নোঙর কবিতার প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | নবম শ্রেনীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 9th Bangla Nongor Question and Answers (MCQ, SAQ, DAQ) - Psycho Principal

Fresh Topics

Thursday, 10 April 2025

নোঙর কবিতার প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | নবম শ্রেনীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 9th Bangla Nongor Question and Answers (MCQ, SAQ, DAQ)

 

নোঙর কবিতার 
প্রশ্ন উত্তর




👉(খেয়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর )


❐ কমবেশি ১৫টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :

1. 'নোঙর' কবিতাটি কার লেখা?

উত্তরঃ 'নোঙর' কবিতাটি কবি অজিত দত্তের লেখা।


2.  বাংলা কবিতার ইতিহাসে কোন্ সময়ে কবি অজিত দত্তের আবির্ভাব ঘটেছিল?

উত্তরঃ বিংশ শতকের তিন-চারের দশকে কবি অজিত দত্তের আবির্ভাব ঘটেছিল।


3. 'নোঙর' শব্দের অর্থ লেখো।

উত্তরঃ  বঁড়শি আকৃতির লোহার তৈরি যন্ত্র, যা নৌকাকে তটের কিনারে আটকে রাখে, তাকেই নোঙর বলে।


4. 'পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে'-কবিতার কথক কীসে করে সিন্ধুপারে পাড়ি দিতে চান?

উত্তরঃ কবিতার কথক নৌকা করে সিন্ধুপারে পাড়ি দিতে চান।


5. কবিতার কথক কোথায় পাড়ি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন?

উত্তরঃ  কবিতার কথক সুদূর সিন্ধুপারে পাড়ি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।


6.  নোঙর কোথায় পড়ে গিয়েছে?

উত্তরঃ  নোঙর তটের কিনারে পড়ে গিয়েছে।


7. 'সারারাত মিছে দাঁড় টানি।'-সারারাত মিছে দাঁড় টেনেছেন কেন?

উত্তরঃ তটের কিনারে নৌকার নোঙর পড়ে গিয়েছে, তাই কবি সারারাত মিছে দাঁড় টেনেছেন।


8.  'জোয়ারের ঢেউগুলি ফুলে ফুলে ওঠে;– ঢেউগুলি ফুলে ফুলে উঠে কী করে?

উত্তরঃ  জোয়ারের ঢেউগুলি ফুলে ফুলে উঠে কবিতার কথকের নৌকায় মাথা ঠুকে ফের সমুদ্রের দিকে ছুটে যায়।


9. 'সমুদ্রের দিকে তারা ছোটে।'-সমুদ্রের দিকে কারা ছোটে?

উত্তরঃ  জোয়ারের ঢেউগুলি সমুদ্রের দিকে ছোটে।


10.  'তারপর ভাঁটার শোষণ'-ভাটার শোষণ কখন শুরু হয়?

উত্তরঃ  জোয়ারের পর ভাটার শোষণ শুরু হয়।


11. 'তারপর ভাঁটার শোষণ'-ভাটার শোষণ কী?

উত্তরঃ  ভাটার ফলে নদীতে জলস্ফীতি হ্রাস পায়। জল কমে আসে। একেই কবি ভাটার শোষণ বলেছেন।


12.  'স্রোতের প্রবল প্রাণ করে আহরণ।'-কেন এমন হয়?

উত্তরঃ  ভাটার শোষণের ফলে জল কমে আসে, তাই স্রোতের প্রবল প্রাণ অর্থাৎ ঢেউয়েরা স্তিমিত হয়ে আসে।


13. কে স্রোতের প্রবল প্রাণ আহরণ করে নেয়?

উত্তরঃ ভাটার টান এসে স্রোতের প্রবল প্রাণ আহরণ করে নেয়।


14. জোয়ারভাটায় কী বাঁধা আছে?

উত্তরঃ জোয়ারভাটায় তটভূমি বাঁধা আছে।


15. কবিতার কথকের তরিটি কেমন ছিল?

উত্তরঃ  কবিতার কথকের তরিটি পণ্যবাহী বাণিজ্যতরি ছিল।


16. 'বাণিজ্য-তরী' কোথায় বাঁধা পড়ে আছে?

উত্তরঃ  কবিতার কথকের বাণিজ্যতরি জোয়ারভাটায় বাঁধা তটের কাছে নোঙরে আটকা পড়ে আছে।


17. নৌকা কীসে চিরকাল বাঁধা আছে?

উত্তরঃ নৌকা চিরকাল নোঙরের কাছিতে বাঁধা আছে।


18. দাঁড় টানা ও পাল বাঁধা সত্ত্বেও নৌকার অগ্রগমন হয় না কেন?

উত্তরঃ  দাঁড় টানা ও পাল বাঁধা সত্ত্বেও নৌকা নোঙরের কাছিতে আবদ্ধ থাকায়, তার কোনো অগ্রগমন হয় না।


19. সাগরগর্জনে কে বা কারা কেঁপে ওঠে?

উত্তরঃ সাগরগর্জনে কবিতার কথকের ব্যক্তিক অবকাশের নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি কেঁপে ওঠে।


20. দাঁড়ের নিক্ষেপে কবি কী শুনতে পান?

