প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রি "স্বর্ণপর্ণী" প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | নবম শ্রেনীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 9th Bangla Professor Shonkur Dayri Question and Answers Part-3 (MCQ, SAQ, DAQ) - Psycho Principal

Fresh Topics

Saturday, 26 April 2025

প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রি "স্বর্ণপর্ণী" প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | নবম শ্রেনীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 9th Bangla Professor Shonkur Dayri Question and Answers Part-3 (MCQ, SAQ, DAQ)

 

প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রি "স্বর্ণপর্ণী" 
প্রশ্ন উত্তর








❐ কমবেশি ১৫টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :


1.  নিউটনের দীর্ঘায়ু হওয়ার কারণ কী?

উত্তরঃ   সাধারণত বিড়ালদের গড় আয়ু চোদ্দো-পনেরো হলেও শঙ্কুর আবিষ্কৃত মার্জারিনের কারণে নিউটনের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটেছে।


2. শঙ্কুর আবিষ্কৃত অ্যানাইহিলিন প্রয়োগ করলে কী হয়?

উত্তরঃ  অ্যানাইহিলিন প্রয়োগের ফলে শত্রু নিহত না হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়।


3. লিঙ্গুয়াগ্রাফের কাজ কী?

উত্তরঃ   লিঙ্গুয়াগ্রাফ যে-কোনো অচেনা ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের কাজ করে।


4. প্রোফেসর শঙ্কুর বাবা কী ছিলেন?

উত্তরঃ  প্রোফেসর শঙ্কুর বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক। তাঁকে গিরিডির মানুষেরা বলত ধন্বন্তরি।


5.  বাবার কোন্ কথা শঙ্কুর মনে রেখাপাত করেছিল?

উত্তরঃ  বাবার মতে, স্বচ্ছলতার প্রয়োজন মিটিয়ে ক্ষমতা থাকলেও অঢেল রোজগারের প্রয়োজন নেই। বরং দরিদ্র, নিরক্ষর, উপার্জনে অক্ষমদের দুঃখ লাঘব করাতেই জীবনের চরম সার্থকতা।


6. প্রোফেসর শঙ্কু কোথায় অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন?

উত্তরঃ   প্রোফেসর শঙ্কু মাত্র কুড়ি বছর বয়সে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।


7. ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর কী অসুস্থতা ছিল?

উত্তরঃ  ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর অকস্মাৎ হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেত। এই অসুস্থতার নাম হার্টব্লক (এখন পেসমেকার যন্ত্রের সাহায্যে হার্টব্লকের চিকিৎসা করা হয়)।


8. টিকড়িবাবা কে?

উত্তরঃ  গিরিডির কাছে উশ্রী নদীর ওপারে একটি গ্রামের গাছতলায় বসে ধ্যান করতেন টিড়িবাবা। এই অঞ্চলে নামডাক থাকায় লোকেরা তাঁকে দর্শন করতে যেত।


9. শঙ্কুর বাবার অসুস্থতার উপশমের জন্য টিড়িবাবা কী উপায় বাতলেছিলেন?

উত্তরঃ  টিড়িবাবা নিজের গুরুর হাতে স্বর্ণপর্ণীর (সোনেপত্তী) পাতা খেয়ে পান্ডুরোগ থেকে উদ্ধার পেয়েছিলেন। অসুস্থ ত্রিপুরেশ্বরকেও তিনি এই ওষুধের কথাই বলেছিলেন।


10. স্বর্ণপর্ণীর উল্লেখ কোন্ বইতে আছে?

উত্তরঃ   ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু চরক সংহিতার পাতায় স্বর্ণপর্ণীর উল্লেখ পেয়েছিলেন।


11. স্বর্ণপর্ণী কোথায় পাওয়া গিয়েছিল?

উত্তরঃ   টিড়িবাবার নির্দেশ মতো প্রোফেসর শঙ্কু কসৌলির উত্তরে চামুণ্ডা মন্দিরের পিছনের জঙ্গলে ঝরনার পাশে একটিমাত্র স্বর্ণপর্ণী গাছড়ার খোঁজ পেয়েছিলেন।


12.  'আমার মনটা নেচে উঠল'-বক্তার মন আনন্দে নেচে উঠেছিল কেন?

উত্তরঃ   টিড়িবাবার নির্দেশমতো কালকা শহর থেকে বহু দূরে হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত কসৌলির চামুণ্ডা মন্দিরের পিছনের গভীর জঙ্গলে মাত্র পনেরো মিনিট হাঁটতেই 'স্বর্ণপর্ণী' গাছটি আবিষ্কৃত হওয়ায় মনটা আনন্দে নেচে ওঠে।


13. স্বর্ণপর্ণীর খোঁজ পেয়ে শঙ্কু কী করেছিলেন?

উত্তরঃ  শঙ্কু স্বর্ণপর্ণী গাছড়াটিকে শিকড়সুদ্ধ তুলে গিরিডিতে নিয়ে আসেন। তারপর মালি হরকিষণের ওপর এর পরিচর্যার ভার দেন।


14.  স্বর্ণপর্ণীর অবিশ্বাস্য গুণাগুণ কীভাবে টের পাওয়া গেল?

উত্তরঃ   প্রোফেসর শঙ্কু ওষুধের দৌড় যাচাই করার উদ্দেশ্যে, তা উদরিতে আক্রান্ত মরণাপন্ন রোগী জয়গোপাল মিত্রের ওপর প্রয়োগ করেন এবং তিনি রাতারাতি সুস্থ হয়ে ওঠেন।


15.  প্রোফেসর শঙ্কু ওষুধটির নামকরণ করলেন কীভাবে?

উত্তরঃ   শঙ্কুর পরিকল্পনায় আধুনিক ওষুধের মতো বড়ি আকারের স্বর্ণপণী যখন যন্ত্রের নল থেকে বেরিয়ে আসছে তখন বিদ্যুৎ ঝলকের মতো মিরাকিউরল নামটি তাঁর মাথায় আসে।


16.  মিরাকিউরল নামকরণ করার পিছনে কী যুক্তি ছিল?

 উত্তরঃ  এই ওষুধের সাহায্যে সব অসুখের নিমেষে উপশম হয় বলে শঙ্কু মিরাকিউরল বা সর্বরোগনাশক বড়ি নামকরণ করেছিলেন (অর্থাৎ তাঁর ভাষায় মিরাকল কিওর ফর অল কমপ্লেন্টস)।


17.  শঙ্কুর পত্রবন্ধু জেরেমি সন্ডার্সের কী হয়েছিল?

উত্তরঃ   শঙ্কুর পত্রবন্ধু জেরেমি সন্ডার্সের যকৃতে ক্যানসার হয়েছিল।


18.  জেরেমি সন্ডার্স কেন শঙ্কুকে ইংল্যান্ডে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন?

উত্তরঃ  ইংল্যান্ডের বৈজ্ঞানিক ও ডাক্তার মহলে স্বর্ণপর্ণী বিষয়ে জানানো আর এর রাসায়নিক বিশ্লেষণের জন্য সন্ডার্স শঙ্কুকে ইংল্যান্ডে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।


19.  শঙ্কু ইংল্যান্ডে গিয়ে কী কী দেখেছিলেন?

উত্তরঃ  শঙ্কু ইংল্যান্ডে গিয়ে কেমব্রিজ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কিটস্-এর বাড়ি, ব্রিটিশ মিউজিয়াম, ন্যাশনাল গ্যালারি, ত্যুসোর মিউজিয়াম প্রভৃতি দেখেছিলেন।


20.  মিরাকিউরল কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা অবান্তর ছিল কেন?

উত্তরঃ  রাসায়নিক বিশ্লেষণে স্বর্ণপর্ণীতে একটি অজ্ঞাত উপাদান আছে, রসায়নে যার পরিচিতি নেই। তাই কৃত্রিম উপায়ে মিরাকিউরল তৈরি করা যাবে না।


21.  নরবার্ট স্টাইনার কী কারণে শঙ্কুর শরণাপন্ন হয়েছিলেন?

