কিন্তু এইসব নতুন নতুন সভ্যতার উন্মেষ ও বিকাশের ফলে নানান বিচিত্র ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা-চাহিদা ও প্রবণতার সৃজন হয়েছে পৃথিবীর বুকে। বিভিন্ন সভ্যতা তার পূর্বের অপ্রাপ্তি ও অপূর্ণতাকে পূরণের পাশাপাশি তেমনই নিজের 'তৃয়া' ও 'ক্ষুধা' অর্থাৎ বাসনা আর চাহিদা মেটানোর জন্যও প্রয়াসী হয়েছে।

 এভাবেই নব নব তৃষ্ণা ও ক্ষুধার অনুপ্রেরণায় মানবসভ্যতা তার অগ্রগমনের বৈচিত্র্যপূর্ণ উপাদান সংগ্রহ করে ইতিহাসের পথে ক্রম-অগ্রসর হয়েছে।


10.  উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুধা'— 'হলাহল' ও 'সুধা' কী? এ প্রসঙ্গে এমন মন্তব্যের কারণ কী বলে তোমার মনে হয়? ১+২=৩ অথবা, 'উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুধা'- সভ্যতা প্রসঙ্গে কবি এমন বিপরীতধর্মী দুটি শব্দের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন কেন? অথবা, 'উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুধা'-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। ৩

উত্তরঃ পুরাণে বর্ণিত আছে দেবাসুর কর্তৃক সমুদ্রমন্থনকালে প্রথমে তীব্র বিষ উত্থিত হয়েছিল এবং শেষে পাওয়া গিয়েছিল। অমৃত। কবি দেখেছেন মানবসভ্যতার ইতিহাসেও এই বিপরীত বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন। সেখানে সংঘর্ষ-সর্বনাশের রক্তাক্ত 'হলাহল' যেমন আছে, তেমনই তা আবার মানবজীবনের অন্তর্গত অপূর্ণতা পূরণের শুভ মানবিক প্রয়াসের সুধারসেও পরিপূর্ণ। এই বৈপরীত্য থেকে যেন সভ্যতার পরিত্রাণ নেই; এ কথা বোঝাতেই 'খেয়া' কবিতায় কবি এমন উপমা ব্যবহার করেছেন।


11. 'দোঁহা-পানে চেয়ে আছে দুইখানি গ্রাম।'-'দোঁহা-পানে' কথাটির অর্থ কী? তাদের পরস্পরের দিকে চেয়ে থাকার কারণ কী বলে তোমার মনে হয়? ১+২=৩

উত্তরঃ  'খেয়া' কবিতায় নদী-তীরবর্তী গ্রাম দুটি যেন পরস্পরের দিকে চেয়ে আছে; এই ভাবসত্য ফুটিয়ে তুলতে কবি 'দোঁহা-পানে' কথাটি ব্যবহার করেছেন। গ্রাম দুটি অন্তরঙ্গ মানবিকতার বন্ধনে আবদ্ধ। আবহমান কাল ধরে মানব-জীবনপ্রবাহের মূল সুর তাদের শিরা-ধমনির মধ্যে স্পন্দিত হয়। সভ্যতার উত্থানপতনকে অস্বীকার করে, তাদের এই অপলক চেয়ে থাকা জীবন-মৃত্যু অতিক্রমকারী গভীর জীবনদৃষ্টির প্রতীক।


❐ কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও:


1. 'খেয়া' কবিতাটিতে নদী-তীরবর্তী জীবনের পরিচয় পাও তা আলোচনা করো। 'অথবা, 'খেয়া' কবিতাটিতে সহজ-সরল গ্রামীণ জীবনের যে আশ্চর্য ছবি আছে, তা নিজের ভাষায় লেখো। ৫