উত্তরঃ দাঁড়ের নিক্ষেপে কবিতার কথক স্রোতের বিদ্রূপ শুনতে পান।


21. 'স্রোতের' বিদ্রুপ করার কারণ কী?

উত্তরঃ কবিতার কথক বার বার দাঁড় টানা সত্ত্বেও নৌকা এগোয় না, কথকের ব্যর্থতা দেখে স্রোেত বিদ্রুপ করে।


22.  কবিতার কথক কীভাবে দিকের নিশানা ঠিক করার চেষ্টা করেন?

উত্তরঃ  কবিতার কথক আকাশের তারার পানে চেয়ে দিকের নিশানা ঠিক করার চেষ্টা করেন।


23. কীসের বিরাম নেই?

উত্তরঃ নৌকাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশায় দাঁড় টানার বিরাম নেই।


24.  কবি কীভাবে সপ্তসিন্ধুপারে পাড়ি দিতে চান?

উত্তরঃ  কবি তরি-ভরা পণ্য নিয়ে সপ্তসিন্ধুপারে পাড়ি দিতে চান।


25. নোঙর কোথায় কীভাবে পড়ে গেল?

উত্তরঃ কবিতার কথকের অজ্ঞাতে নোঙর তটের কিনারে পড়ে যায়।


26. কবিতায় নৌকা ও নোঙর কীসের প্রতীক?

উত্তরঃ  কবিতাটিতে নৌকা গতিশীল জীবন এবং নোঙর বন্ধন বা আবদ্ধতার প্রতীক।


27. নৌকায় দাঁড় ও পালের কার্যকারিতা কী?

উত্তরঃ  পাল বাতাসের গতিকে কাজে লাগিয়ে আর দাঁড় জল কেটে নৌকাকে এগিয়ে নিয়ে চলে।


28.  নোঙর কবিতায় কবিতার কথকের কোন্ মূল মনোভাবটি ফুটে উঠেছে?

উত্তরঃ  নোঙর কবিতায় গণ্ডিবদ্ধ জীবনের আবদ্ধতার বিপরীতে মুক্তির আকাঙ্ক্ষার আকুতি প্রকাশিত হয়েছে।


❐ কমবেশি ৬০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও:


1. কবি সারারাত মিছে দাঁড় টানেন কেন? অথবা, 'নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে।'- বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? ৩

উত্তরঃ 'নোঙর' কবিতার কথক অর্থাৎ কবি অজিত দত্ত দূর সিন্ধুপারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিমুহূর্তে উদ্‌গ্রীব হয়ে উঠেছেন।

কিন্তু দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড ও সাংসারিক ব্যস্ততা নোঙরের মতোই তটের কিনারে তাঁর জীবনতরিকে আটকে রেখেছে। এই বন্ধন থেকে মুক্তির আশায় কবির মন নৌকার দাঁড় টানার মতোই তাঁর জীবনতরিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে ব্যক্তিজীবনের বাস্তবতা ও পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতার চাপে সে চেষ্টা মিছে হয়ে যায়।


2. 'এ-তরীতে মাথা ঠুকে সমুদ্রের দিকে তারা ছোটে।'-পঙ্ক্তিটির মূল ভাব বুঝিয়ে লেখো। ৩

উত্তরঃ কবি অজিত দত্তের 'নোঙর' কবিতাটি রূপক জাতীয় কবিতা। কবিতায় কবি মধ্যবিত্তের গণ্ডিবদ্ধ জীবন থেকে মুক্তির অভিপ্রায় ও তার অপূর্ণতার মানসিক দ্বন্দুকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। কথকের জীবনতরি প্রতিদিনের একঘেয়েমি ভেঙে যেতে চায় গতিশীল উদ্দামতায়। কিন্তু গতিশীল জোয়ারের ঢেউগুলি নোঙরে আবদ্ধ তরিতে আঘাত হানে মাত্র, তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে না। তাই ইচ্ছা স্বরূপ জোয়ারের ঢেউগুলি নোঙরবন্ধ জীবনতরিতে মাথা ঠোকে।


3. তারপর ভাঁটার শোষণ'-উদ্ধৃতাংশটির অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝিয়ে লেখো। অথবা, 'স্রোতের প্রবল প্রাণ করে আহরণ।'-এমন বলার কারণ কী বলে তোমার মনে হয়? ৩

উত্তরঃ  জোয়ারে নদী বা সমুদ্রের জলস্ফীতি ঘটে আর ভাটার টানে তা পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। এককথায় ভাটার টান জোয়ারের প্রবল জলোচ্ছ্বাস বা গতিময় ঢেউগুলিকে স্তিমিত করে দেয়। আসলে কথকের গণ্ডিবদ্ধ সাংসারিক জীবনের স্বপ্ন-কল্পনা ও আকাঙ্ক্ষাগুলি স্বপ্নময় জোয়ারের ঢেউয়ের প্রতীক। কিন্তু পারিপার্শ্বিক বাস্তবতার ঘাত-প্রতিঘাতে ভাটার শোষণের মতো কবির জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলি কার্যকারিতা হারায়। উদ্ধৃতাংশে কবি এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।