উত্তরঃ  গেস্টাপোদের অত্যাচারে অর্ধমৃত পিতা হাইনরিখ স্টাইনারকে বাঁচানোর উদ্দেশ্য নিয়ে নরবার্ট, শঙ্কুর শরণাপন্ন হয়েছিলেন।


22.  গেস্টাপো কী?

উত্তরঃ  জার্মানিতে হিটলারের শাসনকালে ইহুদিদের অত্যাচার ও নিধনের উদ্দেশ্য নিয়ে গুপ্ত পুলিশবাহিনী বা গেস্টাপো গঠিত হয়েছিল।


23. শঙ্কু জীবনের ঝুঁকি নিয়েও জার্মানিতে যেতে চেয়েছিলেন কেন?

উত্তরঃ  ভারততত্ত্ববিদ হাইনরিখ স্টাইনারের মতো মনীষী ও পণ্ডিতকে প্রাণে বাঁচালে শঙ্কুর অন্তরাত্মা তৃপ্ত হবে, এই উপলব্ধি থেকেই তিনি জার্মানিতে যেতে চেয়েছিলেন।


24.  জার্মানিতে রওনা হওয়ার সময় শঙ্কুকে কী দিয়েছিলেন সন্ডার্স?

উত্তরঃ  কুখ্যাত গেস্টাপো-ব্ল‍্যাকশার্টদের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য শঙ্কুকে একটি লুগার অটোমেটিক রিভলভার দিয়েছিলেন সন্ডার্স।


25.  বার্লিন শহরটিকে দেখে শঙ্কুর কী মনে হয়েছিল?

উত্তরঃ   পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম শহর বার্লিন, এটা শঙ্কু অল্পসময়ের মধ্যেই টের পান। কিন্তু এর যান্ত্রিকতা তাঁর খুব একটা পছন্দ হয়নি।


26.  হিটলারশাসিত জার্মানি শঙ্কুর চোখে কেমন ছিল?

উত্তরঃ যে পুলিশশাসিত দেশের কর্ণধার অত্যাচারী, দুর্নীতির পরাকাষ্ঠা সেখানকার মানুষের নিরুদ্বিগ্ন অবস্থা, ঝলমলে দোকানপাট, সিনেমা-থিয়েটারের ভিড় অর্থাৎ আরোপিত স্বাভাবিকতা দেখে শঙ্কু আশ্চর্য হয়েছিলেন।


27.  হিটলার কী চেয়েছিলেন?

উত্তরঃ   নাতসি দলের সর্বাধিনায়ক ক্ষমতাগবী যুদ্ধবাজ হিটলার ইহুদি জাতিকে নির্মূল করে সমগ্র ইউরোপে এক বিশাল জার্মান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।


28.  আত্মম্ভরী হিটলারের কয়েকজন সঙ্গীসাথির নাম লেখো।

উত্তরঃ   হিটলারের যথেচ্ছাচারের মদতদাতা ছিলেন সামরিক বিভাগের প্রধান গোয়রিং, প্রচারসচিব গোয়বেল্স, হিমলার, রিবেনট্রপ প্রমুখ কুখ্যাত ব্যক্তি।


29.  গোয়রিং-এর পরিকল্পনা কী ছিল?

উত্তরঃ   গোয়রিং-এর পরিকল্পনা ছিল শঙ্কুকে আটক করে নিজের গ্ল্যান্ডের অসুস্থতা সারানো এবং মিরাকিউরলকে নাতসি দলের মধ্যে কুক্ষিগত করা।


30.  ব্ল‍্যাকশার্ট এরিখ-এর কী অসুখ হয়েছিল?

উত্তরঃ ব্ল‍্যাকশার্ট এরিখ-এর মৃগী বা এপিলেপ্সি হয়েছিল।


31. গোয়রিংকে ওষুধ দেওয়ার আগে শঙ্কু কোন্ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছিলেন।

উত্তরঃ গোেয়রিংকে ওষুধ দেওয়ার আগে শঙ্কু তার মাধ্যমে হাইনরিখ স্টাইনারের পথের বাধা অপসারণ করানোর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছিলেন।


32.  গোয়রিং এবং এরিখ ঘুমিয়ে পড়েছিলেন কেন?

উত্তরঃ  মিরাকিউরলের বদলে গোেয়রিং এবং এরিখের কপালে জুটেছিল সন্ডার্সের দেওয়া ঘুমের ওষুধ। ওষুধ। তাই তাই তারা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।


❐ কমবেশি ৬০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :


1.  'আমার ইনভেনশনের একটা তালিকা মনে মনে তৈরি করছিলাম। -বক্তা কে? তাঁর ইনভেনশনের তালিকাটি লেখো। ১+২=৩

উত্তরঃ  উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হলেন সত্যজিৎ রায়ের 'প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রি'র 'স্বর্ণপর্ণী' রচনার বিখ্যাত চরিত্র প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু।

শঙ্কুর প্রথম ইনভেনশন হল মিরাকিউরল বা সর্বরোগনাশক। বড়ি। এরপর এল অ্যানাইহিলিন পিস্তল যা শত্রুকে নিহত না করে নিশ্চিহ্ন করে। এ ছাড়া এয়ারকন্ডিশনিং পিল-যা জিভের তলায় রাখলে শরীর শীতকালে গরম আর গরমকালে ঠান্ডা থাকে। তারপর লুপ্ত স্মৃতি ফেরাতে রিমেমব্রেন, ঘুমের জন্য সমনোলিন, সস্তায় উজ্জ্বল আলো দেবার জন্য লুমিনিম্যাক্স, ইংরেজিতে অনুবাদের জন্য লিঙ্গুয়াগ্রাফ এবং পাখিকে শিক্ষা দেবার জন্য অর্নিথন যন্ত্র।


2. 'তবে সেটা করার আগে আমার বাবার বিষয়ে কিছু বলা দরকার' -'সেটা' বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন? বক্তা তাঁর বাবার সম্পর্কে যা বলেছেন তা লেখো। ১+২ = ৩

উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটির বস্তা হলেন প্রোফেসর শঙ্কু। 'সেটা' বলতে বক্তার যৌবনে আবিষ্কৃত মিরাকিউরল ওষুধকে ঘিরে ঘটে ব যাওয়া বেশ কিছু আশ্চর্য ঘটনার স্মৃতিকে বোঝানো হয়েছে।

বক্তার বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু গিরিডির অপ্রতিদ্বন্দ্বী আয়ুর্বেদিক এ চিকিৎসক। লোকে তাঁকে ধন্বন্তরিও বলতেন। তাঁর বাবা পসার ' অনুযায়ী রোজগার করেননি, তবে বিনা পয়সায় বহু চিকিৎসা করেছেন। ছেলের প্রতি তাঁর বাবার বক্তব্য ছিল- জীবনে অঢেল উপার্জনের প্রয়োজন নেই। জীবনে অর্থের প্রয়োজন থাকলেও হতদরিদ্রদের দুঃখ দূর করার জন্য যদি কিছু করা যায় সেটাই সবচেয়ে বড়ো আনন্দ।


3.  'বাবার এই কথাগুলো আমার মনে গভীর-ভাবে রেখাপাত করেছিল। -বক্তার বাবার কথাগুলি কী ছিল?

