👉(হিমালয় দর্শন' প্রশ্ন উত্তর )
❐ কমবেশি ১৫টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :
1. 'নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধটির রচয়িতা কে এবং কত খ্রিস্টাব্দে এটি প্রকাশিত হয়?
উত্তরঃ 'নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধটির, রচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলী। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে এটি বেঙ্গল পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়।
2. 'নব নব সৃষ্টি' কথাটির অর্থ কী?
উত্তরঃ 'নব নব সৃষ্টি' বলতে লেখক নতুন নতুন নির্মাণ বা সৃজনের কথা বলেছেন।
3. লেখক সংস্কৃত ভাষাকে আত্মনির্ভরশীল ভাষা বলেছেন কেন?
উত্তরঃ নতুন বিষয় বোঝাতে নতুন শব্দের প্রয়োজন হলে সংস্কৃত ধার করার পরিবর্তে নিজ শব্দভাণ্ডারে তার খোঁজ করে।
4. সংস্কৃতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষা বলতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয় কেন?
উত্তরঃ সংস্কৃত বিদেশি শব্দ গ্রহণ করলেও নতুন শব্দ সৃষ্টির ক্ষেত্রে নিজস্ব শব্দভান্ডারের উপর বেশি নির্ভর করে।
5. প্রাচীন যুগের কয়েকটি আত্মনির্ভরশীল ভাষার নাম বলো।
উত্তরঃ প্রাচীন যুগের কয়েকটি আত্মনির্ভরশীল ভাষা হল হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা।
6. আমরা কোন্ সময়ে আরবি-ফারসি থেকে এর প্রচুর শব্দ গ্রহণ করেছি?
উত্তরঃ আমরা পাঠান-মোগল যুগে আরবি-ফারসি থেকে প্রচুর শব্দ গ্রহণ করেছি।
7. কেন প্রচুর ইউরোপীয় শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে?
উত্তরঃ শিক্ষার মাধ্যমরূপে ইংরেজি ভাষার পরিবর্তে বাংলা ভাষাকে গ্রহণ করায় প্রচুর ইউরোপীয় শব্দ বাংলায় প্রবেশ করেছে।
8. 'নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধে লেখক রান্নাঘর থেকে কী তাড়ানো মুশকিল বলে মনে করেছেন?
উত্তরঃ 'নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী রান্নাঘর থেকে আলু-কপি তাড়ানো মুশকিল বলে মনে করেছেন।
9. 'নূতন আমদানিও বন্ধ করা যাবে না।'-কী আমদানি বন্ধ করা যাবে না?
উত্তরঃ বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দ আমদানি বন্ধ করা যাবে না।
10. বর্তমান যুগের কোন্ ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয় বলে লেখক মনে করেন?
উত্তরঃ বর্তমান যুগের ইংরেজি ও বাংলা ভাষাকে লেখক আত্মনির্ভরশীল নয় বলে মনে করেন।
11. 'বহু সাহিত্যিক উঠে পড়ে লেগেছেন',-বহু সাহিত্যিক কেন উঠে পড়ে লেগেছেন?
উত্তরঃ বহু সাহিত্যিক হিন্দি থেকে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি শব্দ তাড়াবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন।
12. 'বলা বাহুল্য, রবীন্দ্রনাথ স্বচ্ছন্দে লিখেছেন'- রবীন্দ্রনাথ স্বচ্ছন্দে কী লিখেছেন?
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ স্বচ্ছন্দে লিখেছেন-"আৰু দিয়ে, ইজ্জৎ দিয়ে, ইমান দিয়ে, বুকের রক্ত দিয়ে।"
13. 'বলা বাহুল্য, রবীন্দ্রনাথ স্বচ্ছন্দে লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথ স্বচ্ছন্দে কী লিখেছেন?
উত্তরঃ 'ইনকিলাব' শব্দটি বাংলায় কাজী নজরুল ইসলাম প্রথম ব্যবহার করেছেন।
14. 'শহিদ' শব্দ বাংলায় কে ঢুকিয়েছেন?
উত্তরঃ 'শহিদ' শব্দ বাংলায় কাজী নজরুল ইসলাম ঢুকিয়েছেন।
15. বিদ্যাসাগর আরবি-ফারসি কোথায় ব্যবহার করতেন?
উত্তরঃ বিদ্যাসাগর বেনামিতে অসাধু রচনায় আরবি-ফারসি ব্যবহার করতেন।
16. আরবি-ফারসি শব্দের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করাকে কে 'আহাম্মুখী' বলে মনে করতেন?
উত্তরঃ পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আরবি-ফারসি শব্দের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণাকে 'আহাম্মুখী' মনে করতেন।
17. 'আলাল' ও 'হুতোম' কী?