উত্তরঃ  'খেয়া' কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের 'চৈতালী' কাব্যগ্রন্থের তেরো সংখ্যক কবিতা। কবি জমিদারির কাজ দেখাশোনার জন্য মাঝে মাঝেই বোটে করে নদীবক্ষে ঘুরে বেড়াতেন আর তখনই ছোটো ছোটো ছবি ছাপ ফেলত তাঁর অন্তরে। 'খেয়া' কবিতায় তেমনি এক সহজ সরল গ্রামীণ জীবনের ছবি কবির অন্তরে ছাপ ফেলে গেছে। ছবিটি এই রকম- নিস্তরঙ্গ নদীবক্ষে ছোটো ছোটো খেয়া মন্থর গতিতে আনাগোনা করছে। দুই তীরে দুটি গ্রাম, সেখানে ব্যস্ততার লেশমাত্র নেই। অত্যন্ত ধীর লয়ে বয়ে চলেছে তাদের জীবন। দুই গ্রামের মানুষ খেয়ায় যাত্রী হয়ে যাতায়াত করে। সেই যাত্রার চঞ্চলতা না থাকলেও আছে এক ছন্দময়তা। পারাপারের সূত্র ধরে খেয়া নৌকা আবহমান কাল ধরে দুটি গ্রামের মানুষকে আত্মীয়তার নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে। নাম না জেনেও গ্রাম দুটি অন্তহীন জীবন প্রবাহের। প্রতিভূরূপে সভ্যতার উত্থানপতনকে সরিয়ে রেখে প্রবহমানতায়। মূল সুরকে ফুটিয়ে তুলেছে। তাই কবি দেখেছেন গ্রাম দুটি পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবেই 'খেয়া' কবিতায় নদী তীরবর্তী দুটি গ্রামের মাঝে নদীর স্রোতে ভাসমান 'খেয়ার' মতোই জীবনের শ্বাশ্বত বহমানতা মূর্ত হয়ে উঠেছে।


2.  'খেয়া' কবিতার অন্তর্নিহিত ভাবসত্যটি আলোচনা করো। 'অথবা, 'খেয়া' কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথের দার্শনিক মনের যে গভীর ভাবনা প্রকাশিত হয়েছে, তা কবিতা অনুসরণে লেখো। ৫

উত্তরঃ জমিদারি কাজকর্ম দেখাশোনার তাগিদে নদীবক্ষে যাত্রাকালে রবীন্দ্রনাথ প্রত্যক্ষ করেছেন নদী-তীরবর্তী গ্রামগুলির দিয়ে শান্ত সমাহিত রূপ এবং সেখানকার মানুষের সরল জীবনযাপন। কবি নদী-তীরবর্তী দুই গ্রামের একমাত্র যোগসূত্র খেয়া পারপার প্রত্যক্ষ করেছেন। কবির কাছে এই খেয়া শুধু পারপারের খেয়া রূপে প্রতিভাত হয়নি। তিনি এই খেয়ার রূপকে মানুষে জীবনের বহমানতাকে প্রকাশ করেছেন। নদীর প্রবাহকে তিনি বহমান সময় বা কালপ্রবাহরূপে তুলে ধরেছেন। আর খেয়া নৌকাকে মানবপ্রবাহের সাথে তুলনা করে বোঝাতে চেয়েছেন কালের স্রোতে মানবপ্রবাহ চিরবহমান। কালের পর কাল, যুগের পর যুগ এভাবেই পৃথিবীর বুকে বয়ে চলে জীবনপ্রবাহ, কিন্তু এরই মাঝে পৃথিবীতে নানান সভ্যতার উত্থানপতন ঘটেছে। রক্তাক্ত হয়েছে পৃথিবী। ক্ষমতার দম্ভে মানুষ হয়ে উঠেছে স্বৈরাচারী কিন্তু তাও ক্ষণস্থায়ী। কত রাজছত্র ভেঙে পড়েছে, কত রণডঙ্কার শব্দ স্তিমিত হয়েছে। সভ্য মানুষের তীব্র তৃয়ায় কখনও অমৃত কখনও বা গরল উঠে এসেছে। কিন্তু এই গ্রামীণ জীবন, এই খেয়া পারাপার, এই শান্ত সমাহিত জীবনযাপন চিরপ্রবাহমান নদীর স্রোতের মতোই।