উত্তরঃ  বক্তার বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু। তিনি তাঁর ছেলের উদ্দেশ্যে বলেন- ক্ষমতার জোরে অনেক রোজগারের প্রয়োজন নেই। স্বচ্ছল জীবনযাপনের জন্য অর্থের প্রয়োজন থাকাটা জরুরি। এতেই মানসিক শান্তির পথ সহজ হয়। কিন্তু যাদের উপার্জন নেই, সুখ কাকে বলে জানে না, সারাজীবন দুবেলা-দুমুঠো ভাতের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তাদের দুঃখ লাঘবের জন্য কিছু করতে পারলে তার চেয়ে বড়ো সার্থকতা ও আনন্দ আর কিছুতে নেই।


4.  'সেদিনই রাত্রে বাবা আমাকে একটা আশ্চর্য ঘটনা বলেন।' -কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে? আশ্চর্য ঘটনাটিই বা কী? ১+২=৩

উত্তরঃ প্রোফেসর শঙ্কু স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াবার সুবাদে কলকাতায় থাকতেন। প্রায় দেড় বছর বাদে পুজোর ছুটিতে যেদিন বাড়ি এসেছিলেন সেদিনকার কথা বলেছেন। উল্লেখ্য যে এর দু-দিন পরেই তার বাবা মারা গিয়েছিলেন।

ঘটনাটি হল প্রোফেসর শঙ্কুর বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর কাছে একদিন শিষ্যসহ টিড়ি বাবার আগমন, কারণ তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। শঙ্কুর বাবা যখন ওষুধ বলছেন তখন বিচক্ষণ বাবাজি তাঁকে বলেন "তুই আমার চিকিৎসা করেছিস কিন্তু তোর অসুখের কী হবে?” হতাশার সুরে ত্রিপুরেশ্বর বাবু যখন এ রোগের চিকিৎসা হয় না বলেন তখন তিনি সর্বরোগনাশক 'সোনেপত্তী' গাছের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।


5.  'আমি জানি সে গাছ কোথায় আছে।.... -বক্তা কোন্ গাছের কথা বলেছেন এবং সে গাছ কোথায় পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করেছেন? ১+২=৩

উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হলেন 'স্বর্ণপর্ণী' রচনাংশের টিড়ি বাবা। তিনি যে গাছের কথা বলেছেন তা হল স্বর্ণপর্ণী অর্থাৎ সোনেপত্তী গাছ।

ত্রিপুরেশ্বর বাবুর কাছে শ্বাসকষ্টের ওষুধ আনতে এসে টিকি বাবা এই সোনেপত্তীর প্রসঙ্গ তোলেন, যা সর্বরোগনাশক কিন্তু খুবই বিরল। এতে ত্রিপুরেশ্বর বাবুর হার্টের অসুখের উপশম হতে পারে বলেও তিনি বলেন। কসৌলি থেকে তিন ক্রোশ উত্তরে ধ্বংসপ্রাপ্ত চামুণ্ডা মন্দিরের পিছনে যে জঙ্গল আছে সেখানে একটি ঝরনার পাশে এই গাছ পাওয়া যায়।


6. এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখে মুহূর্তের জন্য আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল।' -বক্তা কোন্ দৃশ্যের কথা বলেছেন? এর পর কী হয়েছিল? ২+১ = ৩

উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশটির বক্তা সত্যজিৎ রায়ের 'স্বর্ণপর্ণী' রচনার বিখ্যাত চরিত্র প্রোফেসর শঙ্কু। কলকাতায় স্কটিশ চার্চ কলেজে অধ্যাপনাকালে এক গ্রীষ্মের ছুটিতে গিরিডির বাড়ি যান। বাড়ি ফিরেই তিনি ঘরে ঢুকে দেখেন তাঁর বাবা টেবিলের পাশে মেঝেতে চিত হয়ে শুয়ে আছেন। শঙ্কু তাঁর বাবাকে এ অবস্থায় কোনোদিন দেখেনি, তাই অদ্ভুত লেগেছিল।

নাড়ি টিপে শঙ্কু বুঝেছিলেন বাবা অজ্ঞান হয়েছেন তাই তাড়াতাড়ি ডা. সর্বাধিকারীকে ডাকতে পাঠান। ডাক্তার আসার আগেই অবশ্য তার বাবার জ্ঞান ফিরে এসেছিল।


7.  'এত অল্প সময়ে আমার অভিযান সফল হবে সেটা ভাবতে পারিনি।' -বক্তা কোন্ অভিযানের কথা বলেছেন? ৩

উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হলেন সত্যজিৎ রায়ের 'স্বর্ণপর্ণী' রচনার বিখ্যাত চরিত্র প্রোফেসর শঙ্কুর। তাঁর বাবাকে টিড়িবাবা সর্বরোগনাশক ভেষজ উদ্ভিদ স্বর্ণপর্ণীর খোঁজ দিয়েছিলেন। এ কথা শঙ্কু তাঁর বাবার মুখে শুনেছিলেন। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ তার বাবার অসুখে তা প্রয়োগ করা যায়নি। তাই তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন মানুষের সেবার্থে এ গাছ সংগ্রহের জন্য। কালকা থেকে ছেচল্লিশ কিমি দূরে সাড়ে ছ-হাজার ফুট উঁচুতে কসৌলি পৌঁছে হোটেলের ম্যানেজার নন্দকিশোরের ব্যবস্থাপনায় ছোটেলালের ঘোড়ায় চেপে শঙ্কু ধ্বংসপ্রাপ্ত চামুণ্ডা মন্দিরের পিছনে বঝরনার পাশে এই গাছ আবিষ্কার করেন। প্রশ্নে এই অভিযানের কথা বলা হয়েছে।


8.  উৎকণ্ঠায় রাত্রে ভাল ঘুম হলো না' - বক্তা কে? তাঁর উৎকণ্ঠার কারণ কী? ১+২ = ৩

উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশটির বস্তা হলেন সত্যজিৎ রায়ের স্বর্ণপর্ণী রচনার অন্যতম প্রধান চরিত্র প্রোফেসর শঙ্কু।

বাবার মুখে শোনা 'স্বর্ণপর্ণী'র ভেষজ গুণকে বাস্তবে পরীক্ষা করার একটা সুযোগ শঙ্কু পান। গিরিডি থেকে কসৌলে  দুঃসাহসিক অভিযান করে তিনি এই স্বর্ণপর্ণী আনেন। কিন্তু প্রয়োগ করবেন কোথায়। হঠাৎ তাঁর মনে পড়ে উকিল জয়গোপাল মিত্রের কথা, যিনি অ্যাসাইটস্ রোগে ভুগছেন, ডাক্তারেরা যাকে জবাব দিয়েছেন। শঙ্কু পারিবারিক সম্পর্ক হেতু একবার পরীক্ষা করার সুযোগ চান এবং পেয়েও যান। এ অবস্থায় শঙ্কু সন্ধ্যায় মিত্র মশাইকে দুটো স্বর্ণপর্ণী বড়ি দুধের সাথে খাওয়ান ও বাড়ি চলে আসেন। তাই তাঁর এই পরীক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠার অন্ত ছিল না।


9.  'এই সময় একটা ঘটনা ঘটল, যেটা বলা যেতে পারে আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। -কোন্ সময়ের কথা বলা হয়েছে? ঘটনাটাই বা কী? ১+২ = ৩

উত্তরঃ  প্রোফেসর শঙ্কু ছিলেন খুঁতখুতে স্বভাবের, তাই তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত স্বর্ণপর্ণীর শুকনো পাতা গুঁড়িয়ে দুধে মিশিয়ে খাওয়ানোর প্রাচীন পন্থাটা ছিল না-পসন্দ। এজন্য তিনি মনস্থির করেন স্বর্ণপর্ণীর বড়ি তৈরি করবেন এবং তা এক মাসের মধ্যেই বাস্তবায়িত করেন। এই সময় বলতে লেখক এটাই বুঝিয়েছেন।

এই সময় কলকাতায় থাকাকালীন শঙ্কু বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ পত্রিকা 'নেচার'-এর গ্রাহক হন। পত্রিকায় জীবতত্ত্ব বিষয়ক এক লেখা পড়ে তাঁর ভালোলাগে এবং লেখক সন্ডার্সের সাথে শঙ্কু পত্রযোগে নিবিড় বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হন। সন্ডার্সের আবার জন্ম ভারতে। ইতিমধ্যে একদিন সন্ডার্সের স্ত্রী ডরোথি তাঁকে জানান যে সন্ডার্সের যকৃতে ক্যানসার। সঙ্গে সঙ্গে শঙ্কু দশটা মিরাকিউরেল বড়ি এয়ারমেলে পাঠিয়ে দেন খাবার পদ্ধতিসহ। এরপর দেড়মাস অতিক্রান্ত, একদিন অপ্রত্যাশিতভাবে গিরিডির বাড়িতে সন্ডার্সের সশরীরে আগমন- ঘটনা এটাই।


10.  নিজের যেটুকু প্রাপ্য, সেটা আদায় করে নেওয়াটাই বিচক্ষণ ব্যক্তির কাজ।'-বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে এমন কথা বলেছেন?