উত্তরঃ 'টেকচাঁদ' ছদ্মনামে প্যারীচাঁদ মিত্রের গদ্যগ্রন্থ 'আলালের ঘরের দুলাল', 'আলাল' নামে এবং 'হুতোম প্যাঁচা' ছদ্মনামে কালীপ্রসন্ন সিংহের লেখা 'হুতোম প্যাঁচার নকশা' 'হুতোম' নামে পরিচিত।
18. 'তার উল্লেখ এস্থলে নিষ্প্রয়োজন'-কাদের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ 'নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধে 'আলাল' ও 'হুতোম'-এর ভাষার উল্লেখ সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে।
19. হিন্দি সাহিত্যের বঙ্কিম কাকে বলা হয়?
উত্তরঃ প্রেমচন্দ্রকে হিন্দি সাহিত্যের বঙ্কিমচন্দ্র বলা হয়।
20. হিন্দিতে আরবি-ফারসি কে বিস্তর ব্যবহার করেছেন?
উত্তরঃ প্রেমচন্দ্র হিন্দিতে আরবি-ফারসি বিস্তর ব্যবহার করেছেন।
21. রচনার ভাষা কীসের উপর নির্ভর করে?
উত্তরঃ যে-কোনো রচনার ভাষা রচনার বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে।
22. শংকর দর্শনের ভাষা কেমন?
উত্তরঃ শংকর দর্শনের ভাষা সংস্কৃত শব্দবহুল।
23. 'বসুমতী'-র সম্পাদকীয় রচনার ভাষা কেমন ছিল?
উত্তরঃ 'বসুমতী'-র সম্পাদকীয় রচনার ভাষা ছিল গাম্ভীর্যপূর্ণ।
24. বাংলায় যেসব বিদেশি শব্দ ঢুকেছে তার কা মধ্যে প্রধান কোনগুলি?
উত্তরঃ বাংলায় যেসব বিদেশি শব্দ ঢুকেছে তার মধ্যে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজিই প্রধান।
25. 'যতদিন থাকবে ততদিন আরও ঢুকবে বলে আশা করতে পারি।-কোন্ প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক এ কথা বলেছেন?
উত্তরঃ স্কুল-কলেজ থেকে সংস্কৃত তুলে দেবার প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে।
26. 'অচলিত অনেক আরবি-ফার্সি শব্দ নূতন মেয়াদ পাবে।'- কেন?
উত্তরঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী পুরোনো বাংলা পড়তে গিয়ে বিভিন্ন আরবি-ফারসি শব্দ পায়, যেগুলি তারা সহজেই বুঝতে পারে। তাই অচলিত অনেক আরবি-ফারসি শব্দ নতুন মেয়াদ পাবে।
27. 'নূতন খতেন নিলে ভালো হয়।'-'খতেন' শব্দটি সম্পর্কে তোমার কী মনে হয় লেখো।
উত্তরঃ 'খতিয়ান' শব্দটির পরিবর্তিত রূপ হল 'খতেন'। এখানে স্বরসংগতি এবং স্বরলোপের ফলে 'খতিয়ান' হয়েছে 'খতেন'।
28. ভারতীয় মক্তব-মাদ্রাসায় কোন্ ভাষা বেশি করে পড়ানো হয়েছিল?
উত্তরঃ ভারতীয় মক্তব-মাদ্রাসায় আরবি ভাষা বেশি করে পড়ানো হয়েছিল।
29. ভারতীয় আর্যরা কোন্ ভাষার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিল?
উত্তরঃ ভারতীয় আর্যরা ইরানি-আর্য সাহিত্য অর্থাৎ ফারসি ভাষার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিল।
30. উর্দুর সঙ্গে কোন্ ভাষার মূল সুর বাঁধা?
উত্তরঃ উর্দুর সঙ্গে ফারসির মূল সুর বাঁধা।
31. হিন্দির উপর বাইরের কোন্ ভাষার প্রভাব পড়েছে বেশি?
উত্তরঃ হিন্দির উপর ফারসির প্রভাব পড়েছে বেশি।
32. নবীন ফারসি ভাষার জন্ম হয়েছিল কীভাবে?
উত্তরঃ আর্য-ইরানি ভাষা ও সেমিতি-আরবি ভাষার সংঘর্ষে নবীন ফারসি ভাষার জন্ম হয়েছিল।
33. আর্য-ইরানি ভাষা ও সেমিতি-আরবি ভাষার সংঘর্ষে ভারতবর্ষে কোন্ সাহিত্যের সৃষ্টি হয়?
উত্তরঃ আর্য-ইরানি ভাষা ও সেমিতি-আরবি ভাষার সংঘর্ষে ভারতবর্ষে সিন্ধি, উর্দু ও কাশ্মীরি সাহিত্যের সৃষ্টি হয়।
34. ভারতবর্ষে কোন্ তিন ভাষা নতুন ঐশ্বর্যশালী সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারেনি?