4.  'আমার বাণিজ্য-তরী বাঁধা পড়ে আছে। -কথাটির মূল তাৎপর্যটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ কবি অজিত দত্ত তাঁর রূপকধর্মী কবিতা 'নোঙর'-এ মানুষের জীবনকে বাণিজ্যতরির সাথে তুলনা করেছেন। এই বাণিজ্যতরিতে মানুষ নিজ নিজ পসরা সাজিয়ে জীবনের পথে অগ্রসর হয়। জীবনতরিকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে ক উদ্যোগ, উদ্যম ও কর্মচঞ্চলতা, যা দাঁড়ের মতো কাজ করে। কিন্তু বল মানুষের জীবন সর্বদা স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্নভঙ্গের সুতোয় বাঁধা। জী জীবনের নানান প্রতিকূলতা মানুষকে তার কর্মপ্রচেষ্টায় বাধা দেয়। সা ফলে প্রার্থিত মুক্ত জীবনের ঘাটে মানুষের বাণিজ্যতরি বাঁধা পড়ে। জ


5.  'যতই না দাঁড় টানি, যতই মান্ডুলে বাঁধি পাল,'-বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? 

উত্তরঃ 'নোঙর' কবিতায় কবি গতিশীল জগতের চলমানতাকে নদী এবং নিজের বদ্ধ জীবনকে নৌকার মধ্য দিয়ে প্রতীকায়িত করেছেন। সংসারের 'তট'-এ 'তরি' বা নৌকাস্বরূপ কথকের সত জীবন মায়া-মোহের অলঙ্ঘ্য 'নোঙর'-এর 'কাছি'-তে আবদ্ধ। কিন্তু কবি এই বাঁধন-মুক্তির সাধনায় সদাতৎপর। দাঁড়, পাল, নৌ মাসুল-কথকের এই প্রচেষ্টারই প্রতীক। যদিও সাংসারিক জীবনের অনতিক্রম্য প্রতিবন্ধকতা এবং তা ছিন্ন করার মানস-দ্বন্দুই মধ্যবিত্ত জীবনের চিরকালীন সত্য। আর সেই সত্যই এখানে প্রতিভাত হয়েছে।


6.  নোঙরের কাছি বাঁধা তবু এ নৌকা চিরকাল।'-নৌকা চিরকাল বাঁধা কেন?

উত্তরঃ  কবি অজিত দত্ত উদ্ধৃত উক্তিটির রূপকের আড়ালে মানব জীবনের এক শাশ্বত সত্যকে তুলে ধরেছেন। সাগরপারের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে কবি বেরিয়ে পড়তে আগ্রহী। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্নের সমুদ্রযাত্রায় রয়েছে বাস্তবের বাধা। এই বাধা অতিক্রমের জন্য তাঁর ত্রুটি নেই। মাস্তুলে পাল, অবিরাম দাঁড় টানা সবই ব্যর্থ। আসলে মাঝেমাঝে মানবজীবনে এটাই বাস্তব হয়ে দাঁড়ায় যে মানুষের স্বপ্ন, সাধনা, উদ্যম, উদ্যোেগ ইত্যাদি পারিপার্শ্বিক বিরুদ্ধতায় স্তব্ধ হয়ে যায়-যেমনটি কবির ক্ষেত্রে ঘটেছে।


7.  'তারার দিকে চেয়ে করি দিকের নিশানা'-কে তারার দিকে চেয়ে দিকের নিশানা করেন? কেন করেন ১ + ২ = ৩

উত্তরঃ 'নোঙর' কবিতার কবি অজিত দত্ত তারার দিকে চেয়ে দিকের নিশানা করার কথা বলেছেন। সমুদ্রে ভাসমান নাবিক রাত্রিবেলা দিকনির্ণয়ের জন্য আকাশের তারা দেখে। তেমনি কথকের মতো মানুষরাও জীবনসমুদ্রে ভাসতে ভাসতে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে দিশেহারা হয়ে পড়েন এবং নির্দিষ্ট দিশা খোঁজার জন্য তারার দিকে চেয়ে নিশানা করেন। যদিও প্রতিবন্ধকতা নামক নোঙর তার জীবনতরিকে বারে বারে বাধা দেয়।


8. নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি সাগরগর্জনে ওঠে কেঁপে। স্রোতের বিদ্রুপ শুনি প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে।' প্রসঙ্গ নির্দেশ করে তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ  রূপকার্থ বিশিষ্ট 'নোঙর' কবিতার কথক ব্যক্তিজীবনকে নৌকার সঙ্গে তুলনা করেছেন; আর সে জীবন পারিপার্শ্বিক গণ্ডিবদ্ধতায় আবদ্ধ। কিন্তু এই সংকীর্ণ সাংসারিকতার আবদ্ধতাকে ছিন্ন করে তিনি অচেনা স্বপ্নময়তার জগতে পাড়ি দিতে চান। অথচ মায়া-মোহ-কর্তব্যের অলঙ্ঘ্য নোঙর তাঁর জীবনতরিকে সাংসারিকতার তটে আটকে রাখে। সময়ের স্রোতধারায় একাকী অসহায় কবির মনে হয় প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে স্রোতের বিদ্রুপ ভেসে আসে। অর্থাৎ বন্ধন-মুক্তির নিষ্ফল প্রয়াসকে গতিশীল সময়ের স্রোেত যেন উপহাস করে যায়।