উত্তরঃ  উদ্ধৃত অংশটির বস্তা হলেন সত্যজিৎ রায়ের 'স্বর্ণপর্ণী' রচনার অন্তর্গত 'নেচার' পত্রিকায় প্রকাশিত জীবতত্ত্বের ওপর - রচিত প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক জেরেমি সন্ডার্সের পিতা জনাথন সন্ডার্স, - যিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক।

শঙ্কুর মিরাকিউরলের গুণে সদ্য যকৃতে ক্যানসার সারিয়ে জেরেমি সন্ডার্স শঙ্কুকে লন্ডনে নিয়ে গিয়ে তার বড়ির কেমিক্যাল অ্যানালিসিস ও তাকে দিয়ে বক্তৃতা দেবার বন্দোবস্ত করেন। এ ছাড়াও সন্ডার্স তাঁকে মিরাকিউরলের আবিষ্কর্তারূপে তুলে ধরতে চান। শঙ্কু কিন্তু তাতে না বলায় জেরেমির কাছে ধমক খান এবং সেই যে এর প্রকৃত আবিষ্কারক তা যুক্তিসহকারে শঙ্কুকে বোঝান। পরে খাবার টেবিলে জেরেমির বাবা প্রোফেসর সন্ডার্স ছেলের কথায় রেশ টেনে কথাগুলি শঙ্কুকে বলেন।


11.  'তোমার আসার কারণটা জানতে পারি কি?'- বক্তা কার উদ্দেশ্যে এমন প্রশ্ন করেছিলেন? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির আসার কারণ কী ছিল? ১+২=৩

উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশটি সত্যজিৎ রায়ের 'স্বর্ণপর্ণী' রচনা থেকে। গৃহীত। বক্তা হলেন শঙ্কুর লন্ডনস্থিত বন্ধু জেরেমি সন্ডার্স। তিনি এই প্রশ্ন করেছিলেন তাঁর বাড়িতে আসা জনৈক নরবার্ট স্টাইনারকে।

স্টাইনার হলেন জাতিতে ইহুদি। তাঁর বাবা বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের অধ্যাপক। হিটলারের রাজত্বকালে জার্মানে ইহুদিদের অবস্থা খুব করুণ ছিল। নাতসি বাহিনি তাদের মানুষ বলেই মনে করতেন না। অধ্যাপক হাইনরিখ স্টাইনার 'হিটলার জিন্দাবাদ' না বলায় নাতসিদের গুপ্ত পুলিশ গেস্টাপোর সশস্ত্র আক্রমণে মৃতপ্রায় হয়ে যায়। ইহুদি বলে কোথাও তাঁর চিকিৎসা জোটেনি। সেইজন্য নরবার্ট স্টাইনার শঙ্কুর মিরাকিউরলের খোঁজে সন্ডার্সের বাড়ি আসেন এবং তাঁকে। বার্লিনে নিয়ে গিয়ে বাবার চিকিৎসা করাতে চান।


12.  'এটা যে একটা প্রাসাদ তাতে সন্দেহ নেই, তবে প্রাচীন নয়। -কোন্ প্রাসাদের কথা বলা হয়েছে? প্রাসাদটির বর্ণনা দাও। ১+২ = ৩

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায়ের 'স্বর্ণপর্ণী' রচনায় উল্লিখিত নাতসি বাহিনীর দ্বিতীয় প্রধান হের গোেয়রিং-এর প্রাসাদের কথা-বলা ভহয়েছে। কারনিহল নামের প্রাসাদটি গোেয়রিং-এর প্রথম স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়।

একটি বিস্তীর্ণ বাগানের তিনদিক ঘিরে প্রাসাদটি নির্মিত। বাগানে ফুলের কেয়ারি, লিলিফুল, শ্বেতপাথরের মূর্তি বিদ্যমান। সদর দরজা দিয়ে ঢুকে প্রথম ঘরটা পঞ্চাশ গজ লম্বা। মাথায় বিশাল ঝাড় লণ্ঠন, দেয়ালে বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি। এরপর রিসেপসন রুম, যেখানে বসার জন্য বড়ো বড়ো সোফা, বাহারে চেয়ার, বড়ো টেবিল যার ওপর কাগজপত্র, টেলিফোন, ফুলদানি, জলের ফ্লাস্ক ইত্যাদি রাখা যায়।


13.  'লোকটার প্রতি আমার অশ্রদ্ধা ক্রমেই বাড়ছিল। -লোকটির পরিচয় দাও। তার প্রতি বস্তার অশ্রদ্ধা গে বাড়ার কারণ আলোচনা করো। ১+২=৩

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায়ের 'স্বর্ণপর্ণী' রচনায় উল্লিখিত জার্মানির নাতসি বাহিনীর দ্বিতীয় প্রধান হের গোেয়রিং-এর কথা বলা বলে হয়েছে।

হের গোেয়রিং ছিলেন হিটলারের নাতসি বাহিনীর দ্বিতীয় প্রধান। এমনিতে তিনি হলেন গর্বোদ্ধত, অহংকারী এবং বিলাসপ্রিয়। তার প্রাসাদই তা প্রমাণ দেয়। নাতসি জার্মানদের অন্যতম কর্মসূচি ইহুদি নিধন। সেই জন্যেই তাঁরা হাইনরিখ স্টাইনার ও তাঁর পরিবারকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছিলেন। তা ছাড়া একজন মানুষ অন্যজাতি সম্পর্কে- অসভ্য, হীন, লোভী, ধূর্ত ও বিবেকহীন বললে আর যাই হোক তার প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ে না।


14. 'আমি মনে মনে স্থির করে নিয়েছিলাম, এ অবস্থায় যা বললে কাজ হবে, সেটাই বলব।' -অবস্থাটি কী ছিল এবং বক্তাই বা কী বলেছিলেন? ২+১ = ৩

উত্তরঃ  নাতসি জার্মানির দ্বিতীয় শক্তিধর গোেয়রিং ইহুদি প্রফেসর হাইনরিখ স্টাইনারের বাড়ি থেকে শঙ্কুকে তাঁর প্রাসাদ কারনিহালে নিয়ে আসেন। উদ্দেশ্য ছিল তাঁর মিরাকিউরলের সাহায্যে গোেয়রিং তাঁর গ্ল্যান্ডের অসুখ সারিয়ে নেবেন। শঙ্কু ব্যাপারটি অনুধাবন করে তাঁকে শর্ত দেন যে স্টাইনারকে ও তাঁর পরিবারকে বিনা বাধায় প্যারিসে যেতে দিলে তবেই তিনি তাঁকে ওষুধ দেবেন, এতে ক্রুদ্ধ গোেয়রিং পিস্তল দেখিয়ে শঙ্কুর ও থেকে মিরাকিউরল ছিনিয়ে নিতে চান। এখানে উক্ত অবস্থার কথা বলা হয়েছে।

বক্তা শঙ্কু বলেছিলেন যে তাঁর ওষুধ স্বপ্নে পাওয়া। কারুর অনিচ্ছায় এ ওষুধ প্রয়োগ করলে অসুখ দ্বিগুণ হয়ে যায়।


15.  'কী অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।' –এক্ষেত্রে কার অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে? সেই অদ্ভুত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দাও। ১+২ = ৩