উত্তরঃ সিন্ধি, উর্দু এবং কাশ্মীরি-এই তিন ভাষা ভারতবর্ষে নতুন ঐশ্বর্যশালী সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারেনি।
35. মুক্তি দিয়েছিলেন? কে উর্দু ভাষাকে ফারসির অনুকরণ থেকে
উত্তরঃ কবি ইকবাল উর্দু ভাষাকে ফারসির অনুকরণ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন।
36. 'নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী কোন্ উর্দু কবির উল্লেখ করেছেন?
উত্তরঃ 'নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী উর্দু কবি ইকবালের কথা উল্লেখ করেছেন।
37. বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য সৃষ্টি কী?
উত্তরঃ বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য সৃষ্টি হল পদাবলি কীর্তন।
38. 'এ সাহিত্যের প্রাণ এবং দেহ উভয়ই খাঁটি বাঙালি।'-লেখক এখানে কোন্ সাহিত্যের কথা বলেছেন?
উত্তরঃ লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী এখানে পদাবলি কীর্তন অর্থাৎ বৈয়ব সাহিত্যের কথা বোঝাতে চেয়েছেন।
39. বাংলায় খাঁটি কানুরূপ কে ধরেছিলেন?
উত্তরঃ মহাভারতের কৃষ্ণ বাংলায় খাঁটি কানুরূপ ধারণ করেছিলেন।
40. খাঁটি বাঙালি মেয়ে বলতে এখানে লেখক কাকে বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ খাঁটি বাঙালি মেয়ে বলতে এখানে লেখক শ্রীমতী রাধাকে বুঝিয়েছেন।
41. 'একই চরিত্র একই রূপে প্রকাশ পেয়েছেন।' -কীসে কীসে একই চরিত্র একই রূপে প্রকাশ পেয়েছেন?
উত্তরঃ ভাটিয়ালির নায়িকা, বাউলের ভক্ত, মুরশিদিয়ার আশিক ও পদাবলির শ্রীরাধা একই চরিত্র একই রূপে প্রকাশ পেয়েছেন।
42. কীর্তন বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ কীর্তন হল প্রশংসাসূচক গান। বাংলাদেশে শ্রীকৃষ্ণের মাহাত্ম্য বিষয়ক গানকেই কীর্তন বলা হয়ে থাকে।
43. ভাটিয়ালি কী?
উত্তরঃ নদীমাতৃক বাংলায় ভাটার স্রোতে নৌকা ছেড়ে দিয়ে মাঝি-মাল্লারা যে গান গায় তাই ভাটিয়ালি নামে পরিচিত।
44. মুরশিদিয়া কী?
উত্তরঃ সাধারণত ইসলাম ধর্মের আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কিত এক বিশেষ ধরনের সাধন গীতিকে মুরশিদি বা মুরশিদিয়া বলা হয়ে থাকে।
45. বাউল কী?
উত্তরঃ বাংলার এক লোকধর্ম সম্প্রদায়, গানই যাদের সাধনার মাধ্যম। একতারা, খমক প্রভৃতি সহযোগে গান এবং নৃত্য এর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
46. সৈয়দ মুজতবা আলী কাদের চরিত্রে বিদ্রোহ বিদ্যমান বলে মনে করেছেন?
উত্তরঃ সৈয়দ মুজতবা আলী বাঙালির চরিত্রে বিদ্রোহ বিদ্যমান বলে মনে করেছেন।
47. 'তখন তার বিরুদ্ধে আবার বিদ্রোহ করেছে।-কে, কার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে?
উত্তরঃ বাঙালি স্বভাববিদ্রোহী। কিন্তু সেই বিদ্রোহ উচ্ছৃঙ্খলতায় পরিণত হলে বাঙালি সমবেতভাবে সেই উচ্ছৃঙ্খলতার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করেছে।
48. 'ধর্ম বদলালেই জাতির চরিত্র বদলায় না।'-এখানে কোন্ কোন্ ধর্মের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ এখানে বাঙালি হিন্দু এবং বাঙালি মুসলমানের ধর্মীয় পার্থক্যের কথা বলা হয়েছে।
49. প্রাচীন যুগের সব ভাষাই 'তাই' বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ প্রাচীন যুগের হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা এবং আরবির মতো ভাষাগুলো নতুন শব্দ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সংস্কৃতের মতো বোঝাতে 'তাই' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
50. পাঠান ও মোগল যুগে কোন্ কোন্ ভাষা থেকে এবং কেন প্রচুর শব্দ গ্রহণ করেছি?