3. 'খেয়া' কবিতাটির নামকরণ কতটা যুক্তিসংগত হয়েছে বলে তোমার মনে হয় লেখো। ৫

উত্তরঃ  'খেয়া' কবিতাটির বিষয় অত্যন্ত সাধারণ। একটি নদী, নদীবক্ষে বহমান নৌকা, নদী-তীরবর্তী দুটি গ্রাম ও গ্রামীণ জীবনযাত্রা-এই হল কবিতার বিষয়। এই ছবিটুকু দেখতে দেখতে কবি মানবজীবনের চিরন্তন প্রবহমানতার বিপরীতে নাগরিক সভ্যতার রক্তাক্ত নগ্ন ইতিহাসকে মূর্ত হতে দেখেছেন। তাঁর কাছে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়েছে এই সভ্যতার দ্বন্দু-রেষারেষি ও উত্থান পতন ফেনিল বুদ্বুদের মতো উপরিস্তরের সত্য। ইতিহাসের এই ভাঙাগড়া গ্রামীণ জীবনযাত্রার মৌলিক বনেদকে স্পর্শ করতে পারে না। তা যুগযুগান্তর ধরে বহমান ও অপরিবর্তনীয়। তবে লক্ষণীয়, কবিতাটি এখানেই শেষ হয় না। কবিতার শেষে কবি ধ্রুবপদের মতো আবারও উচ্চারণ করেন সেই অত্যন্ত সাধারণ অথচ গভীর কথা-"এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে/কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে।" কথাটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে কবি যেন অন্য এক দার্শনিক বোধের স্তরে আমাদের পৌঁছে দিলেন, এই খেয়াই আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যুতে এবং পুনরায় মৃত্যু থেকে জন্মের দিকে অবিরাম নিয়ে চলেছে। এভাবেই চক্রাকার নদীর জলস্রোতের মতো খেয়ার যাত্রী হয়ে মানবপ্রবাহ বয়ে চলেছে পৃথিবীর পথে। আর এই বয়ে চলার কাজটি অনন্তকাল ধরে 'খেয়া' পারাপারের মাধ্যমে ঘটে চলেছে। এই মূল ভাবনাটি প্রকাশিত হয়েছে বলেই 'খেয়া' নামকরণটি সার্থক ও তাৎপর্যবাহী বলেই আমরা মনে করি।


4.  'কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে'-'কেহ' বলতে কাদের কথা বোঝানো হয়েছে? 'ঘর' কথাটির মধ্য দিয়ে কবি কী বুঝিয়েছেন? বিষয়টি বুঝিয়ে বলো। ১+৪=৫

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'খেয়া' কবিতায় 'কেহ' বলতে নৌকায় পারাপারকারী খেয়াযাত্রী বা গভীর অর্থে জীবনপ্রবাহে। ভাসমান মানুষকে বুঝিয়েছেন।

 'ঘর' কথাটি শুধুই আক্ষরিক অর্থে কবি ব্যবহার করেননি। যদিও সাধারণভাবে মনে হয় পঙ্ক্তিটির অর্থ খেয়া নৌকো বেয়ে কেউ তার নিজের ঘরে ফিরে যায় আবার কেউ বা নিজ ঘর থেকে আপন গন্তব্যে যোগ দিতে আসে। কিন্তু এই সাধারণ অর্থটুকু ছাড়াও পঙ্ক্তিটির একটি স্বতন্ত্র ব্যঞ্জনা রয়েছে। এখানে নদীর দুটি তীর হল জন্ম ও মৃত্যু। আর নদীস্রোতে ভাসমান খেয়া হল মানবজীবন। মানুষের জীবন এই জন্ম-মৃত্যুর মালায় গাঁথা। জন্মের মধ্যে দিয়ে সে এই পৃথিবীর 'ঘরে' আসে, আবার মৃত্যুর মাধ্যমে চিরকালের আবাসভূমিতে অর্থাৎ 'ঘর'-এ ফিরে যায়। এভাবেই ঘরে ফেরা এবং ঘর থেকে যাওয়া চক্রাকার প্রক্রিয়ায় এক অবিরাম যাত্রার দ্যোতক হয়ে ওঠে। মানবজীবনের এই আসা-যাওয়া অনন্তকাল ধরে পৃথিবীর বুকে ঘটে চলেছে। তাই কবি বলেছেন, "এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে"। ঔপনিষদিক কবি ঘরে আসা-যাওয়াকে এইভাবে জীবনের অনন্ত প্রবহমানতার প্রতীক হিসেবে মূর্ত করে তুলেছেন।


5. পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব, কত সর্বনাশ,/ নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাস-' এই দ্বন্দু ও সর্বনাশের কারণ কী এ বলে তুমি মনে করো? নতুন নতুন ইতিহাসের সঙ্গে খেয়া ই নৌকার সম্পর্ক উদ্‌ঘাটন করো ৩+২=৫ অথবা, কবি রবীন্দ্রনাথের 'খেয়া' কবিতায় মানব-ইতিহাসের যে নিগূঢ় ইঙ্গিত প্রকাশিত হয়েছে তার স্বরূপ আলোচনা করো।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ বরাবরই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরোধী ও ছিলেন। তিনি তাঁর 'খেয়া' কবিতায় মানব ইতিহাসের যে বু উত্থানপতন এবং তার মধ্যেকার নিহিত স্বরূপ ব্যস্ত করেছেন। নদীবক্ষে যাত্রাকালে তীরবর্তী দুই গ্রামের সম্পর্ককে দেখে আ তিনি তথাকথিত আধুনিক সভ্যতার সীমাবদ্ধতা অনুভব করেন। মে পৃথিবীর ইতিহাসের পাতা উলটালে দেখা যায় এই দ্বন্দ্ব ও সৃতি সর্বনাশের মূলে আছে লোভ এবং ক্ষমতার মদমত্ততা। স্বৈরাচারী শক্তি তার ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠার জন্য মাঝে মাঝেই নরঘাতী হিংসায় মেতে উঠেছে আর তাতেই পৃথিবীর মাটি বারে বারে মানুষের রক্তে পঙ্কিল হয়ে উঠেছে। তবে ইতিহাস এটাও বলে যে ক্ষমতার এই স্থায়িত্ব খুবই ক্ষণস্থায়ী।

 কবি এই কবিতায় দ্বন্দু সংঘাতে দীর্ণ নতুন ইতিহাসকে চিরকালীন মানবপ্রবাহের নিরিখে বিচার করেছেন। নতুন নতুন ইতিহাস গড়ে ওঠে মানুষের রক্তক্ষয়ী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। সেখানে বহু সম্রাটের উত্থান ও পতন লক্ষ করা যায়। সভ্যতার প্রতিনিয়ত চাহিদা পরিপূর্ণ করতে কখনও হলাহল, কখনও অমৃত উঠে আসে। কিন্তু সভ্যতার এই ইতিহাসকে দূরে রেখে খেয়া নৌকা আপন গতিতে বয়ে চলে। কেননা এই চলমানতাই শ্বাশ্বত নদীর মতো চির প্রবাহমান।


6. 'সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে'-'ফুটে' এবং 'টুটে' কথা-দুটির অর্থ কবিতাটির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করো। ৫

উত্তরঃ  'খেয়া' কবিতায় রবীন্দ্রনাথ 'সোনার মুকুট' এর রূপকে ক্ষমতালোভী ও দাম্ভিক রাজশক্তির আস্ফালনকে সূচিত করেছেন। পৃথিবীর সুদীর্ঘ ইতিহাসের দিকে লক্ষ রাখলে দেখা যায় এই সোনার মুকুট কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী নয়। আর তাই মুকুটের স্থায়িত্ব প্রসঙ্গেই কবি 'ফুটে' আর 'টুটে' শব্দবন্ধটির প্রয়োগ করেছেন। 'ফুটে' শব্দটির অর্থ বিকশিত হওয়া আর 'টুটে' শব্দটির অর্থ হল বিচ্যুত হওয়া বা ভেঙে পড়া অর্থাৎ সোনার মুকুটের শোভা পাওয়া আর ভেঙে পড়ার ঐতিহাসিক সত্যটি চিরন্তন। এককথায় কোনো রাজশক্তিই অজেয় নয়। পৃথিবীতে রাষ্ট্রশক্তির উত্থানপতন ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। রাজশক্তি প্রতিষ্ঠিত হয় যুদ্ধবিগ্রহ ও রক্তপাতের মধ্যে দিয়ে, গড়ে ওঠে স্মারক। বিজিতের কণ্ঠরোধ করে বিজয়ীর আস্ফালন- এ তো প্রতিনিয়ত ঘটে চলে। আর এভাবেই যুগে যুগে নতুন নতুন ইতিহাস রচিত হয়। এসব ইতিহাসের মাঝেও মানবসভ্যতার আর-এক ইতিহাস বিদ্যমান। যে ইতিহাস প্রতিনিয়ত রচিত হয়ে চলেছে বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে। শান্ত সমাহিত প্রতিদিনকার চলমান জীবন সেই ইতিহাস রচনা করে চলে রণদামামা ও রণহুংকার ছাড়াই। তা হল শাশ্বত জীবনপ্রবাহ, যাকে সোনার মুকুট বিন্দুমাত্র স্পর্শ করতে পারে না।


7.  'সভ্যতার নব নব কত তৃয়া ক্ষুধা-/উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুধা!-মানবসভ্যতার সঙ্গে 'তৃয়া' ও 'ক্ষুধা'-র সম্পর্ক কী? 'হলাহল' ও 'সুধা' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? ৩+২ = ৫