উত্তরঃ  সত্যজিৎ রায়ের 'স্বর্ণপর্ণী' রচনার অন্যতম চরিত্র প্রোফেসর শঙ্কুর 'অদ্ভুত' অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে। জনৈক ইহুদি নরবাটের সাথে শঙ্কুর লন্ডন থেকে বার্লিন যাত্রার পর চব্বিশ ঘণ্টায় এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়। বার্লিনে এসে হাইনরিখ স্টাইনারকে মিরাকিউরল ওষুধ প্রয়োগ করে সুস্থ করে তোলেন। এ কথা শুনে জার্মানির নাতসি নেতা গোেয়রিং ও তাঁর অধস্তন কর্মচারী এরিখফ্রোমও চারটে বড়ি চেয়ে খান। তাঁরা কিন্তু শঙ্কুর চাতুরিতে বোকা বনে যান। শঙ্কু স্টাইনারের পরিবারকে প্যারিস যাবার রাস্তাও করে দেন। শঙ্কু তার চব্বিশ ঘণ্টার অভিজ্ঞতার কথা ভাবতে গিয়ে তাকে অদ্ভুত বলেছেন।


❐ কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :


1.  'নিজের পায়ে দাঁড়াতে না পারলে আমি শান্তি পাব না।'-বক্তা কে? কোন্ প্রসঙ্গে তিনি এই উক্তি করেছিলেন? এই উক্তির আলোকে বক্তার চরিত্রের কোন্ দিকটি ফুটে উঠেছে? ১+৩+১=৫

উত্তরঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু।

 এক বৃষ্টির দিনে বসে তিনি নিজের শৈশব ও যৌবনের স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন। শঙ্কু ছাত্র হিসেবে ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তাই মাত্র বারো বছর বয়সেই তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর ধাপে ধাপে তিনি আইএসসি আর ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রিতে অনার্স নিয়ে বিএসসি পাস করেন। তিনি জীবনে কখনও দ্বিতীয় হননি। এইভাবে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে পরীক্ষার পাট চুকিয়ে শঙ্কু গিরিডিতে ফিরে আসেন। তাঁর বাবার খুব ইচ্ছা ছিল বিজ্ঞানের এই মেধাবী ছাত্রটি বছর চারেক শিল্প-সাহিত্য-দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করুক। একই সঙ্গে তিনি শঙ্কুকে এও জানিয়েছিলেন, তাঁর জীবনের সমস্ত সঞ্চয়ের একটা অংশ লোকহিতকর কাজে ব্যবহৃত হলেও, বাকি সবটুকুই শঙ্কুর। সুতরাং শঙ্কু চাকরি না করে শুধু গবেষণার কাজ নিয়েই মগ্ন থাকতে পারেন। শঙ্কু বাবার প্রথম প্রস্তাবে রাজি হলেও, দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে তাঁর মন থেকে সায় ছিল না বলেই, উপরোক্ত মন্তব্যটি করেন।

প্রোফেসর শঙ্কুর ব্যক্তিত্বের মধ্যে লুকিয়ে থাকা আত্মসম্মানবোধ এবং স্বাবলম্বনের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটেছে এই বক্তব্যের মাধ্যমে। তাই নিজের পায়ে দাঁড়ানো; একদিকে যেমন স্বনির্ভর হওয়ার ইচ্ছা, অন্যদিকে তেমনি স্বতন্ত্র আত্মপরিচয় গড়ে তোলার অঙ্গীকারও বটে। এই উভয়ক্ষেত্রেই তিনি সফল হয়েছিলেন।


2.  'সোনেপত্তীর নাম শুনেছিস?'-কোন্ প্রসঙ্গে কার এই উক্তি? কে কীভাবে 'সোনেপত্তীর' সন্ধান পেয়েছিলেন? তার ফল কী হয়েছিল? ২+ ১ = ৫

উত্তরঃ গিরিডির স্বনামধন্য সাধু টিড়িবাবা শিষ্যদের অনুরোধে শ্বাসকষ্টের উপশমের জন্য সুচিকিৎসক ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর কাছে আসেন। সেখানে এসে সাধু তাঁর আশ্চর্য ক্ষমতাবলে ত্রিপুরেশ্বরের হার্টব্লকের অসুস্থতার কথা টের পান। এই রোগ নিরাময়ের প্রসঙ্গে তিনি সোনেপত্তী বা চরক সংহিতায় উল্লিখিত স্বর্ণপর্ণীর কথা বলেছিলেন। এখানে উল্লেখ্য টিড়িবাবার গুরু তাঁকে এর সাহায্যেই কঠিন পাণ্ডুরোগের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলেন।

টিড়িবাবার মতে, কসৌলি থেকে তিন ক্রোশ উত্তরে চামুণ্ডা মন্দিরের পিছনে, ঝরনার পাশেই স্বর্ণপর্ণী বা সোনেপত্তীর গাছ গজায়। বাবার মুখে এই বিস্ময়কর কাহিনি শুনে প্রোফেসর = শঙ্কু অসুস্থ মানুষটির আরোগ্যের আশায় কসৌলি রওনা হতে = চেয়েছিলেন। কিন্তু ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু আশঙ্কা করেছিলেন, তার হাতে আর অতদিন সময় নেই। এই ঘটনার দিন দুয়েক পরে হার্টব্লকেই তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর বাবার শ্রাদ্ধের কাজকর্ম মিটিয়েই সময় নষ্ট না করে, প্রোফেসর শঙ্কু কসৌলি রওনা হন। সেখানে তিনি চামুণ্ডা মন্দিরের পিছনের জঙ্গলে ঝরনার পাশেই স্বর্ণপর্ণীর সন্ধান পান। শিকড়সমেত স্বর্ণপর্ণীর সেই একটিমাত্র - নমুনা সংগ্রহ করে তিনি গিরিডিতে ফিরে আসেন।

শঙ্কু স্বর্ণপর্ণীর এই হলুদ পাতাকে কাজে লাগিয়েই সর্বরোগনাশক বড়ি মিরাকিউরল তৈরি করেন, যা তাঁর জীবনের প্রথম আবিষ্কার। যদিও এর কৃতিত্ব তিনি কখনোই একা দাবি করেননি।


3.  'দুশ্চিন্তায় রাত্রে আমার ঘুম হচ্ছে না'-কার ঘুম হচ্ছে না? তার ঘুম না হওয়ার কারণ কী? ২ + ৩ = ৫

উত্তরঃ নাতসি বাহিনীর ব্ল্যাকশার্ট এরিখ ক্রোমের ঘুম হচ্ছে না। এই এরিখ ফ্রোমই প্রোফেসর শঙ্কুকে নরবার্ট স্টাইনারের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসেছিল।

 ব্ল‍্যাকশার্ট এরিখ ফ্রোমের ঘুম না হওয়ার কারণ হল তার অসুস্থতা। একমাস ধরে তার এমন এক অসুখের সূত্রপাত হয়েছে, যার ফলে তার চাকরি না থাকার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। অসুখটির নাম মৃগীরোগ, ইংরেজিতে যাকে এপিলেপ্সি বলে। এই রোগটি খুবই খারাপ। যখন তখন আক্রমণ করে। মানুষ দাঁতমুখ খিঁচিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে এর ফলে। এক মাসের মধ্যে তিন-তিনবার এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে এরিখ। ডাক্তার দেখিয়েছে, ওষুধও খাচ্ছে সে। কিন্তু অসুখ সারতে তার বেশ সময় লাগবে। এমন অবস্থায় অত্যন্ত কাতরভাবে ব্ল‍্যাকশার্ট এরিখ শঙ্কুর কাছে তার সর্বরোগনাশক মিরাকিউরলের বড়ি প্রার্থনা করেছে। শঙ্কুও শিশি থেকে তাকে চারটে মিরাকিউরলের বড়ি দিয়েছে।


4.  'এইসময় একটি ঘটনা ঘটল, যেটা বলা যেতে পারে আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল।'-কোন্ প্রসঙ্গে কার উক্তি? এখানে 'জীবনের মোড়' ঘুরিয়ে দেওয়া বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন? ২+৩=৫