উত্তরঃ পাঠান ও মোগল যুগে আইন-আদালত, খাজনা-খারিজ নতুন রূপে দেখা দেওয়ায় আমরা আরবি ও ফারসি থেকে প্রচুর শব্দ গ্রহণ করেছি।
❐ কমবেশি ৬০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :
1. 'প্রাচীন যুগের সব ভাষাই তাই।'—এক্ষেত্রে লেখক 'তাই' শব্দটি ব্যবহারের সাহায্যে কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটি মুজতবা আলীর 'নব নব সৃষ্টি' রচনাংশের অংশবিশেষ। একটি ভাষাকে আমরা তখনই উন্নত, আত্মনির্ভরশীল ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করি যখন দেখি তার শব্দভাণ্ডার উন্নত। এই উন্নতির যাত্রা যদি হয় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত প্রাচীন শব্দ ও নতুন শব্দ সৃষ্টির অসামান্য ক্ষমতাবলে, তাহলে তো কথাই নেই। সংস্কৃত ভাষা এরূপ একটি সমৃদ্ধ প্রাচীন ভাষা। প্রাচীন হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা, আরবিও সংস্কৃতের অনুরূপ সমৃদ্ধ বোঝাতে লেখক 'তাই' শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
2. 'পৃথিবীতে কোনো জিনিসই সম্পূর্ণ অসম্ভব নয়।'-বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে এরূপ মন্তব্য করেছেন?
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটি মুজতবা আলীর 'নব নব সৃষ্টি' নামক রচনাংশ থেকে গৃহীত। যে-কোনো ভাষার শব্দভান্ডার অন্য ভাষা থেকে গ্রহণ করা আগন্তুক বা কৃত ঋণ শব্দ দ্বারা সমৃদ্ধ হয়। হিন্দি সাহিত্য এই তকমাটি ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। তাই তারা হিন্দি থেকে আরবি, ফারসি ও ইংরেজি শব্দকে তাড়িয়ে দেবার চেষ্টাটা শুরু করেছে লেখক হিন্দি সাহিত্যিকদের এই প্রচেষ্টাকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেছেন এবং তাদের প্রতি অনুপ্রেরণাসূচক এই উক্তিটি করেছেন।
3. 'এস্থলে আর একটি কথা বলে রাখা ভালো।'-বক্তা কোন্ স্থলে কী কথা বলে রাখা ভালো বলেছেন? ৩
উত্তরঃ বক্তা মুজতবা আলী তাঁর 'নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধাংশে হিন্দি ভাষার অন্য ভাষাকে বর্জনের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিদ্যাসাগর, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এমনকি হিন্দি সাহিত্যের প্রেমচন্দ্র যেভাবে নিজ নিজ সাহিত্যে অন্য ভাষার ব্যবহার করেছেন, সে প্রসঙ্গের রেশ টেনেছেন। তাঁর মতে, রচনার ভাষা সর্বদা বিষয়বস্তুর উপর নির্ভরশীল। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেছেন, শংকর দর্শন, মোগলাই রেস্তোরাঁ, বসুমতীর সম্পাদকীয় ও বাঁকা চোখের ভাষা কখনোই একরকম হবে না।
4. স্কুল থেকে সংস্কৃত চর্চা উঠিয়ে না দেবার কারণ প্রসঙ্গে বক্তা কী বলেছেন? ৩
উত্তরঃ সংস্কৃত ভাষা অত্যন্ত উন্নত ও সমৃদ্ধশালী। নতুন শব্দ তৈরির ব্যাপারে অসামান্য দক্ষতা আছে এই ভাষার। প্রাচীনকাল থেকে এদেশে সংস্কৃত চর্চা ছিল বলে বহু সংস্কৃত শব্দ বাংলায় ঢুকেছে, ঢুকছে এবং আগামীতে যতদিন এ ভাষা থাকবে ততদিন ঢুকবে। স্কুল-কলেজ থেকে সংস্কৃত চর্চা উঠিয়ে না দেবার কারণ বাংলায় এখনও আমাদের প্রচুর সংস্কৃত শব্দের প্রয়োজন। সংস্কৃত চর্চা উঠে যাওয়ার অর্থ বাংলা তার প্রধান খাদ্য থেকে বঞ্চিত হবে।
5. 'ইংরেজির বেলাতেও তাই' বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন? ৩