9. 'তরী ভরা পণ্য নিয়ে পাড়ি দিতে সপ্তসিন্ধুপারে।'-বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ৩

উত্তরঃ  'নোঙর' কবিতার কথক ব্যক্তিজীবনকে তরি বা • নৌকার সঙ্গে তুলনা করেছেন। আর কথকের অন্তর্মনের স্বপ্ন-কল্পনা-অভিজ্ঞতা-ঐশ্বর্য অর্থাৎ জীবনের সঞ্চয় হল তাঁর পণ্য। এই অসামান্য সম্পদকে সম্বল করে তিনি সুদূর স্বপ্নময় মুক্ত জগতে পাড়ি দিতে চান। কথকের রোমান্টিক মনের মানস-যাত্রার অভিলাষ পঙ্ক্তিটির মাধ্যমে ব্যক্ত হয়েছে।


10. স 'সারারাত তবু দাঁড় টানি,/তবু দাঁড় টানি।'-'তবু' অব্যয়টি একাধিকবার ব্যবহারের প্রাসঙ্গিকতা বুঝিয়ে দাও। 'অথবা, 'ততই বিরামহীন এই দাঁড় টানা।'- দাঁড় টানা 'বিরামহীন' কেন? ৩

উত্তরঃ  কবি অজিত দত্ত মানবজীবনের এগিয়ে চলাকে এক মহাসমুদ্র অতিক্রম করার রূপকের মোড়কে তুলে ধরেছেন। মানুষ তার প্রতিভা ও ক্ষমতা অনুসারে জীবনে উত্তরণের পথ খোঁজে এবং তা বাস্তবায়িত করার জন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখে না। তার তরি বাওয়া বা পথ চলা অন্তহীন। কিন্তু সংসারে নানান প্রতিবন্ধকতা রূপী নোঙর তার জীবনতরিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা দেয়। তবে মানুষ বাধার কাছে আত্মসমর্পণ করে না। তাই ব্যর্থতার মাঝে 'চরৈবেতি চরৈবেতি' হয়ে ওঠে তার জীবনের মন্ত্র আর তা বাস্তবায়িত করার নিরলস প্রচেষ্টাকে 'তবু' অব্যয়ের একাধিক প্রয়োগার্থে বুঝিয়েছেন।


❐ কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও:


1.  'নোঙর' কবিতাটির বহিরঙ্গে যে সমুদ্রযাত্রার বিবরণ আছে, তা কবিতা অবলম্বনে লেখো।

উত্তরঃ  কবি অজিত দত্ত রচিত 'নোঙর' কবিতাটিতে সমুদ্রযাত্রার এক অসাধারণ চিত্ররূপ ফুটে উঠেছে। কবি যেন শব্দের তুলিতে সাগর পেরোনোর ছবি এঁকেছেন। ছবিটির প্রেক্ষাপটে রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত উত্তাল জলরাশি। তার ফেনিল উদ্দামতা, আর তারই মাঝে অজস্র তরঙ্গমালায় বিপর্যস্ত নৌকার ছবি।

এমনই এক সমুদ্রবক্ষে পণ্যভরা বাণিজ্যতরি নিয়ে দূর সপ্তসিন্ধু পারের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন কবি। কিন্তু তটের কিনারায় নোঙরের কাছিতে বাঁধা পড়েছে কবির নৌকাখানি। কবি দেখেছেন জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে টালমাটাল হয়ে পড়ছে নৌকা। ঢেউগুলো নৌকার উপর আছড়ে পড়ে আবার ফিরে যাচ্ছে। জোয়ারের বেলা সাঙ্গ হলে ভাটার টানে দ্রুত জল নামতে থাকে। এই জোয়ারভাটা তটে আটকে থাকা নৌকাকে কবি এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য অবিরাম দাঁড় টেনে চলেন। কিন্তু দাঁড় টানার ব্যর্থ প্রচেষ্টা স্রোতের বিদ্রূপ ধ্বনির মতো কবির কাছেই ফিরে ফিরে। আসে। বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে দিক্হারা কবি রাতের তারার দিকে। চেয়ে দিক ঠিক করেন। তবু তরিভরা পণ্য নিয়ে কবির এই। বাণিজ্যযাত্রা তটের কিনারে নোঙরের বন্ধন থেকে মুক্তি পায় না। কবি অবিরাম দাঁড় টেনে চলেন। এই ব্যর্থ যাত্রার বিরাম নেই।


2.  'নোঙরের কাছি বাঁধা তবু এ নৌকা চিরকাল'। -উদ্ধৃতাংশটির অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনা নিজের ভাষায় আলোচনা করো। অথবা, 'নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে।-বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা কবিতা অবলম্বনে নিজের ভাষায় আলোচনা করো। ৫