উত্তরঃ রাষ্ট্রশক্তি বা রাজশক্তির উত্থানপতনের অভিঘাতেই আলোড়িত হয় মানুষের ইতিহাসের যাত্রাপথ। এই উত্থান পতনের মধ্যে দিয়েই গড়ে ওঠে নতুন নতুন সভ্যতা। এইসব সভ্যতার সৃষ্টি ও বিকাশের ফলে পৃথিবীতে তৈরি হয় নানান আকাঙ্ক্ষা ও - চাহিদা। এইসব সভ্যতা একদিকে অপ্রাপ্তিকে পূর্ণতা দান করতে সচেষ্ট হয়, অপরদিকে নিজস্ব তৃয়া ও ক্ষুধার চাহিদাপূরণের জন্য সর্বদা প্রয়াসী হয়। এই তাগিদই মানুষকে আরও আধুনিক  সভ্যতার দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং সেকারণে সীমাহীন লোভ ও মদমত্ততা মানুষকে সর্বনাশের পথে পা বাড়াতে অনুপ্রাণিত করছে।

 'হলাহল' শব্দটির অর্থ বিষ আর 'সুধা' শব্দটির অর্থ অমৃত। - সভ্য মানুষের সীমাহীন লোভ প্রসঙ্গে কবি তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই  পৌরাণিক প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছেন। পুরাণে বর্ণিত দেবতা - ও অসুরদের সমুদ্রমন্থনের ফলে অমৃত ও বিষ দুইই উঠেছিল।

মানবসভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসেও কবি এই পরস্পরবিরোধী পরিণাম লক্ষ করেছেন। একদিকে যেমন আছে সভ্যতাদর্পীদের সংঘর্ষ রূপ হলাহল, অন্যদিকে অপ্রাপ্তি পূরণের মানবিক প্রয়াস যা সুধার শামিল। সভ্যতার অগ্রগমনের ক্ষেত্রে এই বিপরীত চিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে কবি হলাহল ও সুধার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন।


8.  'শুধু হেথা দুই তীরে, কেবা জানে নাম-এখানে কোন্ প্রসঙ্গে 'শুধু হেথা' শব্দ দুটির ব্যবহার করা হয়েছে? নাম জানার প্রয়োজন নেই কেন? ২+৩=৫ অথবা, 'কেবা জানে নাম'-তাদের নাম না জানিয়ে কবি কোন্ অন্তর্নিহিত অভীষ্ট সিদ্ধ করতে চেয়েছেন বলে তুমি মনে করো। ৫

উত্তরঃ  রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'খেয়া' কবিতায় মানব ইতিহাসের উত্থানপতন, জয়-পরাজয়ের মাঝেও প্রত্যক্ষ করেছেন নদী-তীরবর্তী দুটি গ্রামের মানুষের অন্তহীন জীবনপ্রবাহ। গ্রাম দুটির শাশ্বত অস্তিত্ব প্রকাশার্থে কবি 'শুধু হেথা' শব্দ দুটি ব্যবহার করেছেন।

 'খেয়া' কবিতায় রবীন্দ্রনাথ দুই তীরের দুই গ্রামের যে দৃশ্যপট এঁকেছেন যা দেখে মনে নদীস্রোতে ভেসে বেড়ানো খেয়াযাত্রী গ্রাম দুটি দেখেছেন। তাদের মধ্যে খেয়ার মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে। তবে তাদের পরিচয় জানা প যায়নি। আসলে কবি সভ্যতার ধ্বংস ও সৃষ্টিকে দূরে সরিয়ে ক রেখে অন্তহীন জীবনপ্রবাহের প্রতীক হিসেবে গ্রাম দুটিকে দ তুলে ধরেছেন, শুধুমাত্র নামের মধ্যে আটকে না থেকে।হ

কবি এমনভাবে দৃশ্যপটটি রচনা করেছেন যেন পড়লে অ মনে হয়, নদীস্রোতে ধাবমান খেয়াযাত্রী গ্রাম দুটি দেখেন। তাদের মধ্যে খেয়ায় মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ে। তবে তাদের ফ পরিচয় অজানা থেকে যায়। কিন্তু কবি আসলে সভ্যতার ধ্বংস ও পুনর্নির্মাণের সাময়িক স্থায়িত্বকে অতিক্রম করে সাধারণ মানুষের অন্তহীন জীবনপ্রবাহের প্রতীক হিসেবে গ্রাম দুটিকে তুলে ধরেন। তাই নামের স্থানিক সংকীর্ণতায় আবদ্ধ না করে কবি এদের চিরায়ত জীবনধারার প্রতিভূ করে তোলেন।