উত্তরঃ লেখক মুজতবা আলী তাঁর 'নব নব সৃষ্টি' বাংলায় এখনও সংস্কৃত শব্দের প্রয়োজন আছে। এই অনুষঙ্গ ধরে বলতে চেয়েছেন যে দর্শন, নন্দনশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা ইত্যাদি সম্বন্ধে সম্যক ধারণার ক্ষেত্রে, রেলইঞ্জিন চালনা এবং নানান টেকনিক্যাল ক্ষেত্রে কত যে শব্দের প্রয়োজন তা ধারণাতীত। এইসব শব্দের সেই অর্থে এখন বাংলা প্রতিশব্দ পাওয়া কঠিন, তাই ইংরেজি চর্চা বন্ধের সময় আসেনি।
❐ কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :
1. 'নব নব সৃষ্টি' রচনাংশটিকে কী ধরনের প্রবন্ধ বলা চলে আলোচনা করো।
উত্তরঃ পাশ্চাত্য সাহিত্য সমালোচকরা প্রবন্ধের অনেকরকম শ্রেণিবিভাগ করেছেন। তাঁরা প্রবন্ধের প্রকৃতি অনুসারে ভাববাদী, বস্তুনিষ্ঠ, ব্যাখ্যাধর্মী বা বিশ্লেষণমূলক, সমালোচনামূলক প্রভৃতি নানা প্রকারের কথা বলে থাকেন। সেই নিরিখে 'নব নব সৃষ্টি' রচনাংশটির বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করা প্রয়োজন।
প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী বিভিন্ন ভাষার স্বরূপ নিয়ে আলোচনায় প্রবৃত্ত হয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন সংস্কৃত, হিব্রু, গ্রিক প্রভৃতি প্রাচীন ভাষাগুলির আত্মনির্ভরশীলতা। এই প্রসঙ্গ পর্যালোচনাকালে বর্তমানকালের ইংরেজি কিংবা বাংলার প্রভেদের প্রতি আলোকপাত করেছেন। বাংলা ভাষায় আরবি, ফারসি, ইংরেজি ইত্যাদি ভাষা থেকে ঋণ এবং ঋণ গ্রহণের ঐতিহাসিক কারণ তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি বাংলা ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষার সঙ্গে সম্পর্ক আর তা থেকে স্বতন্ত্র হওয়ার বিষয়টিকেও স্পষ্ট করে তুলেছেন। স্বাভাবিকভাবেই বাংলা ভাষা নিয়ে বিশদ আলোচনাকালে বাঙালি জাতির স্বভাবধর্ম এবং সাংস্কৃতিক বিশেষত্বটিকেও সার্থকভাবে নিরূপণ করেছেন। সামগ্রিকতার বিচারে 'নব নব সৃষ্টি' রচনাংশটিকে প্রকৃতিগতভাবে বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধের পর্যায়ভুক্ত করাই শ্রেয়।
2. 'ফল যদি ভালো হয় তখন তাঁরা না হয় চেষ্টা করে দেখবেন।'-কী চেষ্টা করে দেখার কথা এখানে বলা হয়েছে? এবিষয়ে বাঙালি সাহিত্যিকদের ভূমিকা কী ছিল? ২+৩=৫
উত্তরঃ সমালোচকদের মতে, একটা ভাষা তখনই আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে যখন নতুন শব্দের প্রয়োজনে বিদেশি শব্দের মুখাপেক্ষী না থেকে নিজস্ব শব্দভান্ডার থেকেই শব্দ খুঁজে এনে প্রয়োগ করে। হিন্দি উপস্থিত সেই চেষ্টাটা শুরু করেছে। হিন্দি সাহিত্যিকেরা হিন্দি থেকে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি শব্দ বর্জন করতে শুরু করেছে। এখানে এই প্রচেষ্টার কথাই বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাঙালি সাহিত্যিকদের ধারণা ছিল বেশ স্পষ্ট। বাংলায় সংস্কৃত অন্যান্য প্রাচীন ভাষার মতো বা শব্দ সৃষ্টির ক্ষমতা ছিল না। তাই নতুন শব্দ বা বিষয়-ভাবনার অভিনব চিন্তা-ভাবনার প্রকাশ করতে বিদেশি ভাষার প্রয়োজন। ইংরেজিকে শিক্ষার মাধ্যমরূপে বর্জন করার ফলে বাংলায় প্রচুর ইউরোপীয় শব্দ প্রবেশ করেছে। রচনার সঙ্গে পারম্পর্য রক্ষা করলে বিদেশি ভাষা ব্যবহারে অসুবিধা নেই। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিদ্যাসাগরের মতো ব্যক্তিত্বরা অনায়াসেই আরবি-ফারসির ব্যবহার বাংলায় করে গেছেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তো এই দুই ভাষার বিরোধীদের 'আহাম্মুখ' বলেছেন। 'আলাল' ও 'হুতোম'-এর ভাষার যেমন ঐতিহাসিক প্রাসঙ্গিকতা আছে ঠিক তেমনি 'শংকর দর্শন', 'বসুমতী'র সম্পাদকীয় ভাষা কিংবা 'বাঁকা চোখের ভাষা'ও ভিন্ন ভিন্ন প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে ব্যবহৃত হয়েছে। এককথায় রচনার ভাষা বিষয়ানুগ হলে ভাষা সমৃদ্ধ ও ঐশ্বর্যশালী হয়।