উত্তরঃ  'স্বর্ণপর্ণী' গল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশটির বস্তা প্রোফেসর শঙ্কু। তিনি বাবার কাছে টিড়িবাবার আশ্চর্য কাহিনি শুনেছিলেন। এরপর বাবার মৃত্যুর কয়েকদিন পরেই তিনি কসৌলি গিয়ে স্বর্ণপণীর (চরক সংহিতায় উল্লিখিত) সন্ধান পান। গিরিডিতে ফিরে এসে অর্ধমৃত জয়গোপাল মিত্রের উপর প্রয়োগ করলে 'সোনেপত্তী'-র অবিশ্বাস্য গুণ সত্য বলে প্রমাণিত হয়। প্রোফেসর শঙ্কু এই সর্বরোগহর স্বর্ণপর্ণীর পাতার সাহায্যেই এবার মিরাকিউরল তৈরি করেন। ঠিক এই সময়ের একটি ঘটনার কথা বলতে গিয়ে তিনি আলোচ্য প্রসঙ্গটির অবতারণা করেছিলেন।

বিখ্যাত 'নেচার' পত্রিকার সূত্রে, ইংল্যান্ডের জীবতত্ত্ববিদ জেরেমি সন্ডার্স এবং প্রোফেসর শঙ্কুর মধ্যে পত্রবন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। সমবয়স্ক এই দুজন গুণী মানুষের অল্পদিনের মধ্যেই আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। মাস আষ্টেক নিয়মিত চিঠি চালাচালির পর, হঠাৎ মাসখানেক সন্ডার্সের কোনো প্রত্যুত্তর না পেয়ে শঙ্কু উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। এমন সময় তাঁর স্ত্রী ডরোথির চিঠি পেয়ে জানতে পারেন জেরেসি সন্ডার্স যকৃতের ক্যানসারে আক্রান্ত। এই নিদারুণ দুঃসংবাদ শুনে শঙ্কু এয়ারমেলের মাধ্যমে দশটি মিরাকিউরলের বড়ি পাঠান। এরপর ইংল্যান্ড থেকে দেড়মাস কোনো খবর না পাওয়ায় শঙ্কু যখন মিরাকিউরলের ভক্ষমতা সম্পর্কে সন্দিহান, তখনই সুস্থ রোগমুক্ত সন্ডার্স সশরীরে গিরিডিতে এসে হাজির হন। তিনি শঙ্কুর মুখে সব শুনে, তাঁকে নিয়ে ইংল্যান্ডে যান। সেখানে বৈজ্ঞানিক ও ডাক্তার মহলে কা বক্তৃতার পরে শঙ্কু এবং তাঁর আবিষ্কৃত মিরাকিউরলের খ্যাতি সংবাদপত্রের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। অধ্যাপক শঙ্কু আবিষ্কারক হিসেবে পরিচিতি পান, একেই তিনি জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ঘটনা বলে চিহ্নিত করেছেন।


5. 'কিন্তু আমার বড়ির অ্যানালিসিসের ফি কী খবর-কীসের অ্যানালিসিসের কথা বলা হয়েছিল?  অ্যানালিসিসের ফলে কী জানা গিয়েছিল? তা বক্তার মনে ক 'মিশ্র ভাব' সৃষ্টি করেছিল কেন? ১+২+২ = ৫

উত্তরঃ  জেরেমি সন্ডার্সের সঙ্গে ইংল্যান্ডে পৌঁছে প্রোফেসর সুে শঙ্কু স্বর্ণপর্ণীর কেমিক্যাল অ্যানালিসিস বা রাসায়নিক বিশ্লেষণ অন করতে দিয়েছিলেন। সেই অ্যানালিসিস বা বিশ্লেষণের খবরই ইহ শঙ্কু জানতে চেয়েছিলেন।

 রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছিল স্বর্ণপর্ণীতে সবরকম ভিটামিনই কাল রয়েছে। এ ছাড়া পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, আয়োডিন-যেন মনে হয় রসুনের উপাদানের তালিকা। সন্ডার্সের মত ছিল, অ্যালিল সালফাইড আছে বলেই বিভিন্ন রোগের জীবাণু সে এর কাছে সহজেই পরাস্ত হয়। তবে এই রিপোর্টের সবচেয়ে কী অর্থপূর্ণ কথাটি হল, এর মধ্যে এমন একটি উপাদান আছে, যার কোনো পরিচিতি রসায়নে নেই।

 কেমিক্যাল অ্যানালিসিসের এই রিপোর্ট দেখে দুজনেই নিশ্চিত হন মিরাকিউরল কৃত্রিম উপায়ে গবেষণাগারে তৈরি করা যাবে না। 

এর ফলে শঙ্কুর মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মিরাকিউরল যে তাঁর একার সম্পত্তি এটা ভাবতে শঙ্কুর ভালোলাগে, কিন্তু কোটি কোটি মুমূর্ষু মানুষ এর রোগনাশক ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হবে জেনে তাঁর মনখারাপ হয়।


6.  'একজন মনীষীর ত্রাণকর্তা হতে পারলে তোর জীবন ধন্য হবে।'-কোন্ প্রসঙ্গে এমন মনে হয়েছিল? 'মনীষীর ত্রাণকর্তা' বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন? ২ + ৩ = ৫

উত্তরঃ বিভিন্ন সংবাদপত্রে শঙ্কুর মিরাকিউরলের খবর বেরনোয় দেশ-বিদেশে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। জার্মানির কাগজে এই আশ্চর্য ওষুধের খবর পড়েন ভারততত্ত্ববিদ হাইনরিখ স্টাইনারের ছেলে নরবার্ট স্টাইনার। সে সময় কুখ্যাত গোেয়রিং-এর গেস্টাপো বাহিনীর বেপরোয়া প্রহারে তাঁর পিতা হাইনরিখ মুমূর্ষু-অর্ধমৃত। অথচ জার্মানির সমস্ত হাসপাতালে তখন ইহুদিদের প্রবেশ নিষেধ। তাঁদের ইহুদি গৃহচিকিৎসক প্রাণভয়ে গৃহবন্দি। এই অবস্থায় তিনি বাধ্য হয়ে বাবাকে বাঁচানোর আশা নিয়ে ইংল্যান্ডে এসে শঙ্কুর শরণাপন্ন হন। কিন্তু হিটলার শাসিত জার্মানিতে নাতসি পার্টির লোকেরা ছাড়া কেউ নিরাপদ ছিল না জেনেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শঙ্কু জার্মানিতে যেতে চেয়েছিলেন, কেননা তাঁর মনে হয়েছিল বাবা বেঁচে থাকলে উপরোক্ত মন্তব্যটি করতেন।

 অত্যাচারী একনায়ক হিটলারের ধারণা ছিল দীর্ঘকাল ধরে ইহুদিরা জার্মানির প্রভূত ক্ষতিসাধন করে আসছে। হিটলারের মতে, ইহুদিরা অসভ্য, হীন, লোভী, ধূর্ত ও বিবেকহীন। তাই ইহুদিদের উৎখাত করতে পারলে তবেই জার্মানির পূর্ব গৌরব ফিরে আসবে। যে সমস্ত জার্মানের শিরায় এক ফোঁটা ইহুদি রক্ত নেই, হিটলার একমাত্র তাঁদেরকেই মানুষ বলে মনে করতেন। এইসব উদ্ভট অজুহাত দেখিয়ে হিটলার ইহুদি-নিধন শুধু করেছিলেন। সমস্ত জার্মানি জুড়ে ব্যাপক ধরপাকড়, প্রহার, হত্যা, সব উচ্চপদ থেকে ইহুদিদের সরিয়ে দেওয়া, যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া- কোনোকিছুই হিটলারের অনায়ত্ত ছিল না। হিটলার-শাসিত জার্মানিতে শত শত পীড়িত ইহুদির প্রতিভূ হয়ে ওঠেন হাইনরিখ স্টাইনার। ভারতপ্রেমিক এই সংস্কৃতজ্ঞ বিদ্বান মানুষটিকে তাই শঙ্কু ছাড়া, তখন আর কারও পক্ষেই বাঁচানো সম্ভব ছিল না।