9.  'শুধু হেথা দুই তীরে, কেবা জানে নাম,/দোঁহা-পানে চেয়ে আছে দুইখানি গ্রাম।'-উদ্ধৃতাংশের আলোকে গ্রাম দুটির পরস্পরের দিকে চেয়ে থাকার কারণ ব্যাখ্যা করো। অথবা, গ্রাম দুটির নাম না জানার কারণ কী বলে তোমার মনে হয়? 'দোঁহা-পানে চেয়ে' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?২ + ৩ = ৫

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের 'খেয়া' কবিতাতে একদিকে যেমন আছে সভ্যতার উত্থানপতনের সংঘর্ষজনিত কারণ, অপরদিকে আছে চলমান জীবনের সহজসরল স্বাভাবিকতার মোড়কে দুটি গ্রামের ছবি। কবিতাটির অবতারণার ধরন একটু অন্য আঙ্গিকে করা হয়েছে। এক্ষেত্রে একজন খেয়াযাত্রী যেন নদীতে ভাসমান অবস্থায় গ্রাম দুটি দেখেন। দুটি গ্রামের সংযোগ একমাত্র এই খেয়া যেখানে নিত্য বহু মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ে, কিন্তু গ্রাম দুটির পরিচয় জানা যায় না। আসলে কবি সচেতনভাবেই এদের নামের বাঁধনে বাঁধতে চায়নি। কেননা এরা রাষ্ট্র বা সভ্যতার জয়-পরাজয়কে অতিক্রম করে শাশ্বত অস্তিত্বের প্রতীকী ব্যঞ্জনাকে ফুটিয়ে তোলে। চিরবহমান জীবন ধারণাকে কোনোদিন গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রাখা যায়নি। তাই অজস্র জনপদের প্রতিকস্বরূপ এই গ্রাম দুটি অনন্ত জীবনপ্রবাহের প্রতীক।


10. 'এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে'-'এই খেয়া' বলতে কী বোঝানো হয়েছে? 'চিরদিন চলে নদীস্রোতে' বলার তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। ১+৪ = ৫ অথবা, 'এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে'-উদ্ধৃতাংশটির মাধ্যমে কবি জীবনের প্রবহমানতার যে গভীর ব্যঞ্জনা ফুটিয়ে তুলেছেন, তার স্বরূপ বিশ্লেষণ করো।  অথবা, 'খেয়া' কবিতাটির রূপকার্থ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটিতে 'এই খেয়া' বলতে কবি খেয়া নৌকার রূপকে চিরন্তন মানবপ্রবাহকে বুঝিয়েছেন।

কবি রবীন্দ্রনাথ 'খেয়া' কবিতার মাধ্যমে মানুষের জীবনের যে অন্তহীন প্রবাহ তা বিভিন্ন রূপকের সাহায্যে তুলে ধরেছেন। পৃথিবীব্যাপী নানা পরিবর্তনের মাঝেও এই মানবপ্রবাহ না 'টুটে', বরং 'ফুটে' থাকে। নদীবক্ষে যাবার সময় কবি দেখেছেন নদীর দুই তীরের মানুষের যোগসূত্র খেয়া নৌকায় পারাপারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এই রূপকের আড়ালেই কবি উভয় গ্রামের মানুষের আবহমানকাল ধরে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ থাকার কথা ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মনে হয়েছে পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত দ্বন্দু ও সংঘর্ষের ফলে নতুন নতুন সভ্যতার জন্ম হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ইতিহাস। সেই ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে কোনো রাজশক্তির উত্থান হয়েছে বা ঘটেছে পতন। কিংবা আধুনিক সভ্যতাদর্শী মানুষ তার প্রয়োজনে নানান জিনিস আবিষ্কার করে চলেছে প্রতিনিয়ত। যার ফল কখনো-কখনো বিষময় হয়ে উঠে মানুষের ক্ষতি করছে। কিন্তু এই ইতিহাস সাময়িক। প্রকৃত ইতিহাস রচিত হয় মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের ছন্দময়তাকে কেন্দ্র করে। কবি খেয়া কবিতায় রূপকের অন্তরালে এই সত্যকেই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।

No comments:

Post a Comment