3. বিদেশি শব্দ ব্যবহার বিষয়ে লেখক মুজতবা আলীর ভাবনার পরিচয় দাও। ৫
অথবা, 'বিদেশি শব্দ নেওয়া ভালো না মন্দ সে প্রশ্ন অবান্তর।'-কে এমন মনে করেন? তার এমন মনে হওয়ার কারণ কী লেখো। ২+৩=৫
উত্তরঃ লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর 'নব নব সৃষ্টি' রচনাংশে বর্তমানে বিদেশি শব্দ নেওয়া ভালো না মন্দ সে বিষয়ে প্রশ্ন অবান্তর বলে মনে করেন।
লেখকের মতে, দৈনন্দিন জীবনে আলু-কপি কিংবা বিলিতি ওষুধের মতোই আমাদের ভাষাতেও বিদেশি শব্দ থেকে যাবে এবং ভবিষ্যতে তা আমদানি করাও বন্ধ করা যাবে না। কেউ কেউ জোর করে বিদেশি শব্দ বর্জনের চেষ্টা করলেও মুজতবা আলী জানিয়েছেন, বিখ্যাত লেখকেরা অনেকেই সাদরে বিদেশি শব্দ গ্রহণ করেছেন। যেমন রবীন্দ্রনাথ স্বচ্ছন্দে লিখেছেন 'আবু দিয়ে, ইজ্জৎ দিয়ে, ইমান দিয়ে'... ইত্যাদি। এখানে 'আবু', 'ইজ্জৎ', 'ইমান' তিনটিই আরবি শব্দ। আবার নজরুল ইসলামই বাংলায় আরবি শব্দ 'ইনকিলাব' ঢুকিয়ে গিয়েছেন। বিদ্যাসাগর সাধু গদ্যে বিদেশি শব্দ ব্যবহার না করলেও, অসাধু রচনায় আরবি, ফারসি প্রচুর ব্যবহার করেছেন। নিষ্ঠাবান পণ্ডিত হলেও হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বিদেশি শব্দ বিশেষত আরবি-ফারসির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করাকে বোকামি মনে করতেন। এমনকি হিন্দি সাহিত্যে প্রেমচন্দ্রও বিস্তর আরবি-ফারসি ভাষা ব্যবহার করেছেন। এইসব দৃষ্টান্ত দিয়ে প্রাবন্ধিক বুঝিয়ে দিয়েছেন বিদেশি শব্দের ব্যবহার নিয়ে বর্তমানে প্রশ্ন তোলাই অবান্তর।
4. বাংলায় সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষার চর্চা এখনও প্রয়োজন বলে লেখক কেন মনে করেন? ৫
উত্তরঃ সৈয়দ মুজতবা আলী মনে করেন, বাংলা কোনো স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষা নয়, বিদেশি বহু ভাষার শব্দভান্ডার থেকে শব্দ গ্রহণ করেই সে তার নিজস্ব শব্দভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। এদেশে প্রাচীনকাল থেকেই সংস্কৃত ভাষায় চর্চা চলে আসছে।
সংস্কৃতের এই নিয়মিত চর্চা বাংলা ভাষাকেও প্রভাবিত করেছে। এই সূত্রে সংস্কৃতের বহু শব্দই আজ বাংলায় সাদরে গৃহীত হয়েছে। এখনও স্কুল-কলেজে সংস্কৃত চর্চার কারণে, সামান্য হলেও সংস্কৃত শব্দ বাংলা ভাষায় ঢুকছে। আর সে কারণেই এখানকার স্কুল-কলেজ থেকে আমরা সংস্কৃত উঠিয়ে দিতে চাই না। লেখকের মতে, "সংস্কৃত চর্চা উঠিয়ে দিলে আমরা অন্যতম প্রধান খাদ্য থেকে বঞ্চিত হব।"
শুধু সংস্কৃত নয়, ইংরেজির বেলাতেও লেখক এমনটিই মনে করেন। তাঁর মতে দর্শন, নন্দনশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা প্রভৃতি বিষয় চর্চার উপযোগী বিজ্ঞানের পরিভাষা সমৃদ্ধ শব্দ আমাদের প্রয়োজন। রেল ইঞ্জিন চালানোর মতো কারিগরি বিদ্যাচর্চার উপযুক্ত শব্দেরও অভাব রয়েছে বাংলায়। এ বিষয়গুলি যেহেতু ইংরেজি ভাষাতেই দীর্ঘদিন চর্চা হয়ে আসছে এবং বাংলায় সবে শুরু হয়েছে সেহেতু বাংলায় ইংরেজি ভাষার চর্চা এখনও প্রয়োজন। লেখকের মতে, "ইংরেজি চর্চা বন্ধ করার সময় এখনও আসেনি।"
5. বাংলায় আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহার ও তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে লেখকের ভাবনার পরিচয় দাও। ৫