7.  'এ ওষুধ স্বপ্নে পাওয়া ওষুধ, হের্ গোেয়রিং'-'গোেয়রিং' কে ছিলেন? তাঁকে এ কথা বলার কারণ' কী ছিল? এর ফলে কী হয়েছিল? ১+২+২ = ৫

উত্তরঃ কুখ্যাত নাতসি সর্বাধিনায়ক হিটলারের প্রধান অনুচরদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হেরমান গোেয়রিং। তিনি জার্মানির সামরিক প্রধান ছিলেন। গেস্টাপো নামক নৃশংস গুপ্ত ঘাতক বাহিনীর স্রষ্টা এই গোেয়রিং। নৃশংস, অত্যাচারী, বিবেকহীন এবং ইহুদিবিদ্বেষী হিসেবে গোেয়রিং সমধিক পরিচিত।

 মিরাকিউরলের স্রষ্টা প্রোফেসর শঙ্কু জার্মানিতে হাইনরিখ স্টাইনারের বাড়িতে এসেছেন, এ খবর গোেয়রিং-এর কাছে পৌঁছোয়। তিনি নৃশংস ব্ল‍্যাকশার্ট বাহিনীকে নির্দেশ দেন শঙ্কুকে কারিনহলে ধরে নিয়ে আসার জন্য। শঙ্কুর মুখ থেকে স্টাইনারের আরোগ্যের খবর পেয়ে গোেয়রিং ক্ষোভে গর্জে উঠলেও, শঙ্কু সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন। এরপরেই গোেয়রিং-এর আসল অভিসন্ধি প্রকাশ পায়। তিনি মিরাকিউরলের সাহায্যে নিজের গ্ল্যান্ডের গোলমাল সারাতে চান। শঙ্কু ওষুধ দেওয়ার আগে শর্ত আরোপ করেন, স্টাইনারের নির্বিঘ্নে প্যারিস যাত্রার বন্দোবস্ত করতে হবে। ক্রোধে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য গোয়রিং-এর নির্দেশে সহকারী এরিখ শঙ্কুর দিকে রিভলভার উঁচিয়ে দাঁড়ায়। ঠান্ডা মাথায় শঙ্কু পরিকল্পনা বদলে 'স্বপ্নে পাওয়া' ওষুধের গল্প ফাঁদেন। কেননা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল গোেয়রিংকে বোঝানো যে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই ওষুধ প্রয়োগ করলে বিপরীত ফল হয়।

 লোভী ফন্দিবাজ গোেয়রিং যখন টের পান, এতে তাঁর অসুস্থতা দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, তিনি শঙ্কুর শর্ত মেনে নেন। তৎক্ষণাৎ অ্যাস্টল নামক এক ব্যক্তিকে টেলিফোনে স্টাইনারদের পথে বাধা সৃষ্টি না করার নির্দেশ দেন।


8. 'আমি বুঝলাম বাবা স্বর্ণপণীর কথা বলছেন-'স্বর্ণপর্ণী' কী? এই গল্পে তার উপযোগিতা কীভাবে প্রমাণিত হয়েছে? ১+৪=৫

উত্তরঃ স্বর্ণপর্ণী এক ধরনের গাছড়া। এটি গাছ নয়। প্রাচীন আয়ুর্বেদশাস্ত্রে, চরক সংহিতায় এর নাম পাওয়া যায়।

এই গল্পের নামকরণ থেকে ঘটনার পরম্পরা সবটাই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে স্বর্ণপর্ণীর দ্বারা। স্বর্ণপর্ণীর প্রথম খোঁজ প্রোফেসর শঙ্কু পেয়েছিলেন তাঁর বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর কাছ থেকে। ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু গিরিডির নামকরা আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ছিলেন। তাঁর কাছে জনৈক টিড়িবাবা হাঁপানির চিকিৎসা করাতে এলে ডা. শঙ্কু তাঁর কাছে স্বর্ণপর্ণীর খোঁজ পান। কসৌলির তিন কোশ উত্তরে চামুণ্ডা মন্দিরের ভগ্নাবশেষের পিছনে যে জঙ্গল, সেই জঙ্গলে ঝরনার পাশে স্বর্ণপর্ণীর গাছ হয়। যে-কোনো রকমের কঠিন পীড়ায় ওই গাছের পাতার গুঁড়ো অব্যর্থ ওষুধের কাজ করে। ডা. শঙ্কু অবশ্য নিজের জন্য ওই ওষুধ কাজে লাগাতে পারেননি। তার আগেই তিনি মারা যান। কিন্তু প্রোফেসর শঙ্কু ওই স্বর্ণপর্ণীর গাছ জোগাড় করে তার পাতা থেকে মিরাকিউরল নামের এক ওষুধ তৈরি করেন। ধীরে ধীরে তিনি ক্যানসার, যক্ষ্মা, উদরি, হাঁপানি, ডায়াবেটিস, সর্দির মতো রোগ সারিয়ে ফেলেন। এই ভাবেই গল্পে স্বর্ণপর্ণীর উপযোগিতা প্রমাণিত হয়েছে।


9. 'সন্ডার্সের হাতটা মুঠো করে ধরলাম-মুখে কিছু বলতে পারলাম না'-সন্ডার্সের হাত মুঠো করে ধরার কারণ কী? কথক মুখে কিছু বলতে পারলেন না কেন? 

উত্তরঃ  ভারতপ্রেমিক সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত হাইনরিখ স্টাইনারের প্রাণ বাঁচাতে শঙ্কু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জার্মানির উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন। সেখানে মিরাকিউরলের গুণে অধ্যাপক স্টাইনার আরোগ্যলাভ করেন। কিন্তু শঙ্কু নাতসিদের সামরিক প্রধান গোয়রিং এবং তাঁর বাহিনীর খপ্পরে পড়েন। গোেয়রিং-এর লক্ষ্য ছিল নিজের গ্ল্যান্ডের গোলমাল সারানো এবং মিরাকিউরলকে নাতসি বাহিনীর কুক্ষিগত করা। নিরুপায় শঙ্কু ওষুধ দিতে বাধ্য হলেও, স্বপ্নে পাওয়ার গল্প ফেঁদে গোয়রিংকে বাধ্য করেন, স্টাইনারের প্যারিস যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে। এরপর কয়েকটি চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে। মিরাকিউরল খেয়ে ক্রমে গোয়রিং ও এরিখ একে একে ঘুমিয়ে পড়েন। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সন্ডার্সের দেওয়া লুগার অটোম্যাটিকের সাহায্যে ড্রাইভারকে ভয় পাইয়ে, শঙ্কু নিজেকে নাতসিদের কবলমুক্ত করেন। কিন্তু ইংল্যান্ডে ফিরেও তাঁর মন থেকে বিপরীতভাবের দ্বন্দু কাটছিল না। বিশেষত দুজন নরপিশাচ মিরাকিউরলের গুণে চির আরোগ্য লাভ করল, এই অনুভূতি তাঁর মনকে বিষিয়ে তুলছিল। তখন দূরদর্শী সন্ডার্সের কাছ থেকে মিরাকিউরলের বদলে ঘুমের ওষুধ ভরে দেওয়ার কাহিনি শুনে শঙ্কুর মন থেকে সমস্ত অন্ধকার ও অস্পষ্টতা দূর হয়। ঘুমের ওষুধে নরঘাতকদের বিন্দুমাত্র উপকার হবে না বুঝে, অভিভূত হয়ে তিনি সন্ডার্সের হাত মুঠো করে ধরেন।

আমরা গল্পের এই অংশে সন্ডার্সের বিচক্ষণতা, বুদ্ধিমত্তা এবং দূরদর্শিতার যে পরিচয় পাই, তার জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। তাঁর দেওয়া ঘুমের ওষুধ যেমন শঙ্কুকে পালানোর সুযোগ করে দিয়েছে তেমনই সন্ডার্সের রিভলভারও বিপদের সময় কাজে দিয়েছে। বন্ধুর প্রতি এই আন্তরিক ভালোবাসা, একাত্মবোধ এবং সমমর্মিতা ভাষায় প্রকাশ না করে হৃদয়ে অনুভব করার বিষয়, তাই শঙ্কু মুখে কিছু বলতে পারেননি।