উত্তরঃ  ব্যর্থতার মাঝেও মানুষের অন্তহীন পথ চলা, অর্থাৎ এগিয়ে চলাই জীবন। কবি অজিত দত্ত এই বিষয়বস্তুর মোড়কেই তাঁর রূপকধর্মী কবিতা 'নোঙর'কে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। কবি জীবনের চলার পথকে অন্তহীন সমুদ্রযাত্রার সাথে তুলনা করেছেন। কিন্তু তা হয়নি, 'নোঙর'রূপী প্রতিবন্ধকতা এই তরিকে বার বার নোঙরে আবদ্ধ করে তার গতি রুদ্ধ করেছে। কবি সেই বাধাবিপত্তিগুলিকে নানা রূপকের সাহায্যে কবিতায় ব্যাখ্যা করেছেন। মানুষের জীবনের অভিপ্রায়গুলোকে কবি সমুদ্রের উচ্ছল তরঙ্গের সাথে তুলনা করে জীবনতরিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার কথা বলেছেন কিন্তু নোঙরবদ্ধ তরিতে সেই অভিপ্রায়রূপী তরঙ্গ আছড়ে পড়েও ব্যর্থ হয়ে ফিরেছে। কখনও বা ভাটারূপী প্রতিবন্ধকতা উচ্ছ্বাসরূপী তরঙ্গকে শোষণ করেছে। তবে কবি চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি। দাঁড় টানা বন্ধ করেনি, পাল বাঁধা বন্ধ করেনি। দাঁড়ের প্রতিটি নিক্ষেপে কবি বিদ্রুপ শুনেছেন। অসহায় নাবিকের মতো নক্ষত্র দেখে দিক ঠিক করেছেন শুধুমাত্র তার পণ্যকে দেশ-দেশান্তরে পৌঁছে দেবার জন্য। কিন্তু প্রতিবারেই তাঁর নোঙর তটের কিনারে পড়েছে বা নোঙরের কাছি বাঁধা পড়েছে। তবু দাঁড় টেনেছেন কারণ এটাই বাস্তব, এটাই চিরন্তন।


3. 'নোঙর' কবিতাটির নামকরণ কতখানি সার্থক হয়েছে তা বলো। ৫

উত্তরঃ  আমাদের পাঠ্য 'নোঙর' কবিতাটি রূপকার্থবিশিষ্ট কবিতা। নোঙর হল বঁড়শির আকৃতির লোহার তৈরি যন্ত্র, যা দিয়ে তটের সঙ্গে নৌকা বাঁধা থাকে। অর্থাৎ নৌকার গতিশীলতা নোঙরে রুদ্ধ হয়। 'নোঙর' কবিতাটিতে একটি অন্তহীন সমুদ্রযাত্রার অভিপ্রায় বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সে সমুদ্রযাত্রা বারবার থমকে গেছে নদীতটে নোঙরের টানে। মাস্তুলে পাল বেঁধে, সারারাত দাঁড় টেনেও কোনো লাভ হয়নি। শুধুই কানে ভেসে এসেছে স্রোতের বিদ্রুপ। এখানে নৌকাকে কবি জীবনের এবং নোঙরকে সেই জীবনের বন্ধন বা আবদ্ধতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। মুক্তির অভিপ্রায়ে পূর্ণ যে-কোনো অগ্রগমনকেই আবদ্ধতার নোঙর বুদ্ধ করে। তাই এই শব্দটিকেই গুরুত্ব দিয়ে কবি কবিতাটির 'নোঙর' নামকরণ করেছেন। মানুষের জীবনের দায়দায়িত্ব, সম্পর্ক, পিছুটান, মায়ার বাঁধন যেন এক অলঙ্ঘ্য শক্তি হিসেবে তাকে বেঁধে রাখে। বাস্তবতার বন্ধনের সঙ্গে কল্পনার সুদূরতার এই দ্বন্দ্ব-সংঘাত চিরকালীন। তাই মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে যেমন উপেক্ষা করা যায় না, ঠিক তেমনই গণ্ডিবদ্ধ প্রাত্যহিক জীবনের সীমাবদ্ধতাকেও অতিক্রম বা লঙ্ঘন করা যায় না। আর এই অলঙ্ঘ্য শক্তিই হল নোঙর। এই ভাবটুকুই ব্যস্থিত হয়েছে কবিতাটিতে। কবিতার প্রতীকী দ্যোতনাটিকে ফুটিয়ে তোলে বলে 'নোঙর' নামকরণটি সার্থক হয়েছে বলেই আমরা মনে করি।


4.  'নোঙর' কবিতাটিতে যে মূল ভাবটি ব্যক্ত হয়েছে তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো। কবিতায় ব্যবহৃত প্রতীকগুলি কবির কোন্ কোন্ ভাবনাকে প্রকাশ করেছে তা বুঝিয়ে দাও। ৩+২=৫