উত্তরঃ পাঠান-মোগল যুগ থেকেই বাংলার সঙ্গে আরবি-ফারসি ভাষার ঘনিষ্ঠতা শুরু হয়। রাজভাষা হওয়ায় প্রশাসনিক কাজে এই দুই ভাষা ব্যবহার হতে শুরু করল। এই সূত্রে আইন-আদালত, খাজনা, ভূমি প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই দুই ভাষার বহু শব্দ বাংলায় ঢুকে গেল। কিন্তু অবস্থাটা বদলাতে শুরু করল ইংরেজ আগমনের সময় থেকে। রাজভাষা ইংরেজির দাপটে আরবি-ফারসির ব্যবহার বাংলায় কমে এল। ফলে এই দুই ভাষা থেকে এখন আর কোনো নতুন শব্দ বাংলায় ঢুকছে না। ভবিষ্যতেও ঢুকবে না। পূর্ব বাংলার তরুণেরাও আর এই দুই ভাষা সম্পর্কে ততটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আরব-ইরানে নতুন কোনো জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা হলে হয়তো আবার নতুন কিছু শব্দ বাংলায় আসতে পারত। কিন্তু সে সম্ভাবনাও আর নেই। তবে যেসব শব্দ এই দুই ভাষা থেকে বাংলায় ঢুকে পড়েছে তা আরও দীর্ঘকাল বাংলায় স্থায়ীভাবেই থাকবে। পুরানো বাংলা ভাষা পাঠের সূত্র ধরে কিছু আরবি-ফারসি ভাষার নতুন চর্চা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এবং একালের কিছু বাংলা ভাষার সাহিত্যিক শুরু করেছেন। তাতে অনেক অ-চলিত আরবি, ফারসি শব্দ নতুন মেয়াদ পাবে।
6. 'রচনার ভাষা তার বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে।'-প্রাবন্ধিক বাংলা সাহিত্য আলোচনাকালে এই মতামতের সপক্ষে কী কী যুক্তি দিয়েছেন? ৫
উত্তরঃ সংস্কৃতের মতো প্রাচীন ভাষাগুলির ক্ষেত্রে নিজ শব্দভান্ডারের ধাতু বা শব্দ সহযোগে নতুন নতুন শব্দ তৈরি করা সম্ভব ছিল। কিন্তু বাংলার মতো বর্তমান যুগের ভাষাগুলিতে নতুন। শব্দ বা নতুন বিষয়ের মধ্যে অভিনব চিন্তাভাবনা প্রকাশ করতে গেলে বিদেশি ভাষার দরকার হয়। বিশেষত শিক্ষার মাধ্যমরূপে ইংরেজিকে বর্জন করার ফলে, বাংলায় প্রচুর ইউরোপীয় শব্দ। প্রবেশ করেছে। তবে বিদেশি শব্দের প্রয়োগ তখনই তাৎপর্যপূর্ণ হয়, যদি তা রচনার সঙ্গে পারম্পর্য রক্ষা করে। কেননা রচনার ভাষা সর্বদাই বিষয়বস্তুর উপর নির্ভরশীল। তাই রবীন্দ্রনাথ ভআরবি-ফারসি প্রয়োগ করে অনায়াসে লিখতে পারেন, "আৰু ভদিয়ে, ইজ্জৎ দিয়ে, ইমান দিয়ে, বুকের রক্ত দিয়ে।" কবি নজরুল 'ইনকিলাব', 'শহিদ'-এর মতো বহু বিদেশি শব্দ স্বচ্ছন্দে বাংলায় স ঢুকিয়ে দিয়ে যান। আবার হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতো নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ পণ্ডিত আরবি-ফারসির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণাকে 'আহাম্মুখী' ভবলে মনে করেন। ঠিক একইভাবে 'আলাল' কিংবা 'হুতোমে'র ভাষাভঙ্গি ঐতিহাসিক প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গড়ে ওঠে। সুতরাং বিষয়গত গাম্ভীর্য, আভিজাত্য ও চটুলতার নিরিখে ভাষার ব্যবহার ঘটে। এইজন্য 'বসুমতী'-র সম্পাদকীয়ের ভাষা হয় গাম্ভীর্যপূর্ণ কিন্তু 'বাঁকা চোখে'র ভাষা লঘু, চটুল ও হালকা।
7. 'নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বাংলা ভাষায় আরবি ও ফারসি শব্দ আর নতুন করে ঢোকার সম্ভাবনা নেই এ কথা যেমন বলেছেন, ঠিক তেমনই আবার অচলিত অনেক শব্দ নতুন মেয়াদ পাবে ভেবেও আশা প্রকাশ করেছেন।'-রচনাংশ অবলম্বনে এই উক্তিটির সার্থকতা বিচার করো।