10.  'যারা দরিদ্র, যারা নিরক্ষর, যারা মাথা উঁচু করে চলতে পারে না, তাদের কথা ভুলিস না।'-উদ্ধৃতাংশটির বস্তা কে? 'স্বর্ণপণী' গল্পটি পড়ে বস্তাকে তোমার কেমন বলে মনে হয়েছে লেখো। ১+৪=৫

উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটির বস্তা হলেন সত্যজিৎ রায়ের 'স্বর্ণপর্ণী' রচনার কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রোফেসর শঙ্কুর বাবা গিরিডির অপ্রতিদ্বন্দ্বী আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক প্রোফেসর ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু।

 প্রোফেসর ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর আয়ুবের্দিক চিকিৎসার সুবাদে তাঁকে গরিডির লোকেরা ধন্বন্তরি বলতেন। তিনি জীবনে যথেষ্ট উপার্জন করেছেন, তবে ক্ষমতা অনুযায়ী করেননি। পেশাদারি চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি সারাজীবন বহু দরিদ্র রোগীর চিকিৎসা করেছেন। তাঁর মতে ক্ষমতা থাকলেই অনেক উপার্জন করতে হবে তা নয়। সচ্ছল জীবনযাপনের জন্য অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে মানসিক শান্তি পাওয়া যায় তবে তার চেয়ে বেশি আনন্দ ও বেশি সার্থকতা হল- যাদের কোনো সংস্থান নেই, যারা সারাজীবন দুবেলা দু-মুঠো খাবার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তাদের জন্য কিছু করতে পারলে। তিনি শিক্ষার সমগ্রতায় বিশ্বাসী। ছেলে বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র হলেও তাকে তিনি শিল্প, সাহিত্য, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে পড়াশোনায় পরামর্শ দেন। আত্মমর্যাদার প্রশ্নে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রয়োজন- ছেলের এই মতকে ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষটি মেনে নেন। চরক সংহিতায় স্বর্ণপর্ণীর প্রসঙ্গে তার জ্ঞান আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে তাঁর ব্যুৎপত্তিকে মনে করিয়ে দেয়। অথচ সাধুর কাছে এই জীবনদায়ী ওষুধের সন্ধান পেয়েও তিনি নিজের শরীরের অবস্থা ও কসৌলিয় দূরত্ব বিবেচনা করে ছেলেকে তা সংগ্রহে বাধা দিয়েছেন। অসুস্থতা, মৃত্যু- জীবনের এই স্বাভাবিক পরিণতিগুলি সহজে গ্রহণ করার ক্ষমতা তাঁর মধ্যে ছিল। সবদিক বিচার করে এই সৎ, আদর্শবাদী, নির্লোভ, মহৎপ্রাণ মানুষটিকে এক অনন্য চরিত্রের বলেই মনে হয়।


11.  স্বর্ণপর্ণী আবিষ্কারের যে কাহিনি গল্পে রয়েছে তা সংক্ষেপে নিজের ভাষায় লেখো। ৫

উত্তরঃ প্রোফেসর শঙ্কুর অত্যাশ্চর্য স্বর্ণপর্ণীর আবিষ্কারের পিছনে যে দুজনের হাত ছিল তাঁরা হলেন তাঁর পিতা প্রখ্যাত আয়ুবের্দিক চিকিৎসক ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু ও তাঁর কাছে হাঁপানির চিকিৎসা করাতে আসা জনৈক সাধক টিড়ি বাবা। ডা. শঙ্কু টিড়িবাবার চিকিৎসা করলেও নিজে হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। ত্রিপুরেশ্বরের শারীরিক সমস্যার কথা বুঝে জানান কালকা থেকে ছেচল্লিশ কিমি দূরে সাড়ে ছয় হাজার ফুট উঁচুতে কসৌলি শহর থেকে কিছুটা দূরে জঙ্গলের মধ্যে একভগ্ন চামুণ্ডা মন্দিরের পিছনে ঝরনার ধারে স্বর্ণপর্ণী নামে এক গাছ জন্মায়, যা সব অসুখ সারায়। টিড়িবাবার মুখে ওই গাছের কথা শুনেও ডা. শঙ্কু ওই ওষুধ প্রয়োগ করতে পারেননি, কারণ শঙ্কুকে এই ওষুধের কথা বলার কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি মারা যান।

বাবার অসুখে স্বর্ণপর্ণী ব্যবহার করতে না পারলেও শঙ্কু কসৌলির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কালকা থেকে ট্যাক্সি করে কসৌলি যেতে শঙ্কুর আড়াই দিন লাগে। সেখানে গিয়ে সস্তা হোটেলে ওঠেন। ম্যানেজার নন্দকিশোরের সাহায্যে একটা ঘোড়ার ব্যবস্থা হয়। ঘোড়ার মালিক ছোটেলালকে নিয়ে চামুণ্ডা মন্দিরের পাশ দিয়ে গভীর জঙ্গলে ঢোকেন। ঢোকার মিনিট পনেরোর মধ্যে তাঁরা ঝরনার শব্দ শুনতে পান। এই ঝরনার পাশেই তাঁরা দেখতে পান হলদে পাতায় ভরা একটা গাছড়া সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে। এই গাছটাই যে 'স্বর্ণপর্ণী' তা বুঝে নিতে শঙ্কুর অসুবিধা হয়নি।


12.  প্রোফেসর শঙ্কুর তৈরি করা মিরাকিউরলের বড়ি কীভাবে জেরেমি সন্ডার্সকে নতুন জীবনদান করেছিল লেখো। ৫

উত্তরঃ কলকাতায় থাকাকালীন বিজ্ঞান বিষয়ক সর্বশ্রেষ্ঠ পত্রিকা 'নেচারে'র লেখক জেরেমি সন্ডার্সের সঙ্গে প্রোফেসর শঙ্কুর চিঠি বিনিময়ের মাধ্যমে আলাপ হয়। ক্রমে সেই আলাপ নিয়মিত পত্রবিনিময়ের ফলে গভীর বন্ধুত্বে পরিণত হয়। জেরেমি সন্ডার্সের জন্ম ভারতবর্ষের পুণা শহরে। তাঁর ঠাকুরদা বত্রিশ বছর ইন্ডিয়ান আর্মিতে ছিলেন। সন্ডার্সের যখন সাত বছর বয়স তখন তিনি বাবা-মার সাথে ইংল্যান্ডে চলে যান। কিন্তু ভারতবর্ষ বা ভারতবাসীর প্রতি তাঁর অন্তরের স্বাভাবিক টান থেকেই যায়। প্রায় আট মাস নিয়মিত পত্রবিনিময়ের পরে হঠাৎ শঙ্কুর চিঠির আর কোনো উত্তর আসে না। প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও চিঠি আসছে না দেখে শঙ্কু যখন টেলিগ্রাম করবার কথা ভাবছেন ঠিক সেই মুহূর্তে সন্ডার্সের স্ত্রী ডরোথির ঠিঠি এসে পৌঁছোল শঙ্কুর হাতে। চিঠিতে শঙ্কু জেরেমির যকৃতে L ক্যানসার ধরা পড়ার কথা জানতে পারেন। চিঠিটি পড়বার সঙ্গে সঙ্গেই দশটা মিরাকিউরলের বড়ি শঙ্কু এয়ারমেলে পাঠিয়ে দেন ডরোথির নামে। দেড় মাস কেটে যাওয়ার পরও কোনো টেলিগ্রাম না আসায় শঙ্কুর বিশ্বাসের পারদ তলানিতে এসে ঠেকেছিল। সবে যখন তিনি মিরাকিউরলের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করেছেন, ঠিক তখন তাঁর বাড়িতে এসে হাজির হলেন স্বয়ং জেরেমি সন্ডার্স। এভাবেই মিরাকিউরলের বড়ি জেরেমি সন্ডার্সকে একেবারে নতুন জীবনদান করেছিল।


No comments:

Post a Comment