উত্তরঃ  কবি অজিত দত্ত তাঁর 'নোঙর' কবিতার মধ্যে দিয়ে। বোঝাতে চেয়েছেন যে মানুষের জীবনটা নিস্তরঙ্গ সমুদ্রের উপর দিয়ে তরতরিয়ে এগিয়ে চলা কোনো নৌকা নয়। বরং বলা যায়। তা এক বদ্ধ জীবন। তার জীবনতরি মাঝে মাঝেই বাঁধা পড়ে নোঙরের কাছিতে। কবি চেয়েছিলেন, তাঁর প্রতিভা নিয়ে পাড়ি দেবেন দেশ-দেশান্তরে। কিন্তু মনের মধ্যে উথলে-ওঠা আশাগুলো ব্যর্থ হয়েছে। তবুও আশাহত না হয়ে কবি তাঁর স্বপ্নের তরির দাঁড় টেনে, পাল তুলে মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছেন কল্পনারাজ্যে পাড়ি দিতে। দিক-হারা নাবিকের মতো কখনও তারা দেখে নিশানা ঠিক করেছেন কখনও বা নদীর গর্জনকে বিদ্রূপ মনে হয়েছে তবুও কবি আশাহত হননি; কেননা জীবনের এই অন্তহীন প্রচেষ্টাই একমাত্র সত্য।

 'নোঙর' কবিতাটি রূপকধর্মী। কবি তাঁর ভাবনাগুলিকে কি কতগুলি প্রতীক বা চিত্রকল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। কবিতায় ব 'নোঙর' শব্দটি মানবজীবনের প্রতিবন্ধকতা রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। শ আর জোয়ারভাটার সাথে কবি মানুষের উত্থানপতনের তুলনা করেছেন। বাণিজ্যতরি যেমন মানুষের স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা ঠিক তু তেমনি দাঁড় হল মানুষের অগ্রগমনের প্রতীক। 'সারারাত' বলতে সা কবি সমগ্র জীবনকে এবং 'তারা' বলতে সুদুরের আহ্বানকে তি চিহ্নিত করেছেন। 'তট' শব্দটি দ্বারা যেমন গণ্ডিবদ্ধ পরিধিকে নৌ বুঝিয়েছেন ঠিক তেমনি সিন্ধু হল বন্ধনমুক্তির প্রতীক।


5. 'নোঙর' কবিতাটির মর্মার্থ নিজের ভাষায়  লেখো। অথবা, রূপকধর্মী কবিতা হিসেবে 'নোঙর' কবিতার সার্থকতা বিচার করো।

উত্তরঃ  রূপকার্থবিশিষ্ট 'নোঙর' কবিতায় কবি অজিত দত্ত বিভিন্ন প্রতীক ব্যবহারের মধ্য দিয়ে কবিতাটির মূল ভাবনাটিকে ব্যক্ত করেছেন।

কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু হল কথকের সমুদ্রযাত্রার অভিপ্রায়। কিন্তু তীব্র প্রতিকূলতায় তাঁর নৌকা অগ্রসর হতে পারে না। তটের কাছে নোঙরের কাছিতে নৌকা বাঁধা পড়ে যায়। তবু কথক অবিরাম দাঁড় টেনে চলেন। নোঙরকে কাছিমুক্ত করার এই অন্তহীন প্রয়াসের সুস্পষ্ট ছবি দিয়েই কবিতাটি শেষ হয়। এই বস্তুগত অর্থটুকুর মধ্যেই কবিতাটির মূলভাব সীমায়িত নয়। বরং এক বিষয়ান্তর ব্যঞ্জনায় পূর্ণ গভীর ভাবনা এই কবিতায় ফুটে উঠেছে। বস্তুত প্রতিটি মানুষের জীবনই জোয়ারভাটার মতো উত্থানপতনে ভরা। তাঁর জীবনতরি নানা পিছুটান, মায়া-মমতার বন্ধন ও পারিপার্শ্বিক প্রতিবন্ধকতা-প্রতিকূলতার গণ্ডিবদ্ধতার কাছে বাঁধা পড়ে। তবু মানুষ চায় মধ্যবিত্ত জীবনের জড়তাকে অতিক্রম করে স্বপ্ন-কল্পনায় পূর্ণ এক মুক্ত জীবনের আস্বাদ। গতিশীল সময়ের স্রোত, তাঁর ক্লান্তিকর একঘেয়েমিতে বদ্ধ অন্তর্মনে বারবার করাঘাত করে। বিধিবদ্ধ জীবনের চেনা-ছক ভাঙার জন্য সে উন্মুখ হয়। কিন্তু গতানুগতিকতার অলঙ্ঘ্য নোঙর সাংসারিক তটরেখার অতলে নিহিত। তা ছিন্ন করা যায় না। স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় ক্ষত-বিক্ষত ব্যক্তিমন তাও নতুন উদ্যোগে-উদ্যমে চেষ্টা করে। কেননা এই অন্তহীন প্রচেষ্টাই মানবজীবনের একমাত্র চরমতম সত্য। 'নোঙর' কবিতায় কবির এই ভাবনাই প্রকাশিত হয়েছে।