উত্তরঃ মোগল-পাঠান যুগে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কারণে আরবি-ফারসি শব্দ বাংলায় ঢুকতে শুরু করে। ভারতীয় মক্তব-মাদ্রাসায় দীর্ঘকাল আরবি ভাষা পড়ানো হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় আর্যগণ আরবির বদলে ফারসির সৌন্দর্যে অভিভূত হয়েছিলেন। উর্দু-হিন্দি সাহিত্যের উপরেও আরবির তুলনায় ফারসির প্রভাব পড়েছিল বেশি। অবশ্য লেখকের মতে, আরবি-ফারসি দুই ভাষা থেকেই নতুন করে ব্যাপকভাবে আর শব্দ বাংলায় ঢুকবে না। তার কারণ পশ্চিম ও পূর্ব বাংলায় এই দুই ভাষার চর্চা ক্রমশই কমে আসছে। আরব-ইরানে অদূ র ভবিষ্যতে নতুন জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা খুব একটা হবে বলে লেখক মনে করেন না। তাই নতুন করে আরবি-ফারসির প্রভাব বাংলায় পড়ারও আর সম্ভাবনা আছে বলে তিনি মনে করেননি। তবে যা ঢুকে পড়েছে তাকে আর বাতিল করা সম্ভব নয়। বরং তা আরও বহুদিন থাকবে বলে লেখক মনে করেছেন। পুরানো বাংলার চর্চার সূত্র ধরে কিছু অচলিত আরবি-ফারসি শব্দ কোনো কোনো লেখক ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা নতুন করে বাংলায় ফিরিয়ে আনবার চেষ্টা শুরু করেছেন।
8. ভারতীয় ভাষায় কোন্ ভাষার প্রভাব সবচেয়ে বেশি এবং কেন? এই প্রসঙ্গে নব সৃষ্ট সিন্ধি, উর্দু ও কাশ্মীরি সাহিত্য সম্পর্কে প্রাবন্ধিকের মতামত কী ছিল লেখো। ২+৩=৫
উত্তরঃ ভারতীয় ভাষাগুলিকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিল ফারসি ভাষা ও সাহিত্য। এ কথা আশ্চর্য হলেও সত্যি ভারতের মক্তব-মাদ্রাসায় যদিও প্রচুর পরিমাণে আরবি ভাষা পড়ানো হয়েছিল, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল ভারতীয় আর্যরা ফারসি ভাষার সৌন্দর্যেই বেশি অভিভূত হয়েছিলেন। তাই উর্দু কিংবা হিন্দি সাহিত্যে আরবির চেয়ে ফারসি ভাষার বহুল প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
একসময় ইরানে নবীন ফারসি ভাষার জন্ম হয়েছিল আর্য-ইরানি ভাষা এবং সেমিতি-ইরানি ভাষার সংঘর্ষের ফলে। লেখকের মতে সিন্ধি, উর্দু ও কাশ্মীরি সাহিত্যও এই একই সংঘর্ষের ফল।
কিন্তু আরবির এই সংঘর্ষ ফারসির মাধ্যমে ঘটায় কিংবা অন্য কোনো ভাষাগত কারণে সিন্ধি, উর্দু ও কাশ্মীরিতে নতুন নতুন ঐশ্বর্যশালী সাহিত্যের সৃষ্টি হল না। বিখ্যাত উর্দু কবি ইকবাল এই সত্য উপলব্ধি করেছিলেন বলেই ফারসির অনুকরণ বর্জন করে উর্দুতে মৌলিকভাবে নতুন কিছু সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন।
9. ধর্ম বদলালেই জাতির চরিত্র বদলায় না।-উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। ৫
উত্তরঃ প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর 'নব নব সৃষ্টি' রচনাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে বাঙালি জাতির চারিত্রগুণ ফুটিয়ে তুলতে হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের কথা বলেছেন। বাঙালির জাতীয় চরিত্রে বিদ্রোহী সত্তা বিদ্যমান। রাজনীতি, ধর্ম, সাহিত্য-এই সর্বত্রই সে সত্য-শিব ও সুন্দরের অনুসন্ধানে প্রয়াসী। তাই যেখানেই গতানুগতিকতা কিংবা প্রাচীন ঐতিহ্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানেই সে বিদ্রোহী হয়েছে। সর্বোপরি এই বিদ্রোহ উচ্ছৃঙ্খলতায় রূপান্তরিত হলে, বাঙালি পুনরায় সেই উচ্ছৃঙ্খলতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। কেননা সাংস্কৃতিক বিশেষত্ব অনুসারে বাঙালির একমাত্র উদ্দেশ্য সত্য-শিব ও সুন্দরের আরাধনা। এক্ষেত্রে তাঁর বিদ্রোহী চেতনা ধর্মীয় প্রভেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অর্থাৎ সত্য-শিব ও সুন্দরকে অর্জনের সাধনায় হিন্দু ও মুসলমান উভয়েই সমান তৎপর। কেননা ধর্মীয় প্রভেদ বাঙালি জাতির চরিত্রকে বদলাতে পারেনি ও ভবিষ্যতেও পারবে না। হিন্দু ও মুসলমান বাঙালির আত্মিক ঐক্য এক ঐতিহাসিক সত্য।
No comments:
Post a Comment