6.  নোঙর কখন জানি পড়ে গেছে তটের কিনারে।-এখানে 'কখন' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে কেন? কবির এরূপ উপলব্ধির কারণ আলোচনা করো।২ + ৩ = ৫

উত্তরঃ কবি অজিত দত্ত জীবনসমুদ্রে পণ্যবাহী তরি অর্থাৎ আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পাড়ি দিতে চান। কিন্তু কবির অজান্তেই কখন তাঁর তরি নোঙরে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রথমে কবি সাংসারিক বাস্তবতা, দায়দায়িত্ব, কর্তব্য ইত্যাদির মতো অনতিক্রম্য বিষয়গুলি উপলব্ধি করতে পারেননি। ক্রমে সময়ের সাথে সাথে ব্যাপারটি যখন তাঁর অনুভূত হয় তখন তিনি সচেতনভাবে 'কখন' শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

 'নোঙর' কবিতায় কবি জীবনে চলার পথকে সমুদ্রযাত্রার সাথে তুলনা করে সে যাত্রা ব্যর্থ অথচ অন্তহীন বলে উল্লেখ করেছেন। সমুদ্রযাত্রায় বেরিয়ে তাঁর নৌকা কখন নোঙরে আবদ্ধ হয়েছে তা তিনি বুঝতেই পারেননি। 'আশাআকাঙ্ক্ষা' রূপী ঢেউগুলি কখনও নৌকার উপর আছড়ে পড়ে কখনও ভাটার নৈরাশ্যের মধ্যে তা হারিয়ে যায়। এই বিপর্যয়ের কালে কবি দিভ্রান্ত নাবিকের মতো নক্ষত্র দেখে দিক ঠিক করে নেন। কবির নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি সমুদ্রের গর্জনে কেঁপে ওঠে। আসলে নৌকা কথকের বদ্ধ জীবন, যা সংসারের তটে মায়া-মমতা, স্নেহ-কর্তব্য ইত্যাদির বাঁধনে আবন্ধ আর অন্যদিকে সুদূরের হাতছানি-এই বৈপরীত্যেই মানবজীবন, যা ছিন্ন করা অসম্ভব। তাই কবি বলেন নোঙরের কাছি বাঁধা চিরকাল।


7.  'তারপর ভাঁটার শোষণ/স্রোতের প্রবল প্রাণ করে আহরণ।/জোয়ার-ভাঁটায় বাঁধা এ-তটের কাছে/আমার বাণিজ্য-তরী বাঁধা পড়ে আছে।- 'স্রোতে প্রবল প্রাণ আহরণ' করার তাৎপর্য কী? 'বাণিজ্য-তরী' বাঁধা পড়ে থাকার মাধ্যমে। জীবনের অতৃপ্তির বেদনা ও যন্ত্রণা কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে লেখো। ২+৩=৫

উত্তরঃ মানুষ স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। সে স্বপ্ন ফেরি করে বেড়ায়। পাঠ্য রূপকধর্মী কবিতায় কবি অজিত দত্তও এক স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। তিনি দূর সমুদ্র পাড়ে স্বপ্ন ফেরির উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে তৎপর কিন্তু তটের কিনারে নোঙর বিপর্যস্ত করে তোলে তাঁর যাত্রাকে। কর্মময় জীবনের বাস্তব সমস্যাগুলি সেই নোঙর ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়। তবুও আশা-আকাঙ্ক্ষার স্বপ্নিল জোয়ারের ঢেউ তাঁর মনে আলোড়ন তোলে। কিন্তু দৈনন্দিন ঘাত-প্রতিঘাত ও কর্মব্যস্ততায় ভাটার শোষণে ক্রমশ স্তিমিত ও স্তন্ধ হয়ে যায়।

সীমিত গণ্ডির মধ্যে থেকে দূর-দিগন্তে পাড়ি দেওয়া মধ্যবিত্তের অমোঘ বাসনা। কবির ক্ষেত্রেও যার অন্যথা ঘটেনি। কিন্তু প্রতিদিনের বাস্তব সমস্যা সেই পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। কবি তবু সারারাত দাঁড় টেনে নৌকাকে গতিশীল রাখতে চান। জীবনে জোয়ারভাটা রূপ আকাঙ্ক্ষা ও ব্যর্থতা তার মনকে ছুঁয়ে যায়। জীবনের এই দোলাচলকে পাথেয় করে তিনি দাঁড়-পাল ইত্যাদির সাহায্যে নৌকাকে সচল করে নোঙরের কাছি থেকে মুক্ত করতে চান। হতাশার মাঝেও নক্ষত্রলোকের হাতছানি কবিকে অনুপ্রাণিত করে। তাই কবি নতুন উদ্যমে সাংসারিক আবদ্ধতা ভেঙে জীবনতরিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যাকুল হন। কিন্তু বাস্তব সত্য এই যে মায়া-মোহ-কর্তব্যের অলঙ্ঘ্য নোঙরে জীবন সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ। এভাবেই কবি মধ্যবিত্তের অতৃপ্ত বেদনা ও যন্ত্রণা প্রকাশ করেছেন।


8.  'আমার বাণিজ্য-তরী বাঁধা পড়ে আছে।'-কার 'বাণিজ্য-তরি' কোথায় বাঁধা পড়ে আছে? এই 'বাঁধা পড়ে' থাকার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। ২+৩=৫

উত্তরঃ আমাদের পাঠ্য অজিত দত্তের 'নোঙর' কবিতাটি এ রূপকের মোড়কে ঢাকা। কবিতায় কবি অর্থাৎ কথকের কথায়। তাঁর বাণিজ্যতরি জোয়ারভাটায় সমুদ্রতটে আটকা পড়ে আছে। অর্থাৎ কথকের আশা-আকাঙ্ক্ষারূপী জীবনতরি পারিপার্শ্বিক প্রতিবন্ধকতার কারণে সংসারের তটরেখায় বাঁধা পড়েছে। II কবি অজিত দত্ত তাঁর 'নোঙর' কবিতায় আমাদের শুনিয়েছেন এক ব্যর্থ অথচ অন্তহীন সমুদ্রযাত্রা। যে যাত্রায় বেরিয়ে তিনি তটের কিনারে আটকে গেছেন। আসলে কবি রূপকের অন্তরালে মধ্যবিত্তের গণ্ডিবদ্ধ জীবন থেকে মুক্ত হবার কথাকে ব্যস্ত কী করেছেন। মধ্য-বিত্তের আশা-আকাঙ্ক্ষারূপী জোয়ারের ঢেউগুলি ফুলে ফেঁপে উঠে জীবনতরিতে মাথা কুটে মরে। তারপরে তা স্তিমিত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ ভাটার শোষণে জোয়ারের উদ্দামতা যেমন প্রাণহীন হয়ে পড়ে ঠিক তেমনি মানুষের জীবনের নানান প্রতিবন্ধকতা ও সাংসারিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে সেও হয়ে পড়ে প্রাণহীন। তবু মানুষ দাঁড় টানে অর্থাৎ এগিয়ে যাবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। যদিও তা বিদ্রুপের মতো শোনায়। আসলে একদিকে সুদূরের হাতছানি আর অন্যদিকে গণ্ডিবদ্ধতা-এই দুই বৈপরীত্যে বাঁধা মানুষের জীবন। তা কোনো দিনও ছিন্ন করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই কবি উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন যা অতীব বাস্তব।


9.  'নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি সাগরগর্জনে ওঠে কেঁপে, স্রোতের বিদ্রুপ শুনি প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে।' -'স্রোতের বিদ্রুপ' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? এ প্রসঙ্গে কবির কোন্ মনোভাব ফুটে উঠেছে লেখো। ২+৩ = ৫

উত্তরঃ কবি অজিত দত্ত তাঁর রূপকধর্মী কবিতা 'নোঙর'-এ মানুষের জীবনকে নৌকার সাথে তুলনা করেছেন। নৌকা যেমন নদী বা সমুদ্রে বয়ে চলে মানুষের জীবনও তেমনি সংসার সমুদ্রে বয়ে চলে। দাঁড় যেমন নৌকাকে এগিয়ে নিয়ে যায় ঠিক তেমনি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত করতে মানুষও প্রতিনিয়ত ছুটে চলে। কিন্তু বাধ সাধে কর্তব্যের টান, যা জীবনতরিকে সংসারতটে নোঙর বদ্ধ করে রাখে। একাকী কবি তাই অনুভব করেন তাঁর এই সাংসারিক বন্ধনমুক্তির প্রয়াস অর্থাৎ দাঁড় টানাকে স্রোত অর্থাৎ গতিময় জীবন যেন বিদ্রুপ করে।

■ মধ্যবিত্ত জীবনের দুর্নিবার আকর্ষণ প্রাত্যহিক গতিবদ্ধ জীবনকে অতিক্রম করে দূর দিগন্তে পাড়ি দেওয়া। কবির ক্ষেত্রেও তার অন্যথা ঘটেনি। কিন্তু সাংসারিক কর্তব্য ও নানান প্রতিকূলতা তাকে বার বার বাধা দান করে। কবি কিন্তু তবুও দাঁড় টানা বন্ধ করেননি। জোয়ারের ঢেউয়ের মতো ইচ্ছা-বাসনাগুলি উথলে ওঠে আবার ভাটার শোষণে তা স্থিমিত হয়ে যায়। আসলে কল্পনা-বাসনার জোয়ারভাটাতেই মানুষের আকাঙ্ক্ষাপূর্ণ বাণিজ্যতরি বাঁধা পড়েছে। সময়রূপী স্রোত কবিকে যেন বিদ্রূপ করতে থাকে। তবু কবি যেন নক্ষত্রলোকের হাতছানিতে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন উদ্যোগে সাংসারিক বন্ধন অগ্রাহ্য করতে চান। কিন্তু সে বাধা যে অলঙ্ঘ্য কবি তা বুঝতে পারেন। এভাবেই কবিতায় মধ্যবিত্তের স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্ন ভাঙার বেদনার ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে।

No comments:

Post a Comment